সিরাজগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি বিলুপ্তির দাবিতে ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলগামী মহাসড়ক ও রেলসড়ক বন্ধ করে বিক্ষোভ করছেন পদবঞ্চিত শিক্ষার্থীরা। রাত ১২টার মধ্যে ওই কমিটি বাতিল না করলে কাল থেকে ২৪ ঘণ্টা উত্তরবঙ্গের দ্বারপ্রান্ত বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টা থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম গোলচত্বর এলাকায় সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেন। সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তারা সড়ক ও রেলপথ বন্ধ করে বিক্ষোভ করছেন। এদিকে সড়ক ও রেলপথ বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন উত্তরাঞ্চলের যাত্রীরা।
বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার ওসি মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বিকেল ৪টা থেকে শিক্ষার্থীরা রাস্তা ব্লক করে বিক্ষোভ শুরু করে। মাঝখানে আধা ঘণ্টার জন্য ছেড়ে দিয়ে আবারও অবরোধ করেছে। এতে মহাসড়কের দুই প্রান্তে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
অপরদিকে সিরাজগঞ্জ রেলওয়ে পুলিশের ওসি মো. দুলাল হোসেন বলেন, সাড়ে ৫টা থেকে যমুনা সেতু পশ্চিম রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় রেলপথ বন্ধ করে দেন শিক্ষার্থীরা। ঢাকাগামী কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ও ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেন আটকে দেওয়া হয়। প্রায় পৌনে ২ ঘণ্টা পর সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে ট্রেন দুটি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী রাদিতা ভূইয়া বলেন, এ দুর্ভোগের দায় কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মাহিন সরকারকে নিতে হবে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিরাজগঞ্জ জেলা কমিটি দেওয়া হলে পরেরদিন আমরা ৫০ জনেরও বেশি পদত্যাগ করেছি। তখন আলটিমেটাম দিয়েছিলাম ৬ ঘণ্টার মধ্যে কমিটি বাতিল না করলে সেতুতে এসে অবরোধ করা হবে। রোববার আমরা সেতুতে এসে ৯ মিনিটের মধ্যে সেতু ছেড়ে চলে গেছি। আমরা বলেছিলাম- আজ সোমবার সকাল ১০টার মধ্যে ভুয়া কমিটি বাতিল না করলে আমরা বিকেল ৪টা থেকে সেতুতে আসব। কিন্তু আমাদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেনি।
তিনি আরও বলেন, আমরা মনে করছি, তারা ভুয়া কমিটির পক্ষে। এটা একটা পকেট কমিটি। যাদের নিয়ে কমিটি করা হয়েছে তাদের অর্ধেকই ছাত্রলীগ। আন্দোলন করে আমার যেসব ভাই-বোন আহত হয়েছে তাদের নামও কমিটিতে নেই।
ইমরান হাসান নামে একজন বলেন, আমরা যৌক্তিক একটা আন্দোলন করছি। এ কমিটি অনতিবিলম্বে বিলুপ্ত করতে হবে। আর সিরাজগঞ্জ তথা উত্তরবঙ্গে উপদেষ্টা দিতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য উপকমিটির সদস্য মেহেদী হাসান মুনতাসির বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যারা যুক্ত ছিল তারা বৈষম্যমূলক কোনো কমিটি চায় না। আমাদের আলটিমেটাম ছিল ৬ ঘণ্টা। কিন্তু কমিটি বিলুপ্তি করেনি, আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের প্রয়োজনও মনে করেনি। আজ রাত ১২টার মধ্যে বৈষম্যমূলক কমিটি যদি প্রত্যাহার না করে তাহলে কাল থেকে ২৪ ঘণ্টার জন্য উত্তরবঙ্গের দ্বারপ্রান্ত বন্ধ করতে প্রস্তুত থাকব।
প্রসঙ্গত, শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সদস্য সচিব আরিফ সোহেলের স্বাক্ষর করা পত্রে ২৮৪ সদস্যবিশিষ্ট সিরাজগঞ্জ জেলা কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে সজীব সরকারকে আহ্বায়ক, মেহেদী হাসানকে সদস্য সচিব, ইকবাল হোসেন রিপনকে মুখ্য সংগঠক ও টিএম মুশফিক সাদকে মুখপাত্র করা হয়। কমিটি ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই পক্ষে-বিপক্ষে কর্মসূচি চলছে।
মন্তব্য করুন