লিবিয়ায় মাত্র কয়েক দিন, এরপর সাগর পেরোলেই ইতালি। সেখানে যা আয় হবে, অন্তত এক মাসেই দেশে বাড়ি করা যাবে- এমন প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে কর্মী পাঠাচ্ছে দালালচক্র।
অথচ লিবিয়া থেকে ইউরোপে যাওয়ার ওই পথটি (মধ্য ভূমধ্যসাগরীয় রুট) আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) দৃষ্টিতে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। এ ঝুঁকিপূর্ণ সাগর দিয়ে অবৈধপথে প্রতিনিয়ত জীবন বাজি রেখে পার হচ্ছেন মানুষ। আর এ দীর্ঘ পথ পার হতে গিয়ে অধিকাংশ মানুষেরই সলিল সমাধি হচ্ছে।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৫ জানুয়ারি এবার লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার সময় ট্রলারডুবিতে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার ছয় যুবক নিখোঁজ হয়েছেন।
নিখোঁজ ছয় যুবক হলেন- রায়পুরা উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের গৌরীপুর এলাকার কালু মিয়ার ছেলে মোস্তাক, মহেশপুর ইউনিয়নের সাপমারা এলাকার সাদেক মিয়ার ছেলে জুয়েল, বেগমাবাদ ঝাউকান্দি এলাকার আব্দুল ছালামের ছেলে সায়েম, আরশ মিয়ার ছেলে রাকিব, তুলাতলী এলাকার লিটন মিয়ার ছেলে ইমরান ও জয়নগর এলাকার নান্নু মিয়ার ছেলে আশিক মিয়া।
জানা গেছে, ২৫ জানুয়ারি রায়পুরার ওই ছয় যুবকসহ ৪৫ জন যাত্রী নিয়ে ভূমধ্যসাগরে ডুবে যায় একটি ট্রলার। এরপর থেকেই তারা নিখোঁজ রয়েছেন। তারা বেঁচে আছেন নাকি মারা গেছেন; জানেন না পরিবারের সদস্যরা। তবে ২০ বাংলাদেশির মরদেহ পাওয়ার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃপক্ষ।
নিখোঁজ পরিবারের সদস্যরা বলেন, প্রবাসী তোফাজ্জল ও কবিরের মাধ্যমে লিবিয়ার উদ্দেশে ২৫ জানুয়ারি পাড়ি দেন ওই ছয়জন। কিন্তু ঘটনার আটদিন পেরিয়ে গেলেও তাদের কোনো সন্ধান মেলেনি। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে পরিবারের।
ভুক্তভোগী জুয়েলের বাবা সাদেক মিয়া বলেন, গার্মেন্টসকর্মী ছিলেন জুয়েল। লিবিয়া প্রবাসী বড় ভাই কালামের মাধ্যমে ওই দেশে যান তিনি। সেখানে তোফাজ্জলের মাধ্যমে ১২ লাখ টাকার বিনিময়ে ইতালি যাওয়ার চুক্তি হয়। ২৪ জানুয়ারি জুয়েলের সঙ্গে শেষ যোগাযোগ হয়েছিল তার পরিবারের। এরপর থেকেই তার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। একই অবস্থা আশিক, মুস্তাক, রাকিব ও ইমরানের। ইতালি যাওয়ার পথে তারাও ট্রলারডুবিতে নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানায় তাদের পরিবার।
নিখোঁজ ছয়জনের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। সন্তানের সন্ধান পেতে লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসসহ প্রবাসীদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা চান ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।
রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ রানা কালবেলাকে বলেন, লিবিয়ায় ট্রলারডুবিতে ২০ বাংলাদেশি নিহতের খবর শুনেছি। সেখানে ওই ছয়জন আছে কিনা নিশ্চিত নয়। এ ব্যাপারে আমরা খোঁজ নিচ্ছি। মানবপাচারের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনিব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া অবৈধ পথে বিদেশ পাড়ি না জমানোর জন্যও বিভিন্ন সময় আমরা সচেতনতামূলক সভা-সমাবেশ করে যাচ্ছি।
মন্তব্য করুন