সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন দরিদ্র পরিবারের ছেলে শয়ন কুমার। কিন্তু অর্থাভাবে পড়াশোনা চালানোয় অনিশ্চিয়তার মধ্যে পড়েছেন তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা।
জানা গেছে, শয়ন এবার মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় ঢাকার সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পান। তিনি কাহালু উপজেলার নারহট্র ইউনিয়নের কল্যাণপুর গ্রামের নরসুন্দর সঞ্জয় কুমার দাসের ছেলে।
নিজস্ব কোনো জায়গা-জমি না থাকায় দেড়যুগ ধরে শয়নের বাবা সঞ্জয় কুমার পরিবার-পরিজন নিয়ে বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়া হিন্দুপাড়ায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন। সেখানে একটি দোকান ভাড়া নিয়ে নরসুন্দরের কাজ করে খেয়ে-না খেয়ে সংসারের ঘানি টেনে চলেছেন। সামান্য আয়ে ধার-কর্জ করে এক ছেলে ও এক মেয়ের পড়াশোনার খরচ কোনোমতে চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
শয়নের মা শিপ্রা দেবী বলেন, সংসারে টানাপোড়েন থাকায় কোনো দিন দুবেলা খাবার জোটে, আবার কোনো দিন একবেলা না খেয়ে তাদের দিন কাটে। তার ওপর স্বামী সঞ্জয় সম্প্রতি অসুস্থ হয়ে পড়ায় দীর্ঘদিন কাজ করতে পারছেন না।
তিনি জানান, ছেলেকে তারা তেমন প্রাইভেট শিক্ষক দিতে পারেননি। সে ছোটবেলা থেকেই মেধাবী হওয়ায় এবং প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি দিয়ে আজ মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। মঙ্গলবার থেকে মেডিকেল কলেজে ভর্তি শুরু হয়েছে। বিভিন্ন মানুষের কাছে হাত পেতে ধার করে ছেলেকে ভর্তির করাবেন তারা। তিনি সবার কাছে ছেলের জন্য আশীর্বাদ কামনাসহ তার লেখাপড়া যাতে চালিয়ে যেতে পারে সেজন্য সমাজের বিত্তবানদের সহায়তার হাত বাড়াতে অনুরোধ জানিয়েছেন।
শয়নের বাবা সঞ্জয় কুমার জানান, সেলুনের কাজ করে যে টাকা তিনি রোজগার করেন তা দিয়ে তার সংসারের খরচ চলে না। এ ক্ষেত্রে তার কিছু গ্রাহক শুভাকাঙ্ক্ষী তাকে কিছুটা সহায়তা করেন। আর বাকিটা তিনি বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ধার করে কোনোমতে সংসার চালিয়ে যাচ্ছেন। তার স্ত্রী শিপ্রা এর আগে একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে আয়ার কাজ করলেও অসুস্থতার কারণে আর করতে পারেন না। তিনি ছেলে শয়নের ডাক্তার হওয়া পর্যন্ত সহায়তার জন্য সমাজের বিত্তবানদের প্রতি অনুরোধ জানান।
ঠনঠনিয়া হিন্দুপাড়া এলাকার বাসিন্দা নওগাঁর বদলগাছির বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম শেখ জানান, আর্থিক অনটনের মাঝেও সঞ্জয় খুব কষ্ট করে তার ছেলে শয়নকে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন। তার পরিবারের দৈন্যদশা তিনি কাছে থেকে দেখেছেন। তিনি শয়নের মেডিকেল কলেজে পড়ার জন্য আর্থিক ও মানবিক সহায়তার জন্য সমাজের বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানান।
মন্তব্য করুন