চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (সিইপিজেড) পোশাক কারখানা বন্ধের ঘোষণার প্রতিবাদে বিক্ষোভের সময় শ্রমিকদের দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। মূলত পোশাক কারখানা বন্ধ ঘোষণার প্রতিবাদে বিক্ষোভে অংশ নিতে গিয়ে দুগ্রুপে ভাগ হয় শ্রমিকরা। একপক্ষ কারখানা বন্ধ করার প্রতিবাদ জানায়, অন্যপক্ষ তাতে বাধা দেয়। বাধাদানকারীদের দাবি, আন্দোলনকারীরা কারখানাগুলোতে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছে।
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকালে সিইপিজেডের ভেতরে এ ঘটনা ঘটে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোববার খাদ্য ও চিকিৎসা ভাতা বাড়ানোর দাবিতে বিক্ষোভ করেছিলেন প্যাসিফিক ক্যাজুয়েলস লিমিটেডের শ্রমিকরা। এরপর এক বিজ্ঞপ্তিতে আজ সোমবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ওই কারখানার দুটি ইউনিট বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। তারা কারখানার সামনে বিক্ষোভ করেন। এ সময় এনএইচটি ফ্যাশন লিমিটেডের শ্রমিকদের সঙ্গে তাদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। সেখানে দুপক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।
প্যাসিফিক ক্যাজুয়েলসের শ্রমিকদের দাবি, তারা কারখানায় প্রবেশ করতে চেয়েছিলেন। এ সময় এনএইচটি ফ্যাশন লিমিটেডের শ্রমিকরা তাদের বাধা দেন। এতে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। আমাদের চাওয়া, মালিকপক্ষ সব দাবি বিবেচনা করুক।
এনএইচটি ফ্যাশন লিমিটেডের শ্রমিকরা বলেন, ইপিজেড এলাকায় প্যাসিফিক গ্রুপের কারখানাগুলোতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে বাধা দেওয়ায় এনএইচটি ফ্যাশনের শ্রমিকদের ওপর হামলার চেষ্টা করা হয়েছে। মালিকপক্ষ গত মাসে অনেক দাবি-দাওয়া মেনে নিয়েছে। আপত্তি থাকলে গত মাসেই মীমাংসার প্রয়োজন ছিল। প্রতি মাসে আন্দোলন করলে মালিকপক্ষ তো ক্ষুব্ধ হবেই।
প্যাসিফিক ক্যাজুয়েলস লিমিটেড প্যাসিফিক নিট ডিভিশনের আওতাধীন। অন্যদিকে এনএইচটি ফ্যাশন লিমিটেড প্যাসিফিক জিন্স গ্রুপের আওতাধীন। দুটি প্রতিষ্ঠানেরই প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত ব্যবসায়ী মো. নাছির উদ্দিন। বর্তমানে প্যাসিফিক জিন্সের দায়িত্বে আছেন তার এক ছেলে সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর। অন্যদিকে প্যাসিফিক ক্যাজুয়েলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাছির উদ্দিনের আরেক ছেলে সৈয়দ মোহাম্মদ তাহমীর।
শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোববার খাদ্য ভাতা, চিকিৎসা ভাতাসহ বিভিন্ন বাড়তি সুবিধার দাবিতে বিক্ষোভ করেন প্যাসিফিক ক্যাজুয়েলসের শ্রমিকরা। একপর্যায়ে সেখানে কয়েকজন কর্মকর্তা এসে তাদের আশ্বস্ত করেন। তবে শ্রমিকরা এ সময় তাদের ওপর চড়াও হন। এরপর রাতে কারখানার মানবসম্পদ ও প্রশাসন বিভাগের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপকের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে মালিকপক্ষ। নোটিশে ওই ব্যবস্থাপকের নাম উল্লেখ করা হয়নি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শ্রমিক কর্তৃক কারখানায় অবৈধভাবে কাজ বন্ধ রাখা এবং অন্যায় দাবি-দাওয়া উত্থাপন করার কারণে ইপিজেড শ্রম আইন ২০১৯ ধারা ১২(১) অনুযায়ী ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। পরবর্তী সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত কারখানার সব কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
প্যাসিফিক ক্যাজুয়েলস ইউনিট-২ এর কাটিং সেকশনের শ্রমিক ফরহাদ কবির বলেন, আমরা কাটিং সেকশন থেকে আমাদের বাড়তি ডিউটির জন্য ওভারটাইম দেওয়ার দাবি জানিয়েছি। আমরা চাই মালিকপক্ষ রাগের মাথায় পুরো কারখানা বন্ধ না করে আমাদের দাবিগুলো ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করুক।
কোয়ালিটি সেকশনের শ্রমিক সোবাহান বলেন, মালিকপক্ষ গত মাসে যা বাড়ানোর তা বাড়িয়েছে। তখন যাদের আপত্তি ছিল, তারা সেটি মীমাংসা করেনি কেন। প্রতি মাসে আন্দোলন করলে কোনো মালিকই তা মেনে নেবে না। তাই অন্য কারখানা স্টাফরা তাদের গণ্ডগোল করার সুযোগ দেয়নি।
এ প্রসঙ্গে জানতে প্যাসিফিক ক্যাজুয়েলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তাহমীরের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
সিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক আবদুস সোবহান বলেন, আমরা মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা দুই-তিন দিন পর কারখানা চালু করবেন।
শিল্প পুলিশের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পুলিশ সুপার মো. সুলাইমান বলেন, প্যাসিফিক গ্রুপের অনেক প্রতিষ্ঠান আছে। সমস্যা হয়েছে একটিতে। তারা অন্য প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের উসকানি দিয়ে তাদের সঙ্গে আন্দোলনে নামতে বলেছিল। কিন্তু অন্য কারখানার শ্রমিকরা তাদের সঙ্গে বিক্ষোভে যোগ না দেওয়ার জেরে এ ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাস্থলে আমাদের টিম রয়েছে। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক।
মন্তব্য করুন