রংপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:৪২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

স্বাস্থ্য পরিদর্শকের বিরুদ্ধে সহকর্মীকে হয়রানি ও কুপ্রস্তাবের অভিযোগ

বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য পরিদর্শক আব্দুস সালাম। ছবি : সংগৃহীত
বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য পরিদর্শক আব্দুস সালাম। ছবি : সংগৃহীত

রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য পরিদর্শক আব্দুস সালামের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেছেন এক নারী সহকর্মী। ঘটনার পর আপস করতে নানা কাণ্ড ঘটিয়েছেন ওই কর্মকর্তা। এ ঘটনায় বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালককে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার ২৭ দিনেও নেওয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা। এ অবস্থায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন ওই নারী।

ভুক্তভোগী ওই নারী উপজেলার একটি কমিউনিটি ক্লিনিকে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। গত ৪ জানুয়ারি তিনি যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন। পরে ১৩ জানুয়ারি বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালককে লিখিত অভিযোগ দেন।

লিখিত অভিযোগে তিনি জানান, ঘটনার দিন তার কর্মস্থল ওই কমিউনিটি ক্লিনিকে যান স্বাস্থ্য পরিদর্শক আব্দুস সালাম। এ সময় ক্লিনিকে রোগী না থাকায় তাকে কুপ্রস্তাব দেন স্বাস্থ্য পরিদর্শক। এতে রাজি না হওয়ায় তিনি ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মো. হারুন-অর-রশীদ বলেন, ‘বিষয়টি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

অভিযোগকারী ওই নারী কালবেলাকে জানান, গত চার জানুয়ারি কর্মস্থল কমিউনিটি ক্লিনিকে পরিদর্শনে যান স্বাস্থ্য পরিদর্শক আব্দুস সালাম। এ সময় তার পাশের চেয়ারে গা ঘেঁষে বসে বিভিন্ন রেজিস্ট্রার ও ফাইল ঘেটে নানা ত্রুটি বের করতে থাকেন। একপর্যায়ে তিনি বারবার তার হাত ধরতে থাকেন। স্বাস্থ্য পরিদর্শক আব্দুস সালাম তখন ওই নারী সহকর্মীকে বলেন, ‘দেখো সিভিল সার্জন আমার ফ্রেন্ড আর স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আমার হাতের তলায়। তুমি আমাকে কিছু ব্যক্তিগত সময় দাও আমি সব ত্রুটি সমাধান করে দেব’।

ভুক্তভোগী ওই নারী জানান, শারীরিক অসুস্থ থাকায় সেদিন তার স্বামী তাকে নিতে গেলে তখন আব্দুস সালাম বলেন ‘ভাই তো চলে আসল। তোমাকে অনেক কিছু বলার ছিল। সামনের মাসে আসব তখন বলব।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত স্বাস্থ্য পরিদর্শক আব্দুস সালাম বলেন, ‘আমি সেদিন সরকারি দায়িত্ব পালন করেছিলাম। আমার বিরুদ্ধে কেন অভিযোগ দিয়েছেন সেটা উনি ভালো জানেন। সরকারি চাকরি করতে গেলে অনেক অভিযোগ আসে’। তবে সিভিল সার্জনকে কেন বন্ধু পরিচয় দেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিভিল সার্জন আমার বন্ধু এটা কখনও বলিনি। উনি আমার কর্তৃপক্ষ।

ওই নারীর অভিযোগ, ঘটনার পর তার আরেক সহকর্মী জামুবাড়ি কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি মশিউর রহমান তাকে বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তুলে নিয়ে যান। পরে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আশিকুল আরেফিন অভিযোগটি তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দেন। এতে ভুল স্বীকার করে, কারও প্ররোচনা এই অভিযোগ করা হয়েছে উল্লেখ করে অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেওয়া হয়। সেখানে উপস্থিত থাকা কয়েকজন সিএইচসিপিও অভিযোগ প্রত্যাহার করতে চাপ দেন।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আশিকুল আরেফিন। তিনি বলেন, ‘আমি অভিযোগ প্রত্যাহার করতে কেন বলব। উনি অভিযোগ করেছেন, তদন্তসাপেক্ষে দোষী যেই হোক তার বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবেন। আমি তাকে অভিযোগ প্রত্যাহার করতে বলিনি, এটা মিথ্যা কথা’।

