‘আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের ক্যাডার, আমার নাম নজরুল ইসলাম বাচ্চু’ এমন কথপোকথনের কল রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। কল রেকর্ডটি নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও এক কলেজ শিক্ষকের। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
রোববার (৩ ফেব্রুয়ারি) শিক্ষা কর্মকর্তাকে ফোন করে হুমকি ও অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন ওই কলেজ শিক্ষক।
মোবাইল ফোনে কল দিয়ে হুমকি দেওয়া ওই শিক্ষকের নাম নজরুল ইসলাম বাচ্চু। তিনি উপজেলার চৌরাট শিবপুর বরেন্দ্র ডিগ্রি কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। অপরদিকে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নাম এটিএম জিল্লুর রহমান।
কথোপকথনের কল রেকর্ডে নজরুল ইসলামকে বলতে শোনা যায়, আপনার কপাল ও ভাগ্য ভালো আপনি আমার কলেজে আসছেন, আমার খোঁজ করেছেন, আবার হুমকি দিয়ে গেছেন। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাডার। আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের ক্যাডার, আমার নাম নজরুল ইসলাম বাচ্চু। আমি কিন্তু ওই রাজপথের লড়াকু সৈনিক। এরশাদ আন্দোলনে আমি অগ্রণী ভূমিকার একজন, মানে সেই রকম ক্যাডার ছিলাম আমি।
অন্য প্রান্ত থেকে শিক্ষা কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান ‘আচ্ছা হোক তবে..’ বলতেই নজরুল ইসলাম উত্তেজিত হয়ে বলেন, ওই ব্যাটা আপনার বগুড়া বাড়ি, সেটা নিয়ে আপনি থাকেন। আপনি জানেন, তারেক রহমানের সঙ্গে আমার কী সম্পর্ক। আপনি আমার কলেজে এসে আমাকে হুমকি দিয়ে গেছেন। আমি কলেজে থাকলে আপনার চেহারা ফাটফাট করে দিতাম। যাবো নাকি আপনার অফিসে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পত্নীতলা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এটিএম জিল্লুর রহমান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘ডিরেক্টর মহোদয়ের নির্দেশে গত ২৯ জানুয়ারি চৌরাট শিবপুর বরেন্দ্র ডিগ্রি কলেজে আমি ল্যাব দেখতে গিয়েছিলাম। ওখানে গিয়ে শুনি, ওই ল্যাব তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে রয়েছেন ওই কলেজের শিক্ষক নজরুল ইসলাম বাচ্চু। তিনি সেদিন কলেজে ছিলেন না। তারপরে ল্যাবের রিপোর্ট পাঠিয়ে দিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘গতকাল রোববার ওই কলেজের সহকারী অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বাচ্চু আমাকে ফোন করে হুমকি দেন। এর আগেও একবার তিনি আমাকে হুমকি দিয়েছেন। আজকে ফোন করে আমাকে হুমকি দিয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেছেন। এই শেষ বয়সে এসে আমাকে এভাবে কেউ অপমান করল- এটা দুঃখজনক। বিষয়টি আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে এখনো জানাইনি। তবে জানাব।’
শিক্ষা কর্মকর্তাকে হুমকি দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে চৌরাট শিবপুর বরেন্দ্র ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ওই লোক আস্ত একটা বেয়াদব। এর আগে আমার সঙ্গে ও পত্নীতলায় অনেক শিক্ষকের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছেন। গত বুধবার তিনি আমার কলেজে গেছে। সেদিন আমি অসুস্থ ছিলাম, তাই কলেজে যাইনি। আমার কলিগদের তিনি বলেছেন, বাচ্চু কোথায় আমি তার চেহারাটা দেখতাম, আমি বগুড়ার ছেলে। রোববার আমি কলেজে গিয়ে এসব শুনে আমার মাথাটা গরম হয়ে গেল। তারপর ফোন দিয়ে আমিও তাকে উল্টাপাল্টা কথা বলেছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও চৌরাট শিবপুর বরেন্দ্র ডিগ্রি কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আলিমুজ্জামান মিলন কালবেলাকে বলেন, ‘বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানার পর আমি নিজেই মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে ফোন দিয়েছিলাম। অফিসে তার সঙ্গে এখনো দেখা হয়নি। তিনি বলেছেন, সাক্ষাতে তিনি বিষয়টি আমাকে বলবেন। তার কাছ থেকে ডিটেইলস শোনার পর এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
মন্তব্য করুন