জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ আবু সাঈদের নামে কোচিং সেন্টার খোলার ঘটনায় এক শিক্ষার্থীকে পুলিশে দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগরের একদল নেতাকর্মী।
রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শুনানি শেষে তাকে জামিন দেন মহানগর কোতোয়ালি আমলি আদালতের বিচারক শোয়েবুর রহমান।
এর আগে শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টার দিকে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে রংপুর নগরের শাপলা মোড়ের ভাড়া বাসা থেকে তুলে আনে কোতোয়ালি থানা-পুলিশ। পরে ১৫ ঘণ্টা থানা হাজতে রাখার পর ‘অধর্তব্য’ অপরাধের মামলায় তাকে আদালতে পাঠানো হয়। আদালতের হাজতে কেটেছে আরও ৬ ঘণ্টা। এ নিয়ে তাকে হাজতে থাকতে হয়েছে ২১ ঘণ্টা।
ভুক্তভোগী যুবকের নাম হাসান আলী। তিনি রংপুর মডেল কলেজে বাংলা বিভাগে স্নাতক তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।
আটক শিক্ষার্থীর পরিবার ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে নগরীর শাপলা চত্বর এলাকায় হাসান আলীর বাসায় যান মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একদল নেতাকর্মী। এ সময় ‘শহীদ আবু সাঈদ কোচিং সেন্টার’ নামে একটি ফেসবুক পেজ খোলার অভিযোগে ওই ছাত্রের সঙ্গে তাদের কথাকাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে পুলিশ ডেকে তাকে সোপর্দ করা হয়। হাসানকে রাত ১০টার দিকে মহানগর কোতোয়ালি থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। পরে রাত ১টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর জেলা শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মারুফ কোচিং সেন্টারের মালিক রফিক আহমেদ রাজের নামে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
জিডিতে মারুফ উল্লেখ করেন, রংপুর নগরীর মীরগঞ্জের বাসিন্দা রফিক আহমেদ রাজ শহীদ আবু সাঈদের নামে কোচিং সেন্টার খুলে পোস্ট করেন। আবু সাঈদের নামে কোচিং সেন্টার করে ব্যঙ্গাত্মকভাবে প্রচার করা হয়েছে। এতে আবু সাঈদের পরিবারসহ দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। তবে জিডিতে কলেজ ছাত্র হাসান আলীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনা হয়নি।
তবে জামিনে মুক্ত হয়ে হাসান আলী কালবেলাকে বলেন, ‘আমি একজন কনটেন্ট ক্রিয়েটর। স্যারকে ওই পেজটি খুলে দিয়েছি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা আমার বাসায় গিয়ে বাজেভাবে দরজায় নক করেন। আমি দরজা খুলে এসে বলি কোনো ভদ্রলোক কারও বাসায় গিয়ে এ রকম করতে পারে না।’ পরে পুলিশ কথা বলবে বলে তারা আমাকে থানায় নিয়ে যান। থানা থেকে ছেড়ে দেওয়ার কথা ছিল, কেন হয়নি জানি না। আমাকে হাজতে থাকতে হলো, এটা আমার কপালে ছিল। আর কিছু বলতে চাই না।’
এ বিষয়ে জানতে আব্দুল্লাহ আল মারুফকে ফোন করা হলে তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর জেলা শাখার আরেক নেতা ডা. আসফাক আহমেদ জামিল বলেন, ‘শহীদ আবু সাঈদের নাম ব্যবহার করে কেউ ব্যবসা করতে পারে না। ওখানে যে ঘটনা ঘটেছে সেটি অনভিপ্রেত। ওখানে আমাদের কমিটির শীর্ষস্থানীয় কেউ ছিলেন না। কে কে গিয়েছিল সেটা জানা নেই। প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) ড. আশিক মাহমুদ বলেন, ‘কোচিং সেন্টারটি যাচাই করতে সেখানে গিয়েছিলেন ছাত্ররা। তাদের সঙ্গে আটক ওই ছাত্র খারাপ ব্যবহার করেন। বকাঝকা, গালাগাল করলে অভিযোগ দিয়ে তাকে থানায় দেন ছাত্ররা। উনি (হাসান আলী) কোচিংয়ের মালিক নন, কনটেন্ট ক্রিয়েটর। পুলিশ তদন্ত করে প্রমাণ পেয়ে থানায় নিয়ে এসেছে।’
শুধু খারাপ আচরণ করার মৌখিক অভিযোগে একজন নাগরিককে থানায় এনে হাজতে আটকে রাখা যায় কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘অফিসে আসেন, এ বিষয়ে বিস্তারিত কথা হবে।’
এ ঘটনাকে নাগরিক অধিকার লঙ্ঘন বলছেন মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিরা। রংপুর আদালতের আইনজীবী পলাশ কান্তি নাগ বলেন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বা আমলযোগ্য অপরাধ ছাড়া কোনো ব্যক্তিকে পুলিশ আটক বা গ্রেপ্তার করতে পারে না। এ ধরনের গ্রেপ্তার আইন ও পুলিশের ক্ষমতার অপব্যবহার এবং মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। কারও বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়।
মন্তব্য করুন