সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে সাংবাদিক আব্দুল হাকিম শিমুল হত্যার আট বছর পেরোলেও এখনো বিচার শুরু না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন গণমাধ্যমকর্মী ও স্বজনরা।
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) শিমুল হত্যার অষ্টম বার্ষিকী উপলক্ষে শাহজাদপুর প্রেস ক্লাব আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় তারা এ ক্ষোভ জানান।
সভায় বক্তারা বলেন, ২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগের দুগ্রুপের সংঘর্ষ চলাকালে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন সমকালের শাহজাদপুর প্রতিনিধি শিমুল। পরদিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। মর্মান্তিক এই ঘটনার আট বছর পার হলেও এখন পর্যন্ত মামলার বিচারকাজ শুরু হয়নি, যা বেদনাদায়ক। এই হত্যার বিচার দ্রুত শুরু করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে দাবি জানাই।
শাহজাদপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি এম এ জাফর লিটনের সভাপতিত্বে ও সিনিয়র সহসভাপতি রাসেল সরকারের সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য দেন, সাধারণ সম্পাদক আল আমিন হোসেন, সাবেক সভাপতি বিমল কুণ্ডু, সাংবাদিক আবুল কাশেম, জহুরুল ইসলাম, জাকারিয়া মাহমুদ, মির্জা হুমায়ুন প্রমুখ। এ সময় ছিলেন শিমুলের স্ত্রী নুরুননাহার, ছেলে আল নোমান নাজ্জাশি সাদিক, মেয়ে তামান্না-ই-ফাতিমা, মামা হাজী আব্দুল মজিদ মণ্ডল ও মামাতো ভাই আজাদ মণ্ডল।
বাদী নুরুননাহার বলেন, আসামিরা জামিনে বাইরে। এখনো বিচার শুরু না হওয়ায় আমাদের মন অশান্ত ও আতঙ্কে। দ্রুত খুনিদের শাস্তি দেখতে চাই।
জানা যায়, ২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি শাহজাদপুর পৌরসভার তৎকালীন মেয়র হালিমুল হক মিরু ও ছাত্রলীগ নেতা বিজয় মাহমুদ সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সেখানে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে শিমুল গুলিবিদ্ধ হয়ে পরদিন মারা যান। এ ঘটনায় শিমুলের স্ত্রী নুরুননাহার হালিমুল হক মিরুকে প্রধান আসামি করে মামলা করেন। পুলিশ ৩৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে।
২০১৮ সালের ২২ জানুয়ারি মামলাটি শাহজাদপুরের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালত থেকে সিরাজগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালত এবং পরবর্তীতে রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। ২৪ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ শিমুল হত্যা মামলা চাঞ্চল্যকর মামলা হিসেবে প্রজ্ঞাপন জারি করে। ২০১৯ সালের ৪ জুলাই মামলাটি রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।
এরপর আসামিপক্ষ হাইকোর্টে রিট করে এটি স্থগিত করে। বাদী নূরুননাহার লিভ টু আপিল করলে আপিলেট ডিভিশনের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ২০১৯ সালের ৩ ডিসেম্বর ৬ সপ্তাহের মধ্যে রুল নিস্পত্তির নির্দেশ দেন। এরপরও বিচার শুরু হয়নি।
বিমল কুণ্ডু বলেন, প্রকাশ্য দিবালোকে শিমুলকে গুলি করে হত্যা করা হয়। অথচ আসামিপক্ষের নানা কূটকৌশলে আজও বিচার শুরু হয়নি। দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচার শুরু করে খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এদিকে শিমুল হত্যার অষ্টম বার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল কালো পতাকা উত্তোলন, শিমুলের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, কালোব্যাজ ধারণ, প্রতিবাদ সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মন্তব্য করুন