অবৈধভাবে সমুদ্রভাবে ইতালি যাওয়ার পথে নৌকাডুবিতে নিহত ২৩ জনের মধ্যে ১০ জনের পরিচয় মিলেছে। তাদের বাড়ি মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলায়। মামা-ভাগ্নেসহ নিহতের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। এ ঘটনায় জড়িত দালালদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন স্বজন ও এলাকাবাসী।
পুলিশ বলছে, এ ব্যাপারে নেওয়া হবে আইনগত ব্যবস্থা। আর নিহতদের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছে প্রশাসন।
খোঁজ পাওয়া নিহতরা হলেন- মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার সুন্ধিকুড়ি গ্রামের সাগর বিশ্বাস, আশীষ কীর্তনীয়া, সাগর বাড়ৈ। শাখারপাড়ের সজীব মোল্লা, সাদবাড়িয়ার রাজীব হোসেন, বৌলগ্রামের অনুপ সরকার ও নৃপেন কীর্তনীয়া, গোবিন্দপুর গ্রামের ইনসান শেখ ও আবুল বাশার। পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামের টিটু হাওলদার।
নিহতের স্বজনরা জানায়, দালালদের খপ্পরে পড়ে গত জানুয়ারি মাসের শুরুতে ইতালির উদ্দেশে তারা বাড়ি ছাড়েন।
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামের হাসান মাতুব্বর ও কুলসুম বেগমের ছেলে টিটু হাওলাদার পরিবারের সচ্ছলতা ফেরাতে অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালি পাড়ি জমাতে গিয়ে নৌকাডুবিতে মারা যান। মোবাইলে ছেলের মৃত্যুর ছবি দেখে সংবাদে শোকে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ছেন তিনি। ছেলে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলে বারবার মূর্ছা যান।
নিহত টিটু হাওলাদারের মা কুলসুম বেগম বলেন, আমি আমার বাবাকে চাই। আমার এই একটাই সন্তান। আমি অনেক কষ্ট করে আমার সন্তানকে বড় করেছি। আমি রফিক দালালকে ১৬ লাখ টাকা দিছি। সে বলছে, আমার ছেলেকে সুন্দরভাবে পাঠাবে।
একইভাবে কান্নায় ভেঙে পড়ে টিটুর বাবা হাসান হাওলাদার বলেন, আমি অনেক কষ্ট করে আমার ছেলেকে বড় করছি। অনেক ধার-দেনা করে পাঠাই। এখন আমি কীভাবে ধার-দেনা শোধ করব। আমার ছেলে তো নাই। গতকাল দালালে আমার ছেলের লাশের ছবি পাঠাইছে। আমি এখন কী করব- বলে বিলাপ করতে থাকেন।
একইভাবে শোকে স্তব্ধ হয়ে আছে টিটু হাওলাদারের মামা আবুল বাশার আকনের বাড়িতেও। নিহত টিটু হাওলাদারের মামা আরেক নিহত আবুল বাশার আকনের বড় ভাই বাচ্চু আকন বলেন, আমি আমার ভাই ও ভাগিনাকে হারিয়ে ফেলেছি। আমার ভাইয়ের জন্য দুই বারে দুই দালালকে ২৮ লাখ টাকা দিয়েছি। জমিজমা বিক্রি করেছি। ধার দেনা করেছি। এখন আমরা সর্বস্বান্ত হয়ে গেছি। সরকারের কাছে দাবি করছি, টাকা পয়সা সবই তো গেছে। এখন আমার ভাইয়ের লাশটা যদি সরকার ফিরিয়ে যেন দেয়। আর ভাগিনা টিটুর লাশটাও সরকারের কাছে ফেরত চাই। আর এ ঘটনায় জড়িত দালালদের কঠোর শাস্তি দাবি করছি।
শুধু টিটু হাওলদারের পরিবারই নয়। মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার ১০ যুবকের নৌকাডুবিতে মৃত্যুর ঘটনায় এলাকাজুড়ে চলছে শোকের মাতম।
নিহতের স্বজনরা জানায়, দালালদের খপ্পরে পড়ে গত জানুয়ারি মাসের শুরুতে ইতালির উদ্দেশে বাড়ি ছাড়েন মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার সুন্ধিকুড়ি গ্রামের সাগর বিশ্বাস, আশীষ কীর্তনীয়া, সাগর বাড়ৈ। শাখারপাড়ের সজীব মোল্লা, সাদবাড়িয়ার রাজীব হোসেন, বৌলগ্রামের অনুপ সরকার ও নৃপেন কীর্তনীয়া, গোবিন্দপুর গ্রামের ইনসান শেখ ও আবুল বাশার।
পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামের টিটু হাওলদার ও গোবিন্দপুর গ্রামের আবুল বাশার সম্পর্কে মামা-ভাগ্নে। আবুল বাশার লিবিয়া কয়েক মাসে আগেই গিয়েছিলেন। পরে যান তার ভাগনে টিটু হাওলাদার। গত ২৪ জানুয়ারি লিবিয়া থেকে একটি ইঞ্জিন চালিত নৌকায় যাত্রা করেন তারা। মাঝপথে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে প্রাণ হারায় ২৩ জন। এরমধ্যে মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার এই ১০ তরুণ।
দালালদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ। আর নিহতদের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনতে দূতাবাসের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ প্রশাসন।
রাজৈর থানার ওসি মো. মাসুদ হোসেন খান কালবেলাকে বলেন, আমরা ইতোমধ্যে শুনেছি লিবিয়ার ভূমধ্যসাগরে নিহত ২৩ বাংলাদেশির মধ্যে ১০ জনই মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার বাসিন্দা। আমরা নিহতদের তালিকা তৈরি করে কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবো। যাতে লাশগুলো দেশে স্বজনদের কাছে ফেরত আসে সেই উদ্যোগ গ্রহণ করবো।
ওসি আরও বলেন, এ ঘটনায় রাজৈর হরিদাসদি গ্রামের স্বপন মাতুব্বর, মজুমদারকান্দি গ্রামের মনির হাওলাদার ও ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার আলীপুরের রফিকুল ইসলাম দালাল জড়িত থাকার কথা মৌখিকভাবে শুনেছি। ঘটনার পর থেকে দেশে থাকা দালালরা আত্মগোপনে রয়েছেন। অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
মন্তব্য করুন