কুড়িগ্রামের চিলমারীর ব্রহ্মপুত্র নদে ২০ দিনের ব্যবধানে তৃতীয়বার নৌকায় সশস্ত্র ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এ সময় মোসলেম নামে একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন। দুটি নৌকার যাত্রী ও ৬-৭ জন গরু ব্যবসায়ীর কয়েক লাখ টাকা ছিনতাই করে নিয়েছে ডাকাতরা।
রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের কড়াই বরিশাল ঘাটে দুটি নৌকায় এ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতির পর গুলি ছুড়তে ছুড়তে চলে যায় ডাকাত দল।
নৌপুলিশের নৌকার এক থেকে দেড়শ গজ সামনে এ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। পরে নৌ-পুলিশ সদস্যদের বহনকারী নৌকাটি আটক করে স্থানীয় লোকজন।
এর আগে, গত ২৯ জানুয়ারি কড়াই বরিশাল এলাকার পশ্চিমে ব্রহ্মপুত্র নদে যাত্রীবাহী নৌকায় ডাকাতির ঘটনা ঘটে। তারও আগে গত বছর ২১ ডিসেম্বর চিলমারীর অষ্টমীরচর ইউনিয়নের দুইশ বিঘার চরের কাছে নৌ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। সে সময় ১৬-১৭ জনের ডাকাত দল ‘পিস্তল’ ও দেশি অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের জিম্মি করে যাত্রীদের সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে চলে যায়। একের পর এক ডাকাতির ঘটনায় যাত্রীদের কাছে এই নৌপথ যাত্রা ভয়ংকর হয়ে উঠেছে।
ডাকাতির শিকার নৌকার মাঝি ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোববার দুপুর ১২টার দিকে কড়াই বরিশাল খেয়াঘাটের কাছে দুটি যাত্রীবাহী নৌকায় ডাকাতরা হামলা করে। নৌকা দুটি রাজিবপুরের কোদালকাটি ও পাখিউড়া থেকে চিলমারীর উদ্দেশে যাচ্ছিল। মাঝপথে যাত্রী নেওয়ার জন্য কড়াইবরিশাল খেয়াঘাটে ভিড়লে সেখানেই আক্রমণ করে সশস্ত্র ডাকাত দল। এ সময় তারা গুলি ছুড়ে নৌকায় থাকা যাত্রী ও গরু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা ডাকাতি করে চলে যায়।
যাত্রীদের চিৎকারে স্থানীয়রা ডাকাতদের ধাওয়া করে। খেয়াঘাটে একটি নৌকায় থাকা চিলমারী থানা পুলিশের কয়েকজন সদস্য থাকলেও তাদের সামনে দিয়ে ডাকাত দল পালিয়ে যায়। এ সময় পুলিশ সদস্যরা নির্বিকার ছিলেন বলে অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী যাত্রী ও স্থানীয়রা।
নৌকার মাঝি মোসলেম উদ্দিন বলেন, খেয়াঘাটে গরু ব্যবসায়ীদের নৌকা ছিল। তাদের নৌকায় ডাকাতি করতে আইসা আমার নৌকাতেও ডাকাতি করে। ১০ থেকে ১৫ জন ছিল। দুই নৌকা থাইকা টাকা লুট কইরা ডাকাতরা চইলা যায়। আমরা কিছু করতে পারি নাই।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মাঝি মোসলেম আরও বলেন, ডাকাতরা একটা গুলি করছে। তাদের হাতে বেকিও ছিল। আমার কাছে তিন যাত্রীর ৫৭ হাজার টাকা আছিল। আমাক বাড়ি (আঘাত) দিয়া সেটা কাইড়া নিছে। কয়েকজন যাত্রীর কাছেও টাকা নিছে। গরুর ব্যাপারিগো কাছেও টাকা কাইরা নিছে। ওগো অনেকে পানিত লাফ দিছে। পাশে পোশাক পরা তিন পুলিশ আছিল। কিন্তু তারা আগায় আহে নাই।
কড়াই বরিশাল এলাকার ইসহাক নামে এক নৌকা যাত্রী বলেন, দুটি নৌকায় যাত্রী ও গরু ব্যবসায়ীদের থেকে ৪-৫ লাখ টাকা ছিনতাই করে নিয়ে গেছে। পরে কাছে গিয়ে দেখি অনেকে পানিতে লাফ দিছে। সঙ্গে থাকা টাকা পানিতে ভিজে গেছে।
কড়াই বরিশাল এলাকার বাসিন্দা আজম মিয়া জানান, গুলির শব্দ ও যাত্রীদের চিৎকারে ঘাটের কাছে থাকা স্থানীয় লোকজন এগিয়ে যান। তারা নৌকা নিয়ে ডাকাতদের ধাওয়া করেন। কিন্তু ততক্ষণে ডাকাতরা পালিয়ে যায়। এ সময় ঘাটে পুলিশের একটি নৌকা থাকলেও তারা যাত্রীদের সহায়তায় এগিয়ে যাননি।
ভুক্তভোগী গরু ব্যবসায়ীদের বরাতে আজম মিয়া বলেন, ব্যাপারিদের কয়েক লাখ টাকা ডাকাতরা নিয়া গেছে। আমরা ধাওয়া করছিলাম। পুলিশ একটা ফাঁকা গুলি করলেও ডাকাতদের ধরা যাইতো। তারা আগায়া আসে নাই।
ডাকাতির ঘটনায় চিলমারী নৌপুলিশ ফাঁড়ির এএসআই সেলিম সরকারের ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তা রিসিভ হয়নি।
ডাকাতির বিষয়টি কালবেলাকে নিশ্চিত করে চিলমারী মডেল থানার ওসি মুশাহেদ খান বলেন, আমি ঘটনাস্থলে যাচ্ছি। বিস্তারিত জেনে তারপর বলতে পারব।
মন্তব্য করুন