ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুপক্ষের মধ্যে কথাকাটাকাটির জেরে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। এতে থাপ্পড়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি আশরাফুল আলম সোহান।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, বুধবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে চলছিল ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আহতদের যাচাইবাছাইয়ের কার্যক্রম। এ যাচাইবাছাই কমিটির আহ্বায়ক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সদস্য সচিব উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। এছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন প্রতিনিধিসহ আরও তিন সরকারি কর্মকর্তা রয়েছেন এ কমিটিতে।
ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে রয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ময়মনসিংহ জেলা কমিটির সদস্য থেকে জুলকার নাঈম। কিন্তু সম্প্রতি তিনি এই কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন। পদত্যাগের পরও জুলকার নাঈম কমিটিতে থাকায় অন্য প্রতিনিধিরা অসন্তোষ প্রকাশ করেন। যাচাই-বাছাই কার্যক্রম শেষে বেশ কয়েকজন ছাত্র প্রতিনিধি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান। এসময় বাকবিতণ্ডা সৃষ্টি হলে জুলকার নাঈমের কমিটিতে থাকা নিয়ে ব্যাখ্যা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলীনূর খান। সেই সঙ্গে বিষয়টি অন্য প্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় করে দেন।
পরে ছাত্র প্রতিনিধিরা নির্বাহী কর্মকর্তার কক্ষ থেকে বের হয়ে চলে যাওয়ার সময় সিঁড়ির নিচে ছাত্র প্রতিনিধি আশিকুল ইসলামের সঙ্গে আরেক প্রতিনিধি আশরাফুল আলম সোহানের বাকবিতণ্ডা হয়। এ সময় দুটি পক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়েন প্রতিনিধিরা। পরে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। আশরাফুল আলম সোহানকে থাপ্পড় মারেন আশিকুল ইসলাম। এতে অজ্ঞান হয়ে পড়েন তিনি। পরে স্থানীয় লোকজন সোহানকে উপজেলা স্বাস্ব্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জুলকার নাঈম বলেন, ‘যাচাইবাছাই কমিটির একটি বোর্ড সভা হয়। সভা শেষে তারা জানতে চান আমি এখানে কেন? এ নিয়ে বাকবিতণ্ডা হয়। আমি শুরু থেকেই এই আন্দোলনে জড়িত ছিলাম। তাদের সঙ্গে আমার দীর্ঘদিন ধরে রেষারেষি চলছে। তারা মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে যাচ্ছে আমার নামে। আজ (বুধবার) নতুন যাচাই-বাছাই তালিকা তৈরি এবং কমিটিতে আমার থাকা নিয়ে তাদের সমস্যা এ থেকে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।’
আশিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাকে নিয়ে তিন-চার মাস ধরে আজেবাজে মন্তব্য করছে। আজ ইউএনও অফিসে সবার সামনে বলে আমি নাকি আওয়ামী লীগের দালাল। তারপর মনের ক্ষোভে আমি তাকে একটা থাপ্পড় মারি, পরে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে।’
আশরাফুল আলম সোহান বলেন, আশিকুল ইসলামের সঙ্গে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে আশিকুল আমার বাম সাইডে কানের নিচে দুইটা থাপ্পড় মারে। এতে অজ্ঞান হয়ে পড়ি। স্থানীয়রা আমাকে উদ্ধার করে হালুয়াঘাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তারা আমাকে বাড়ি নিয়ে যান। এ ব্যাপারে মামলা করবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগামীকাল উন্নত চিকিৎসা নিতে যাবো। মামলার বিষয়ে পরে চিন্তা করব।’
চিকিৎসক প্রাণেশ চন্দ্র পণ্ডিত বলেন, আহত অবস্থায় সোহানকে ভর্তি করা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। আগামীকাল উন্নত চিকিৎসার জন্য একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলীনূর খান জানান, আগেও কমিটিতে ছিলেন জুলকার। এই কমিটিও আগের করা। কয়েকজন প্রতিনিধি এসে অভিযোগ করলেন জুলকার নাঈম কমিটিতে থাকার ব্যাপারে। তারা জুলকারনাঈমকে চায় না, এ নিয়ে তাদের মধ্যে উৎকণ্ঠা। পরে বিষয়টি সবার সঙ্গে কথা বলে সমন্বয় করে শান্ত করার চেষ্টা করা হয়। তারা কক্ষ থেকে চলে যাওয়ার পরে সিঁড়ির নিচে হাতাহাতি থেকে মারামারির ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হালুয়াঘাট থানা ওসি আবুল খায়ের কালবেলাকে জানান, আমি কোনো অভিযোগ পাইনি।
মন্তব্য করুন