পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে নিশিকান্ত মালাকার নামে বন বিভাগের এক রেঞ্জ কর্মকর্তা ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। এক মিনিট ৪৪ সেকেন্ডের একটি ফোনালাপে শোনা যায়, শাকিল নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে তাকে হয়রানি করার হুমকি দিচ্ছেন তিনি।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তার হুমকির কল রেকর্ডটি ফাঁস হয়।
অভিযুক্ত নিশিকান্ত মালাকার দেবীগঞ্জ উপজেলা বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। অন্যদিকে ভুক্তভোগী শাকিল বন বিভাগের চুক্তিভিত্তিক বন প্রহরী।
রেকর্ডে শোনা যায়, ইউসুফ নামে এক বন প্রহরীর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলার সময় শাকিলের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন নিশিকান্ত মালাকার।
রেকর্ডে ইউসুফকে বলতে শোনা যায়, ‘স্যার, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। তখন কী যেন বলতে চেয়েছিলেন।’ প্রতি উত্তরে নিশিকান্ত মালাকারকে বলতে শোনা যায়, ‘তুমি অফিসে আসো কথা বলবনি। তুমি শোনো তোমরা তো জিনিসগুলো বুঝতে পারতেছো না। এই যে শাকিল, শাকিলের স্বয়-সম্পদ কী আছে?’ প্রতি উত্তরে ইউসুফ বলেন, ‘কিছুই নেই স্যার।’ রেঞ্জ কর্মকর্তা পুনরায় বলেন, ‘ওর কিছু নেই তো; ও যেই কথাগুলো বললো মুখের সামনে, সবগুলোই তো মিথ্যা কথা। একটাও সত্য কথা না, ঠিক আছে। তো মামলা যদি পাঁচটা হয় এলাকায় থাকতে পারবে?’
প্রতি উত্তরে ইউসুফ বলেন, ‘না স্যার।’ রেঞ্জ কর্মকর্তা পুনরায় বলেন, ‘ওকে ওয়ারেন্টের উপর থাকতে হবে। বাড়ি ছাড়া হইতে হবে, ওকে বউ বাচ্চা রেখে পালাইতে হবে।’
এ বিষয়ে বন প্রহরী ইউসুফ কালবেলাকে জানান, আমরা ভ্রাম্যমাণ টিমের বন প্রহরী। যখন কেউ গাছ কাটে, তখন আমরা ফোন দিলে রেঞ্জার স্যার আসে না। উল্টো আমাদের বলে তোমার কত টাকা খেয়ে গাছ ছেড়ে দিয়েছো। সম্প্রতি তিনি আমার নামে একটা মামলা দিছেন। সেটার বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য ফোন দিলে তিনি বলেন, শাকিলের অর্থ সম্পদ কী আছে। আমি বলে কিছুই নাই, আশ্রায়ণে থাকে। তিনি তখন বলেন, শাকিলের নামে ৪/৫টা মামলা দিলে তখন কেমন হবে। বাসায় থাকতে পারবে, বৌ বাচ্চা রেখে পালিয়ে থাকতে হবে। উনি এভাবেই আমাদেরকেও হুমকি দেয়।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শাকিলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কিছুদিন আগে আমার ভাই দুইটা গাছের লগ নিয়ে স’মিলে ফারাই করতে যাচ্ছিল। এমন সময় রেঞ্জ কর্মকর্তা আমার ভাইকে ভ্যানসহ ধরে নিয়ে যায়। আমরা সবাই তার ভ্যানটি ছাড়ানোর জন্য গেলে সেখানে ইউএনও স্যার উপস্থিত হন। ইউএনও স্যারের সামনে আমি বলেছিলাম, জমির মালিকরা যখন গাছ কাটে আপনাদের ফোন দিলে তখন তো আসেন না। এই কথা বলায় তিনি আমার উপর রেগে যান। শুনেছি একটা মামলায় নাম দিছে; আবার নতুন করে আমাকে মামলা দিয়ে ফাঁসাতে চাইতেছে।
বিষয়টি জানতে অভিযুক্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা নিশিকান্ত মালাকারের অফিসে গিয়ে দেখা করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। বরং নিউজ না করার জন্য প্রতিবেদকে বারবার টাকা দিয়ে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন। প্রতিবেদক টাকা নিতে অস্বীকৃতি জানালে তিনি জোর করে টাকা দেওয়ার চেষ্টা করেন।
অভিযুক্ত রেঞ্জ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কী না, জানতে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন সরকারের সঙ্গে মোবাইলে একাধিকবার কল করা হয়। তবে কলটি রিসিভ হয়নি।
উল্লেখ্য, এর আগেও দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ ও বিরামপুরে থাকাকালে নিশিকান্ত মালাকারের বিরুদ্ধে একাধিক অনিয়মের অভিযোগে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল।
মন্তব্য করুন