নারায়ণগঞ্জের বন্দরে বিয়ে বাড়ির আদলে প্যান্ডেল সাজিয়ে বিরিয়ানি বিক্রি করছেন আসলাম মিয়া। গরুর মাংসের বিরিয়ানির অতুলনীয় স্বাদের কারণে সব সময় ‘আসলাম বিরানি হাউজ’ রেস্তোরাঁয় ভিড় থাকে। এ কারণে ক্রেতাদের বাড়তি চাপ সামলাতে রেস্তোরাঁর পাশে সামিয়ানা ও প্যান্ডেল সাজিয়ে চেয়ার-টেবিলে বিরিয়ানি পরিবেশন করা হচ্ছে, যা দেখে রীতিমতো বিয়ে বাড়ির খাবারের মতো মনে হবে।
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বন্দর উপজেলার বুরুন্দি এলাকায় আসলাম মিয়া বিরিয়ানির দোকান ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ‘বিয়ে বাড়ির মতো করে সামিয়ানা ও প্যান্ডেল’ সাজিয়ে বিরিয়ানি পরিবেশন করা হচ্ছে। দূর-দূরান্ত থেকে দলবেঁধে মানুষজন এসে চেয়ার-টেবিলে বসে বিরিয়ানি খাচ্ছে। প্যান্ডেলের পাশে চুলোয় ডেগ বসিয়ে একের পর এক বিরিয়ানি রান্না হচ্ছে। এর পাশেই ‘আসলাম বিরানি হাউজ’ নামের দোকানে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। মূলত সেখান থেকে ফুল প্লেট বিরিয়ানি ৩০০ টাকা, হাফ প্লেট বিরিয়ানি ২০০ টাকা এবং কোয়ার্টার প্লেট বিরিয়ানি ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর সঙ্গে সালাদ দেওয়া হচ্ছে। দূর-দূরান্ত থেকে বিরিয়ানি খেতে আসা লোকজন বেশ আয়েশ করে প্যান্ডেলে বসে বিরিয়ানি খাচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগ থেকে বিরিয়ানি খেতে এসেছেন সেলিম আহমেদ ডালিম। তিনি বলেন, ‘গ্রামীণ পরিবেশে ও বিয়ে বাড়ির মতো প্যান্ডেল সাজিয়ে বুরুন্দির বিরিয়ানি পরিবেশন করা হচ্ছে। যে কেউ এ আয়োজন দেখলে মনে করবে বিয়ে বাড়ির খাবারের আয়োজন। সে কারণে এটা বেশ আনকমন মনে হয়েছে। এ ছাড়া খাবারটি স্বাদে বেশ অতুলনীয় ও সুস্বাদু। এতে চারদিকে বেশ সাড়া পড়েছে। অনেক লোক দূর-দূরান্ত থেকে এখানে বিরিয়ানি খেতে আসে।’
শহরের সৈয়দপুর এলাকা থেকে বিরিয়ানি খেতে এসেছেন জিহাদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘বিরিয়ানির খাবারের স্বাদ অনেক ভালো। প্রতি প্লেটে ১৫-১৬টি মাংসের টুকরো দেওয়া হয়। খাবারের পরিমাণও অনেকে বেশি। এক প্লেট খাবার খেলে একজন ব্যক্তির পেট ভরে যাবে।’
প্যান্ডেলের ভেতরে চেয়ার ফাঁকা না পেয়ে পাশের একটি অটোরিকশাতে বসে বিরিয়ানি খাচ্ছেন ইয়াজ আহমেদ। তিনি বলেন, ‘২০০ টাকার মধ্যে খুব ভালো বিরিয়ানি খেতে পারছি। তাছাড়া স্বাদের দিক থেকে খুব ভালো হয়েছে। সে কারণে সুদূর মেঘনা থেকে এই বন্দরে বিরিয়ানি খেতে এসেছি। তবে বিরিয়ানির দোকান ও পাশের প্যান্ডেলে বসার সুযোগ না পেয়ে অটোরিকশাতে বসে বিরিয়ানি খাচ্ছি।’
বিরিয়ানি তৈরির বাবুর্চি মো. সামসুদ্দিন বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানের মালিক ও প্রধান বাবুর্চি আসলাম ভাইয়ের হাতে ‘জোস’ রয়েছে। তার হাতে তৈরি খাবার বেশ সুস্বাদু হয়। আর বিরিয়ানি তৈরিতে স্বাভাবিক সব মসলা ব্যবহার করা হয়। এখানে ব্যতিক্রম কিছু নেই। সকাল ৬টা থেকে রান্নার কাজ শুরু হয়ে বিকেল পর্যন্ত কাজ চলে।’
আসলাম বিরানি হাউজের মালিক ও বাবুর্চি আসলাম মিয়া বলেন, আমার দোকানে খাবারের স্বাদ ও মান ভালো হওয়ায় সব সময় ক্রেতাদের ভিড় থাকে। ক্রেতাদের চাপ বেশি থাকায় দোকানের পাশে সামিয়ানা ও প্যান্ডেল টানিয়ে চেয়ার-টেবিলে খাবার পরিবেশন করা হয়। কেউ সরাসরি এসে বসে খায়, আবার কেউ পার্সেল নিয়ে যায়।
তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন ৫-৭ ডেগ বিরিয়ানি রান্না করে বিক্রি করা হয়। ছোট ডেগের মধ্যে ৩৫ কেজি গরুর মাংস ও ২২ কেজি বিরিয়ানির চাল এবং বড় ডেগে ৪০ কেজি গরুর মাংস ও ২৩ কেজি চাল দিয়ে রান্না করা হয়। প্রতিদিন ৪-৫ মণ গরুর মাংসের প্রয়োজন হয়। তিন বাবুর্চি ও ৯ জন স্টাফ প্রতিদিন সকাল ৬টায় গরুর মাংস কাটা থেকে শুরু করে বিরিয়ানি রান্নার সব কার্যক্রম ক্রেতাদের সামনে সম্পন্ন করে। মানসম্মত সব উপদান দিয়ে সুস্বাদু বিরিয়ানি তৈরি করা হয়। যে কারণে ক্রেতাদের ভিড় বেশি থাকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিদিন গড়ে এক লাখ ৬০ হাজার থেকে এক লাখ ৯০ হাজার টাকার বিরিয়ানি বেচা-বিক্রি হয়। ১৯৯৮ সাল থেকে বিরিয়ানির ব্যবসা শুরু করেছি। ওই সময় মাত্র তিন কেজি চালের বিরিয়ানি প্রতিদিন বিক্রি করা হতো। আর এখন সেই পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে। সীমিত লাভে বিরিয়ানি বিক্রি করায় ক্রেতাদের ভিড় সব সময় থাকে।’
জানা গেছে, ‘আসলাম বিরানি হাউজ’ দোকানের পাশের সামিয়ানা ও প্যান্ডেল সাজানো জায়গাটি প্রতি মাসে ১৫০০ টাকা ভাড়া দিতে হয়। এ ছাড়া পাশের গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য ২ হাজার টাকা ভাড়া দেওয়া হয়।
মন্তব্য করুন