সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭:২৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ফ্যাসিবাদের পতন হলেও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়নি : নজরুল ইসলাম খান

সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন নজরুল ইসলাম খান। ছবি : কালবেলা
সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন নজরুল ইসলাম খান। ছবি : কালবেলা

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, ইতিহাস সাক্ষী, এ দেশে বারবার গণতন্ত্র হরণ হয়েছে। বারবার গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে বিএনপি, শহীদ জিয়া ও খালেদা জিয়া। জুলাই-আগস্টের আন্দোলন এ কয়দিনে হয়নি। সিরাজগঞ্জসহ দেশের জনগণ অপরিসীম ত্যাগ স্বীকার করেছেন। চাপের মুখে জীবনধারণ করতে হয়েছে। কত গুম-খুন হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় জুলাই-আগস্টের পরিবর্তন হলো।

তিনি বলেন, আমাদের দাবি ছিল, স্বৈরতন্ত্র-ফ্যাসিবাদের পতন করে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে কিন্তু গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়নি।

বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায় সিরাজগঞ্জ শহরের ইসলামিয়া সরকারি কলেজ মাঠে জেলা বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি সহনীয় পর্যায়ে রাখা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, দ্রুত গণতান্ত্রিক যাত্রাপথে উত্তরণে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা ও পতিত ফ্যাসিবাদের চক্রান্তের অপচেষ্টা মোকাবেলাসহ বিভিন্ন জনদাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, জনগণের শাসন এখনও পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়নি। যারা দায়িত্বে আছেন তারা জোর করে সেখানে বসেননি। আমরা তাদেরকে সেখানে বসিয়েছি মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য। মানুষ যাতে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারে, যাতে ন্যায্যমূল্যে দ্রব্য কিনতে পারে। আমার কৃষক যাতে তার ফসলের ন্যায্যমূল্য পায় এবং অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ যেন নিজেদের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারে।

তিনি আরও বলেন, যারা বলেন বিএনপি সংস্কার চায় না তারা মিথ্যা বলেন। খালেদা জিয়ার ভিশন-২০৩০ ঘোষণা একটি সংস্কার প্রস্তাব। তারেক রহমান ৩১ দফা রাষ্ট্র মেরামতের রূপরেখা ঘোষণা করেছেন, সেটাও সংস্কার প্রস্তাব। দাবিনামা না, এটা আমাদের প্রতিশ্রুতি। যারা নতুন নতুন দাবি করে মনে করছেন যে নতুন কিছু দাবি করছেন সেটা ভুল। উচ্চকক্ষের দাবি আমরা বহু আগেই করেছি, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার কথা অনেক আগেই বলেছি।

বিএনপির এ নেতা বলেন, যদি আমরা সমস্যাগুলোর সমস্যার সমাধান করতে না পারি, যদি না জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে না পারি, তাহলে পতিত ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসনের চেষ্টা করবে। যদি আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারি, যদি তাদের পছন্দের সরকার গঠন করতে পারি, তাহলেই পতিত স্বৈরাচারের আর কোথাও জায়গা হবে না।

নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা চাই যারা এত বছর ধরে মানুষকে খুন করেছে, অত্যাচার করেছে তাদের দ্রুত বিচার করতে হবে। তাদের রাজনীতি করার অধিকার তখনেই আসবে, যখন তাদের মধ্যে যারা শাস্তিপ্রাপ্ত তারা শাস্তি পাবে। কিন্তু তার জন্য নির্বাচন অপেক্ষা করার কিছু নাই। যেই সরকারই আসুক, সবারই একই দায়িত্ব সেটা হলো ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিচার করতে হবে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে, জনগণের সংকট সমাধান করতে হবে। সমস্ত কাজগুলো আমাদের জনগণকে সঙ্গে নিয়েই করতে হবে। সে কারণেই দরকার সকলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন। একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যা যা করা জরুরি সেটা করে নির্বাচন করতে হবে। বাকী কাজগুলো এখনো করা যাবে, যদি সম্ভব না হয় যারা আসবে তারা করবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বারবার জীবন দিয়েছে পরিবর্তনের জন্য। কিন্তু পরিবর্তন হয়নি। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে লাখো মানুষ জীবন উৎসর্গ করেছে, মা-বোনেরা সম্ভ্রম হারিয়েছেন। যে গণতন্ত্র, সাম্য ও মানবিক মর্যাদার জন্য জীবন দিয়েছিলেন আমরা সেটা দিতে পারি নাই। মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় তাদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। আইন করে দেশে একদলীয় স্বৈরশাসন কায়েম করা হয়েছিল। এরপর ৭ নভেম্বর শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তিনি যখন দায়িত্ব নেন, তখন কোথাও শৃঙ্খলা ছিল না, সেনানিবাসে পর্যন্ত অফিসারদের খুন করা হচ্ছিল, সবার কাছে অবৈধ অস্ত্র ছিল। সেই অবস্থায় জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের হাল ধরলেন।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, ১৯৭১ সালে যেমন বলেছিলেন, আমি মেজর জিয়া বলছি, মানুষ আশ্বস্ত হয়েছিল। একইভাবে ৭৫ এ বললেন আমি মেজর জেনারেল জিয়া বলছি, মানুষ আশ্বস্ত হয়েছে, দেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আমরা আবার বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরে পেয়েছি। আবার বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা পেয়েছি। শিল্প কারখানা চালু হয়েছিল, মাঠে ফসল উৎপাদন হচ্ছিল। দেশ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল তখনই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে তাকে খুন করা হলো। আবার ৯ বছর অবিরাম লড়াই করে বাংলাদেশে আবারও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করলেন বেগম খালেদা জিয়া।

জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য রুমানা মাহমুদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য সাইদুর রহমান বাচ্চুর সঞ্চালনায় সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক আমিরুল ইসলাম খান আলিম।

এ সময় সাবেক সংসদ সদস্য এম আকবর আলী, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মজিবর রহমান লেবু, আজিজুর রহমান দুলাল, নাজমুল হাসান তালুকদার রানা, ভিপি অমর কৃষ্ণ দাস, জাসাসের কেন্দ্রীয় নেত্রী কণ্ঠশিল্পী রুমানা মোর্শেদ কনক চাঁপাসহ সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ফ্যাসিবাদের দোসরদের কোথাও ঠাঁই হবে না : মজনু

আয়নাঘরে বিএনপি নেতা সাজেদুলকে কীভাবে হত্যা করা হয়, জানালেন ফারুকী

নরসিংদীতে মিল শ্রমিকের লাশ উদ্ধার

আমরা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করেই ছাড়ব : হাসনাত

ইয়াশার অভিযোগের পাল্টা জবাব দিল চিটাগাং কিংস

রংপুরে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা, প্রেস ক্লাবের প্রতিবাদ

ড. শামসুজ্জোহার মৃত্যুর দিন ‘জাতীয় শিক্ষক দিবস’ ঘোষণার দাবিতে স্মারকলিপি

সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে বিসিএস তথ্য-সাধারণ ক্যাডারের উদ্বেগ

কৌশলে মাছের ড্রামে গাঁজা পাচার, আটক ২

জাটকা পাচারকারী কালু এবার গাঁজাসহ ধরা

১০

রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তের বিষয়ে যে পরামর্শ দিল জাতিসংঘ

১১

দেশের শাসন ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে : মিজানুর রহমান

১২

অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে সবাই মন খুলে সাংবাদিকতা করবে : ফয়েজ আহম্মদ

১৩

যেসব সদস্য শান্তিরক্ষী মিশনে মনোনীত হবেন না

১৪

ইউনিয়ন পরিষদে তালা লাগানোর ঘটনায় সংঘর্ষ, আহত ১৮ 

১৫

ফেসবুকে হ্যাশট্যাগ ‘ব্যান আওয়ামী লীগ’ প্রচারণা

১৬

‘জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসীদের ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে’

১৭

ঢাকা উত্তর সিটির প্রশাসক হলেন এজাজ

১৮

হত্যা মামলায় এসপি তানভীর সালেহীন কারাগারে

১৯

র‌্যাব বিলুপ্ত করুন : জাতিসংঘ

২০
X