আশুলিয়ার জামগড়া এলাকার একটি পোশাক কারখানার ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় দুজন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ৫ জন আহত হয়।
রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৩টার দিকে আশুলিয়ার জামগড়া চৌরাস্তা-সংলগ্ন ব্রুকহিল মার্কেটের সামনে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া ও গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দুটি গুলির খোসা উদ্ধার করে আশুলিয়া থানা পুলিশ।
পুলিশ জানায়, শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার এস সুহি কারখানার ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নিতে স্থানীয় রনি ভূইয়া ও শরীফ চৌধুরীর লোকজনের সঙ্গে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, কারখানাটি থেকে রনি ভূইয়ার লোকজন ঝুট বের করতে গেলে তাতে বাধা দেয় শরীফ চৌধুরীর লোকজন। এ সময় বেঁধে যায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা। কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দও শুনতে পায় স্থানীয়রা। এ সময় দুজন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত পাঁচজন আহত হয়। তারা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিরা হলেন হবিগঞ্জ সদর থানা এলাকার মো. ডালিমের ছেলে কাপ্তান (১৬) এবং টাঙ্গাইল সদর থানার পিটনা গ্রামের বাচ্চু মিয়ার ছেলে মঞ্জু মিয়া (১৮)। তারা আশুলিয়ার জামগড়া এলাকার পৃথক দুটি বাড়িতে ভাড়া বাসায় থেকে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এ ছাড়া মাথায় ইটের আঘাতে আহত হয়েছেন নড়াইলের লোহাগোড়া উপজেলার লোহাগড়া গ্রামের নুর মাহাম্মদ শেখের ছেলে শেখ আবু জাফর। অন্যদের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বিকালে আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় প্রীতি গ্রুপের এস সুহি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক থেকে তাতী দল নেতা বকুল ভুইয়ার লোকজন ঝুটের গাড়ি নিয়ে বের হয়। কিছুক্ষণ পরেই শরীফ চৌধুরী নামের এক ব্যক্তির লোকজন ঝুট ও এর ব্যবসা দখলে নিতে হামলা করে। হামলার সময় দুপক্ষের লোকজনের মধ্যেই চলে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া।
তারা আরও বলেন, শরীফ চৌধুরীর লোকদের প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দিতে দেখা যায়। ছয় রাউন্ড গুলির শব্দ শুনতে পান বলেও জানান তারা। ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে নিতে শরীফ চৌধুরীর সক্রিয় কর্মী-সমর্থকরা গুলি ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় শরীফ চৌধুরীর ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী বাপ্পি, ঘার কাটা জুয়েল, তানভীর, রিপন, রুহুল ইসলাম মুন্সি ও মাইনুদ্দিন লিটনের নেতৃত্বে শতাধিক কিশোর গ্যাং সদস্য হাতে পিস্তল, হকিস্টিক, রড, ছেনি নিয়ে প্রতিপক্ষের ওপর হামলা চালায়।
এ ব্যাপারে বকুল ভূইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ওই কারখানা থেকে ঝুট ব্যবসা করার জন্য তার বৈধ চুক্তি রয়েছে। তা সত্ত্বেও তার মালামাল লুট করার চেষ্টা করে শরীফ চৌধুরী। যেদিক দিয়ে মালভর্তি ট্রাক যায়, সেখানেই তার (শরীফ চৌধুরীর) বাড়ি। তারা ছাদ থেকে গুলি করেছে এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে শ্রমিকসহ কর্মচারীরা আহত হয়েছেন। ১০ লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছিলে শরিফ, না দেওয়ায় আমাদের ওপর এমন ন্যক্কারজনক হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আশুলিয়া থানা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি শরীফ চৌধুরী। তার দাবি তারা নিজেরা দ্বন্দ্বে জড়িয়ে ঘটনাটি ঘটিয়েছে।
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুর আলম সিদ্দীক বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ। প্রাথমিকভাবে জানা যায়, স্থানীয় বকুল ভূইয়া ও শরীফ চৌধুরীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে এই সংঘর্ষ ঘটেছে। বিষয়টি তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিনুর কবীর বলেন, যতদূর জানতে পেরেছি আজ রনি ভুইয়ারা ঝুট নিয়ে যাওয়ার সময় শরীফ চৌধুরীর লোকজনের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও গুলির ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করে আইনি ব্যবস্থার প্রক্রিয়া চলছে।
মন্তব্য করুন