ধার-দেনা করে আলু চাষ করে কৃষকরা চলতি মৌসুমে আলু বিক্রি করে পথে বসছে। লোকসানের মুখে পড়ে তাদের চাপা কান্না থামাতে পারছে না কেউ। জেলার হাজার হাজার আলু চাষিদের এবার পথে বসার উপক্রম। লাভ তো দূরের কথা আলু বীজ, রাসায়নিক সার, কীটনাশক ওষুধ, শ্রমিকের মজুরিসহ বিঘাপ্রতি আলু উৎপাদনের যে খরচ হয়েছে সেই খরচের টাকা তুলতেই পারছেন না আলু চাষিরা।
জয়পুরহাটের আলু বিদেশে রপ্তানি হলেও আলু চাষিদের কোনো লাভ নেই। স্থানীয় বাজার দরে রপ্তানিকারকরা কম দামে জমি থেকে আলু কিনে তা বাছাই করে ১০ কেজির ব্যাগে ভরে বিদেশে পাঠাচ্ছে। যে আলু জমি থেকে আরও ১০-১৫ দিন আগে তোলা হতো। বাজারে আলুর দাম বেশি পাওয়ার আশায় জমিতে রেখেছিলেন আলু চাষিরা। কিন্তু জেলায় বোরো মৌসুম পুরোদমে শুরু হওয়ায় আলু তুলে জমি চাষ করে বোরো ধানের চারা লাগাতে হবে। এ জন্য জমিতে আলু রাখা যাচ্ছে না। এখন পানির দামে আলু বিক্রি করতে হচ্ছে কৃষককে। জেলার বিভিন্ন হাট বাজারে আলুর জাত ও আকার ভেদে আলু বিক্রি হচ্ছে প্রতি মন (৪০) কেজি ২৫০-৩৫০ টাকা দরে।
জেলার পাচবিবি উপজেলার বেড়াখাই গ্রামের কৃষক মো. নিঝুম মিয়া জানান, তিনি এবার ৩২ বিঘা জমিতে আলু আবাদ করেছেন। বেশি দামে বীজ সার, কীটনাশক কিনে সেচ, মজুরি দিয়ে ৩২ বিঘায় খরচ হয়েছে প্রায় ১২-১৩ লাখ টাকা। বর্তমান বাজার দরে আলু বিক্রি করলে তার ৪-৫ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হবে বলে মনে করছেন তিনি।
কালাই উপজেলার পাচশিরা গ্রামের কৃষক আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, এবার আলু নিয়ে বিপাকে কৃষক। জেলার আলু বিদেশে যাওয়ায় কৃষকের কি লাভ। বিদেশে যাওয়া আলুরও যে দাম, না যাওয়া আলুরও সেই দাম। জয়পুরহাট থেকে আলু কিনে সাতটি দেশে রপ্তানি করেন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বাহারুন ক্রপ কেয়ার।
এ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি গোলাম রব্বানী বলেন, তারা কৃষকের কাছ থেকে সাইসাইন ও গ্যানোলা জাতের আলু বর্তমান বাজারমূল্যে কিনে তা বাছাই করে ১০ কেজির ব্যাগে ভরে ঢাকা পাঠান। সেখান থেকে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, বাহরাইন, কুয়েত, কাতার, দুবাই পাঠান। জয়পুরহাটের আলু বিদেশে গেলেও আর্থিকভাবে উপকারে আসছে না কৃষকের।
ক্ষেতলাল উপজেলার সূর্যবান গ্রামের কৃষক অনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আরও ১৫ দিন আগে জমি থেকে আলু তোলা হতো। মনে করলাম আরও দাম বাড়বে। এখন দাম ২৫০-৩৫০ টাকা মন। এখন জমিতে বোরোর চারা লাগানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি। গত মৌসুমে ৭ টাকা কেজি ভাড়া দামে হিমাগারে আলু রেখেছিলাম। এবার কেজি প্রতি ৮ টাকা দামে আলু রাখতে হবে । কৃষকের আলুতে সর্বনাশ। তাদের চাপা কান্না দেখার কেও নেই। বিঘায় ৩৫-৪০ হাজার টাকা উৎপাদন খরচ হয়েছে কৃষকের।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় চলতি মৌসুমে ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ ছিল। সেখানে অতিরিক্ত ৩ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে বেশি চাষ করা হয়েছে। এ পরিমাণ জমিতে থেকে ৯ লাখ ৫৬ হাজার টন আলু উৎপাদন হবে।
জয়পুরহাট জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা রতন কুমার রায় জানান, জেলায় এবার চাহিদার চেয়ে বেশি আলু উৎপাদন হয়েছে। জেলায় যে পরিমাণ আলু উৎপাদন হয়, তার তুলনায় আলু সংরক্ষণে হিমাগার অপ্রতুল। জেলা ১৭ টি হিমাগারে প্রায় ২ লাখ টন আলু রাখার ব্যবস্থা আছে। সংরক্ষণ না করতে পারায় কৃষককে মৌসুমে কম দামে আলু বিক্রি করতে হয়। প্রাকৃতিক উপায়ে মাচং পদ্ধতিতে আলু রাখার ব্যবস্থা চলমান রয়েছে। তাতে কৃষক ৩০-৩৫ টন আলু ৩ মাস সময় ধরে সংরক্ষণ করতে পারবে।
মন্তব্য করুন