শেরপুরে সাতশ গ্রাহকের শতকোটি টাকা আত্মসাৎ করে আত্মগোপনে থাকার দীর্ঘদিন পর অবশেষে গ্রেপ্তার হন এক ব্যবসায়ীর দুই ছেলে। এতে গ্রাহকরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন।
রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) ভোরে তাদের ঢাকার উত্তরা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
শেরপুর পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
গ্রেপ্তার দুই ভাইয়ের নাম- কামরুজ্জামান সুজন ও কামরুল হাসান। তারা দুজন শেরপুরের ব্যবসায়ী আবুল হাসেমের ছেলে।
কামরুজ্জামান সুজনের বিরুদ্ধে শেরপুর সিআর আমলি আদালতের সাজাপ্রাপ্ত ৭০টি মামলার পরোয়ানা এবং সিআর সাধারণ ওয়ারেন্টভুক্ত ১৫টিসহ সর্বমোট ৮৫টি মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে।
অপর ভাই কামরুল হাসানের বিরুদ্ধে শেরপুর জেলা সিআর আমলি আদালতে ৪টি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। দুই ভাইয়ের মোট গ্রেপ্তারি পরোয়ানার সংখ্যা ৮৯টি।
স্থানীয় ও গ্রাহকদের সূত্রে জানা যায়, বাবর অ্যান্ড কোং (প্রা.) লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম আবুল হাসেম অগ্রিম ইট বিক্রি করে এবং ধান ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বাকিতে ধান কিনে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন। তার মোট ৩৬ একর জমির ওপর স্থাপিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দুটি অটো ব্রিকফিল্ড, তিনটি ফিলিং স্টেশন, একটি অটো রাইস মিল, পোলট্রি ফার্মসহ আরও একাধিক প্রতিষ্ঠান এবং জেলা হাসপাতাল রোডের কাছে প্রায় দেড় একর মূল্যবান জমির ওপর একটি তিনতলা বাড়ি রয়েছে।
কিন্তু ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে আবুল হাসেমের মৃত্যুর পর তার জ্যেষ্ঠ পুত্র কামরুজ্জামান সুজন তার বাবার রেখে যাওয়া সব ঋণ পরিশোধ করবেন এবং ব্যবসা নিয়মিত পরিচালনা করে যাবেন বলে গ্রাহকদের সঙ্গে অঙ্গীকার করেন। এতে আশান্বিত হয়ে অনেকে ফের অগ্রিম ইট ক্রয় ও বাকিতে ধান বিক্রয় শুরু করেন।
পরে কামরুজ্জামান সুজন, তার মা পরিচালক কামরুন্নাহার, ছোট ভাই পরিচালক কামরুল হাসান শাহীন পরস্পর যোগসাজশে অগ্রিম ইট বিক্রির ৪৫ কোটি টাকা ও চাল বিক্রির ৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে নিজেদের কাছে রাখেন। ইটভাটা চালু না করায় পাওনাদাররা টাকা চাইতে এলে নানা অজুহাতে কালক্ষেপণ করতে থাকেন। এক পর্যায়ে ২০২০ সালের ৫ ডিসেম্বর রাতের অন্ধকারে তারা ঢাকায় পালিয়ে যান। পরবর্তী সময়ে তারা তাদের ফোন নম্বর পরিবর্তন করেন এবং পাওনাদারদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।
এদিকে পাওনা টাকা না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েন ৭ শতাধিক পাওনাদার। তারা অনেকেই জমিজমা বিক্রি করে, কেউবা তাদের পেনশনের টাকা বাবর অ্যান্ড কোংয়ে রেখেছিলেন। পাওনা টাকা না পাওয়ায় আর্থিক অনটনে অনেক পরিবার। এতে অনেক পাওনাদারই তাদের টাকা না পেয়ে আদালতে মামলা করেন। তাদের বিরুদ্ধে করা শতাধিক মামলার অনেকগুলোর বিচার এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। কিছু মামলা চলমান আছে। কিন্তু তারা কৌশলে পালিয়ে থাকায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।
পুলিশ জানায়, এতগুলো মামলা থাকার পরও তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তী সময়ে শেরপুর সদর থানার এসআই মো. নজরুল ইসলাম, এসআই আশিকুর রহমান, এএসআই মো. শফিকুল ইসলামকে দায়িত্ব দেন পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম। পরে ফেব্রুয়ারি মাসের ২-৯ তারিখ পর্যন্ত ঢাকা জেলার উত্তরা পশ্চিম, উত্তরা পূর্ব, আশুলিয়া থানা এলাকায় তাদের ধরতে বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করা হয়। অবশেষে রোববার ভোরে ঢাকার তুরাগ থানার রাজউক উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পের ১৮ নম্বর সেক্টর থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
এ ব্যাপারে শেরপুর পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ভুক্তভোগী প্রায় সাতশ। তাদের প্রতিনিধি আমার সঙ্গে দেখা করে এবং ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত বলেন। মূলত ইটের ভাটায় বিনিয়োগের প্রায় ১শ কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে যান সুজন ও কামরুল। এই বিনিয়োগে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ছিলেন। এরপর আমি আমলে নিয়ে কাজ শুরু করি। দীর্ঘ পাঁচ মাস পর তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে তাদের শনাক্ত করি এবং গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় পুলিশ।
মন্তব্য করুন