স্বাস্থ্য পরিদর্শক আ. সালামের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ : ১৯৮৯ সালের ৭ মার্চ তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ যোগদান করে টানা ৩২ বছর কর্মরত ছিলেন এই হাসপাতালে। নারী সহকর্মীদের যৌন হয়রানি, মাঠকর্মীদের সম্মানী ভাতা আত্মসাৎ, স্টাফদের হয়রানি, ঘুষ গ্রহণ, কোভিড টিকা ক্যাম্পেইনে গুজব রটানো এবং বিভিন্ন ট্রেনিংয়ের অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে।

গত ২০২১ সালের ২৪ আগস্ট তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কাছে একজন ভুক্তভোগী নারী স্বাস্থ্যকর্মী লিখিত অভিযোগ করেন।

অভিযোগে তিনি জানান, ৫ দিনের এমএইচভি ট্রেইনিং শেষ করে কর্মস্থলে যোগদান করার সময় স্বাস্থ্য পরিদর্শক আব্দুস সালাম মোবাইল ফোনে ওই নারীকে হাসপাতালে ডেকে আনেন। সালাম ওই নারীকে ন্যাশনাল সার্ভিসে চাকরি করার অভিযোগ তুলে ২০ হাজার টাকা ঘুষ চান। পরে তাকে আবারও ডেকে নিয়ে কুপ্রস্তাব দেন এবং একইসঙ্গে গায়ে হাত দেন। পরে ওই নারী সেখান থেকে পালিয়ে যান।

পরে ঘুষের টাকা না দেওয়ায় তাসলিমা বেগম নামে একজন এমএইচভিকে সরিয়ে অন্য একজনকে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ ওঠে স্বাস্থ্য পরিদর্শক আব্দুস সালামের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় তিনি সিভিল সার্জনের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।

এ ছাড়া রংপুর সদর উপজেলায় স্বাস্থ্য পরিদর্শক (ইনচার্জ) পদে কর্মরত থাকাকালীন সময়ে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ৭ জন স্বাস্থ্য পরিদর্শক তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনেন। সহকর্মীদেরকে গালাগাল, হয়রানি ও সিএইচসিপিদের নানাভাবে ব্ল্যাকমেইল করার অভিযোগ এনে তারা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে লিখিত অভিযোগ দেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বরিশালে সাইবার আইনের ৫৯টি মামলা প্রত্যাহার

ফুচকা খেতে না যাওয়ায় নববধূর অভিমান, অতঃপর...

ইউনূস-মোদি বৈঠকের সম্ভাবনা, সম্পর্কোন্নয়ন কোন পথে?

ফ্রান্সে মামলা করলেন পিনাকী ভট্টাচার্য

রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের নিয়ে হাসনাত আব্দুল্লাহর স্ট্যাটাস

নিজেকে নিয়ে সুখী থাকার দিন আজ

ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল অনির্দিষ্টকালের জন্য বর্জনের ঘোষণা আইনজীবীদের

ফরিদগঞ্জ লেখক ফোরামের সভাপতি ফরিদ, সম্পাদক তারেক

১ লাখ ২০ হাজারে বিক্রি শাপলাপাতা মাছ

সাতক্ষীরায় নতুন করে বিএনপি করতে গেলে পরীক্ষা দিতে হবে : পলাশ

১০

বাংলাদেশ-ভিয়েতনাম সরাসরি ফ্লাইট চালুর আলোচনা

১১

অক্টোবরের মধ্যে জুলাই হত্যা মামলার রায় : আসিফ নজরুল

১২

পেঁয়াজ ক্ষেতে মিলল যুবলীগ নেতার লাশ

১৩

যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

১৪

নতুন চমক নিয়ে আসছেন বর্ষা-মুন্না

১৫

স্ত্রীসহ কারাগারে সাবেক এমপি চয়ন

১৬

আ.লীগ নেতার উসকানিতে দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষ

১৭

ভিন্নরূপে পহেলা বৈশাখ উদযাপনের ঘোষণা ইনকিলাব মঞ্চের

১৮

এবার যুক্তরাজ্যেও অবৈধ ভারতীয়দের ধরতে অভিযান শুরু

১৯

সিএনজিতে অতিরিক্ত ভাড়া নিলেই ৬ মাসের জেল, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

২০
X