দেশের যে কোনো এলাকায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কেউ কোনো সমস্যায় পড়লে দ্রুত পার্শ্ববর্তী সেনা ক্যাম্পে জানানোর পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সিলেটে বিভাগীয় প্রতিনিধি সম্মেলনে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষকে এমন পরামর্শ দিয়ে তারা বলেন, সেনাবাহিনী আমাদের পাশে আছে। সময়মতো জানানো হলে সেনাবাহিনী উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে।
সভায় অংশ নেওয়া সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার প্রতিনিধিরা বলেন, আট দফা সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের প্রাণের দাবি, বাঁচার দাবি। এই আট দফা আমরা আদায় করবই। স্বাধীনতার সময় সনাতনীরা নির্যাতিত হয়েছেন। স্বাধীনতার পরও ৫৩ বছর সনাতনীরা নির্যাতন, অন্যায়, বঞ্চনা সহ্য করে বেঁচে আছেন। কোনো সরকারের আমলেই সনাতনীরা ভালো ছিলেন না। গত ১৫ বছর আমাদের পাঁচ দফা দাবির একটিও বাস্তবায়নের কেউ উদ্যোগ নেয়নি। সরকার যায়, সরকার আসে; কিন্তু সনাতনীদের নিরাপদ কেউ রাখেনি। সেই পাঁচ দফা এখন আট দফায় রূপান্তরিত হয়েছে।
সিলেট মহানগরীর শারদা হলে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বাসুদেব ধর বলেন, দেশের ক্রান্তিলগ্নে এই পূজা উদযাপন পরিষদ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছে। সবাই একসঙ্গে হয়ে এ দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হবে। এই সিলেট অঞ্চলে অনেক মহাপুরুষ এসেছেন। যাদের কল্যাণে আমরা যাত্রা শুরু করতে পেরেছিলাম। ফলে আমরা এতদূর পর্যন্ত এসেছি। প্রতিটি সংকটময় মুহূর্তে আমরা যার যার জায়গা থেকে মাঠে নেমেছি। এই দেশের জন্য আমাদের পূর্বপুরুষরা জীবন দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, এই দেশ আমাদের, এই দেশকে আমরা ভালোবাসি। এই পরীক্ষায় আমরা উত্তীর্ণ হয়েছি বলে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আমাদের সঙ্গে রয়েছে। ঐক্যের মাধ্যমে আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। স্বাধীনতার ৫৩ বছরে এই হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিষদের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব বলেন, আমরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি। সব সমস্যা ও অভিযোগ আমরা সরকার, সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের কাছে তুলে ধরব এবং এসব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করব। তিনি বলেন, আপনারা ধৈর্য ধরুন। আমরা আট দফা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ও প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি।
সভাপতির বক্তব্যে পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মৃত্যুঞ্জয় ধর ভোলা বলেন, আপনাদের ওপর যেসব হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা হয়েছে, সেসব মামলা সম্পর্কে আমাদের দ্রুত জানান। মিথ্যা মামলায় যত ধরনের আইনি সহায়তা প্রয়োজন হয়, আমরা যে কোনোভাবে আপনাদের পাশে দাঁড়াব। যদি কেউ চাঁদাবাজি করতে আসে, তাহলে আপনারা দ্রুত সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করবেন এবং আমাদের জানাবেন।
পূজা উদযাপন পরিষদের সিলেট মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক চন্দন দাশের পরিচালনায় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে ছিলেন সহসভাপতি অশোক মাধব রায়, সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোপাল চন্দ্র দেবনাথ ও শুভাশীষ বিশ্বাস সাধন, সাংগঠনিক সম্পাদক প্রাণতোষ আচার্য্য ও বিমল বণিক। এ ছাড়া ছিলেন পরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্য সুব্রত দেব, আশুতোষ দাশ ও সিলেট জেলা ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট বিজয় কৃষ্ণ বিশ্বাস।
সভায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য দেন পূজা উদযাপন পরিষদ সিলেট জেলা শাখার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা গোপিকা শ্যাম পুরকায়স্থ, সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি বিমান রায়, জগন্নাথপুর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বিজন দেব, সিলেট মহানগর শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রদীপ কুমার দেব, সিলেট জেলা শাখার সহসভাপতি অধ্যক্ষ ভাস্কর রঞ্জন দাশ, মহানগর শাখার যুগ্ম সম্পাদক দেবব্রত চৌধুরী, কোষাধ্যক্ষ ডিজি রুনু।
সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সহসভাপতি কলি তালুকদার, কোতোয়ালি থানা শাখার সভাপতি অরবিন্দু দাশ বিভু, গোলাপগঞ্জ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক রজত কান্তি দাশ, কুলাউড়া উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অরুনা দেব, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সুরঞ্জিত বৈদ্য, বিশ্বনাথ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. বিভাংশু গুন বিভু, বিয়ানীবাজার উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব চক্রবর্তী, এয়ারপোর্ট থানা শাখার সভাপতি নান্টু রঞ্জন সিংহ এবং দক্ষিণ সুরমা উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নিখিল মালাকার।
এ সময় পূজা উদযাপন পরিষদের সিলেটের চার জেলার প্রতিটি উপজেলা ও পৌরসভার সভাপতি, সম্পাদকসহ সনাতনী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন