শরীয়তপুরে সাংবাদিকদের ওপর হাতুড়িপেটা এবং হামলার ঘটনায় অভিযুক্তদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে জেলার কর্মরত সাংবাদিকরা।
মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।
মানববন্ধনে অংশ নেন শরীয়তপুর প্রেস ক্লাব, ইলেকট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, অনলাইন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, মফস্বল সাংবাদিক ফোরামসহ অন্যান্য সংগঠনের সাংবাদিকরা। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তার করা না হলে বৃহত্তর কর্মসূচির ঘোষণা দেন তারা। মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেন সাংবাদিকরা।
এদিকে হামলার ঘটনায় ভুক্তভোগী সমকালের সাংবাদিক সোহাগ খান সুজন গতকাল সোমবার রাতে বাদী হয়ে সাতজনের নাম উল্লেখসহ আরও ৮/১০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে পালং মডেল থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা করেছেন। মামলার আসামিরা হলেন- নুরুজ্জামান শেখ (৪৫), শামিম শেখ (৪০), ইব্রাহিম মোল্লা (৪০), জিহাদ মোল্লা (২১), মাকসুদা বেগম (৩৫), মনির ঢালী (৩০) ও সালাউদ্দিন ঢালী (৩৮)।
মানববন্ধনে সাংবাদিকরা জানান, জানা গেছে, গত ২৮ জানুয়ারি দুপুরে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার কাজী মোহাম্মদ ইলিয়াস এক রোগীর ব্যবস্থাপত্র ছুড়ে ফেলে দেন। এ ঘটনায় সংবাদ প্রকাশ করেন সাংবাদিকরা। পালং মেডিকেল সেন্টারের মালিক নুরুজ্জামান শেখ ওই চিকিৎসকের পক্ষ নিয়ে সোহাগ খান সুজনসহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিকদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ান।
জানা গেছে, সোমবার দুপুরে সাংবাদিক সোহাগ খান সুজন অফিসে যাচ্ছিলেন। এ সময় ক্লিনিক মালিক নুরুজ্জামান শেখ, তার ভাই শামীম শেখ, আরেক মালিক ইব্রাহিম মোল্লা, তার ছেলে জিহাদ মোল্লাসহ ১০-১২ আওয়ামী লীগ কর্মী ছুরি, হাতুড়িসহ দেশীয় অস্ত্র দিয়ে সোহাগ খানের ওপর হামলা চালায়। এ সময় তাকে বাঁচাতে এলে নিউজ ২৪ প্রতিনিধি বিধান মজুমদার, বাংলা টিভির প্রতিনিধি নয়ন দাস ও দেশ টিভির প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম আকাশের ওপর হামলা চালায় তারা।
শরীয়তপুর প্রেস ক্লাবের সহসভাপতি ও দৈনিক মানব জমিনের প্রতিনিধি খলিল শেখ বলেন, সাংবাদিকরা সংবাদ প্রচার করার ক্ষিপ্ত হয়ে সন্ত্রাসীরা যে হামলা চালিয়েছে এটা ন্যক্কারজনক। এমন ঘটনা মুক্ত গণমাধ্যমের জন্য হুমকি ও গোটা জাতির জন্য অশনিসংকেত। আমরা চাই দ্রুত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।
আসামিদের গ্রেপ্তারে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম ঘোষণা দিয়ে ইলেকট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন সদস্য সচিব ও চ্যানেল টুয়েন্টি ফোর টেলিভিশনের সাংবাদিক নুরুল আমিন রবিন বলেন, গতকাল সাংবাদিকদের ওপরে যেভাবে হাতুড়ি ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালানো হয়েছে এটি পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যেই করা হয়েছে। আমি প্রশাসনকে স্পষ্ট করে বলতে চাই, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা না হয়, আমরা এর থেকেও বৃহত্তর কর্মসূচির ডাক দেব।
এ ন্যক্কারজনক হামলার বিচারের দাবি জানিয়েছেন প্রথম আলোর প্রতিনিধি সত্যজিৎ ঘোষ। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের ওপরে যে হামলাটি হয়েছে এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। সাংবাদিকদের উপর এভাবে আক্রমণ ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ আমরা চাই না। আমাদের আহ্বান থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও রাষ্ট্রের কাছে, সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের নিরাপত্তার জায়গাটি তারা নিশ্চিত করবে। পাশাপাশি হামলার ভিডিও ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের অনতিবিলম্বে আইনের আওতায় আনা হোক।
পালং মডেল থানার ওসি হেলাল উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, হামলার ঘটনায় ভুক্তভোগী সাংবাদিক সোহাগ খান সুজন বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা করেছেন। অপরাধীদের গ্রেপ্তার করতে ইতোমধ্যে পুলিশ মাঠে কাজ করছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।
মন্তব্য করুন