চট্টগ্রামে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শেষ হয়েছে ৩ ফেব্রুয়ারি। এখন চলছে রেজিস্ট্রেশনের কার্যক্রম। এরপর শুরু হবে ফিঙ্গারপ্রিন্টসহ অন্যান্য কার্যক্রম। গত ২০ জানুয়ারি থেকে ভোটার তালিকা হালনাগাদ শুরু হয়েছিল। প্রতিটি বাসাবাড়িতে গিয়ে তথ্য সংগ্রহের কথা থাকলেও দায়সারাভাবে দায়িত্বপ্রাপ্তরা তাদের কার্যক্রম শেষ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাননি বলে জানিয়েছেন জেলা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান তিনি।
অভিযোগ উঠেছে, ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে প্রতিটি বাসাবাড়িতে গিয়ে তথ্য সংগ্রহের কথা থাকলেও কোথাও মাইকিং করে আবার কোথাও দেয়ালে যোগাযোগের নম্বর লিখে কাজ শেষ করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। এ অবস্থায় অনেকের কাছে ভোটার তালিকা হালনাগাদের খবরও অজানা। বাসাবাড়িতে অনেকে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে দায়িত্বপ্রাপ্তদের অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু তার দেখাও মেলেনি।
ডবলমুরিং থানার বাসিন্দা কলেজ শিক্ষার্থী হাসিব উদ্দিন বলেন, বাসাবাড়িতে এসে ভোটারের তথ্য সংগ্রহের কথা থাকলেও কেউ আসেননি। সময়ও শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু ভোটার হতে পারিনি। সবশেষ ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিসে যোগাযোগ করতে হয়েছে।
মুহুরীপাড়ার বাসিন্দা স্নিগ্ধা রহমান বলেন, বাসাবাড়িতে এসে ভোটারের তথ্য সংগ্রহ করলে ভালো হতো। আমরাও অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু অপেক্ষার প্রহর শেষ হলেও আসেননি কেউ।
নগরীর বায়েজিদ, অক্সিজেন, বাকলিয়া, নন্দনকানন, হালিশহর, পাহাড়তলী, ডবলমুরিং এলাকার অনেক বাড়িতে তথ্য সংগ্রহকারীরা যাননি বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। জানা গেছে, চট্টগ্রামে ২ হাজার ৯১২ তথ্য সংগ্রহকারী কাজ করেছেন এবং তাদের তত্ত্বাবধান ও তথ্য যাচাই করেন ৬৩০ জন সুপারভাইজার। চট্টগ্রাম নির্বাচন আঞ্চলিক অফিস জানায়, এ অবস্থায় ভোটার হতে চাইলে অনলাইনে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আবেদন করা যাবে। অনলাইনে আবেদন করার পর যদি কাগজপত্র ঠিক থাকে, তাহলে ভোটার করে নেওয়া হবে।
জেলা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন কালবেলাকে বলেন, বাসাবাড়িতে যায়নি কথাটি একেবারে সঠিক না। শহরে বড় বড় ভবন রয়েছে। হয়তো বা ভবনের নিচে দাঁড়িয়ে থেকে দারোয়ানকে খবর পৌঁছাতে বলেছে এমন। পাশাপাশি এলাকাপ্রতি সাবেক কিছু সিনিয়র লোক থাকে, তাদের সহযোগিতা নেওয়া হয়ে থাকে। তা ছাড়া অনেক সময় সব ভবনে ঢোকার সুযোগ বা অনুমতি মেলে না। এসব ক্ষেত্রে একটু ঘাপলা হতে পারে। কেউ অভিযোগ করলে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করে খোঁজ নেওয়া হবে।
জেলা নির্বাচন অফিসের তথ্যমতে, ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে গত ২০ জানুয়ারি থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহকারীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ২ লাখ ৫৬ হাজার ৯৩৫ নতুন ভোটারের তথ্য সংগ্রহ করেন। নগরের ৪১ ওয়ার্ডে ৩৩ হাজার ৫৭৫ জন এবং জেলার ১৫ উপজেলায় ২ লাখ ২৩ হাজার ৩৬০ নতুন ভোটারের তথ্য সংগ্রহ করেছেন তথ্য সংগ্রহকারীরা। তথ্য সংগ্রহকারীরা তালিকা থেকে ৬০ হাজার ৪৮৫ মৃত ভোটারের নাম বাদ দিয়েছেন। ছবি তোলা ও বায়োমেট্রিক ছাপ দেওয়ার কাজ চলবে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত।
নগরীর পাঁচলাইশে নতুন ভোটার হওয়ার আবেদন করেন ৫ হাজার ১২৭ জন, চান্দগাঁওয়ে ৬ হাজার ৪২৬, কোতোয়ালিতে ৩ হাজার ৬৭৩, ডবলমুরিংয়ে ৮ হাজার ৮৪৭, পাহাড়তলীতে ৫ হাজার ১৫৭ ও বন্দর এলাকায় ৪ হাজার ৩৪৫ জন।
নতুন ভোটার হতে সবচেয়ে বেশি আবেদন করেন- বাঁশখালী উপজেলার ২২ হাজার ৯৬৬ জন। এ ছাড়া লোহাগাড়া উপজেলায় ২১ হাজার ২৩৯ জন, আনোয়ারায় ২০ হাজার ২০৬, হাটহাজারীতে ১৯ হাজার ৩৬২, বোয়ালখালীতে ১৮ হাজার ৫২৪, সীতাকুণ্ডে ১৮ হাজার ১৩, পটিয়ায় ১৫ হাজার ৮০, রাঙ্গুনিয়ায় ১৪ হাজার ৭৭৯, সাতকানিয়ায় ১৪ হাজার ৯৮৫, মীরসরাইয়ে ১২ হাজার ৭৮১, সন্দ্বীপে ১০ হাজার ৮০৩, ফটিকছড়িতে ১০ হাজার ৪৫২, রাউজানে ৯ হাজার ৯২১, চন্দনাইশে ৯ হাজার ৮৩২ ও কর্ণফুলীতে ৪ হাজার ৪১৭ জন আবেদন করেছেন।
নির্বাচন কমিশনের হালনাগাদ খসড়া ভোটার তালিকা অনুযায়ী, চট্টগ্রামে বর্তমান ভোটার ৬৫ লাখ ৪৮ হাজার ৯৭১ জন। সবচেয়ে বেশি ৪ লাখ ৭৩ হাজার ৬৫৫ ভোটার রয়েছেন ফটিকছড়ি উপজেলায়। ২০০৮ সালের ১ জানুয়ারি বা তার আগে যাদের জন্ম কিংবা যারা আগের ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম থেকে বাদ পড়েছেন, তাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন