এসএসসির টেস্ট পরীক্ষায় ৭ বিষয়ে ফেল করায় উত্তেজিত হয়ে গভীর রাতে চাঁদপুরের হাইমচরে এক শিক্ষকের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে শিক্ষার্থীরা। ঘটনার সময় প্রাণ বাঁচাতে নিরাপদে সরে পড়েন ওই শিক্ষক।
রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) এমন ঘটনার নিন্দা জানিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপজেলা পরিষদের সামনে বিক্ষোভ করলে বিষয়টি জানাজানি হয়।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত তিন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা হলো- রানা, সিহাব ও আরাফাত।
জানা যায়, হাইমচরের দূর্গাপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজে এসএসসি টেস্ট পরীক্ষায় গেল বছর ৭ বিষয়ে ফেল করে রানা পাটোয়ারী নামে এক শিক্ষার্থী। পরে দীর্ঘ এক বছর প্রতীক্ষা শেষে সে তার পরিবারের হস্তক্ষেপে পুনরায় স্কুলে ক্লাস করার সুযোগ পায়। কিন্তু ওই শিক্ষার্থীর বখাটেপনা থেকে অন্য শিক্ষার্থীদের সজাগ থাকতে হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে মেসেজ দেন ওই শিক্ষক। আর এটি জানতে পেরেই রাগে ক্ষোভে দলবল নিয়ে ওই শিক্ষকের বাড়িতে হামলায় চালায় রানা।
এদিকে হাইমচরে ২টি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজসহ মোট ১৪টি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল এবং ১০টি মাদ্রাসায় মোট ২৪ জন প্রধান শিক্ষকসহ ৩২৬ সহকারী শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী সমাজ এ ঘটনার নিন্দা ও দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষক মনির হোসেন বলেন, এসএসসি পরীক্ষার্থী রানা, সিহাব ও আরাফাতসহ ৭-৮ জন বহিরাগত কিশোর গ্যাং সদস্য আমাকে প্রাণে মেরে ফেলতে আমার বাড়িতে গভীর রাতে খোঁজাখুঁজি করে। পরে আমি প্রাণে বাঁচতে সরে গেলে ওরা আমার পরিবারকে গিয়ে অশালীন ভাষায় গালাগাল করে ও বাড়িতে হামলা চালায়। আমি হামলার আশঙ্কায় নিরাপত্তাহীনতার থানায় জিডি করে সবার সহায়তা চাই।
অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বাড়িতে গিয়েও তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি এবং ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রশাসন কঠোর হচ্ছে শুনে তারা সবাই গা ঢাকা দিয়ে পালিয়ে রয়েছে।
এ বিষয়ে দুর্গাপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ রুহুল আমিন বলেন, সহকারী শিক্ষক মনির হোসেন তার বাড়িতে হামলার বিষয়টি আমাকে অবগত করলে আমি তাকে থানায় জিডি করার পরামর্শ দিয়েছি। শিক্ষককে লাঞ্ছিত করায় আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই। ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির সভাপতির নির্দেশক্রমে অভিযুক্ত ছাত্রদের বহিষ্কার করা হয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আ. মান্নান বলেন, অতীতেও শিক্ষক মনিরের মতো যাদের সঙ্গে এমন ন্যক্কারজনক অন্যায় হয়েছে আমরা তার বিরোধিতা করে রাজপথে নেমেছি। আমরা চাই, শুধু বহিষ্কারের মধ্যেই ওই শিক্ষার্থীদের সীমাবদ্ধ না রেখে তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।
হাইমচরের মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল বলেন, পূর্বেও আমরা এই উপজেলার ২ জন শিক্ষকের ওপরে হামলার ঘটনায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করেছি। আশা করছি কিশোর গ্যাংয়ের দ্বারা আক্রান্ত শিক্ষক মনিরকে লাঞ্ছিত করার ঘটনাতেও প্রশাসন ন্যায়বিচার করবে।
হাইমচর থানার ওসি মহিউদ্দিন সুমন কালবেলাকে বলেন, শিক্ষক মনিরের জিডির পরপরই অভিযুক্ত কিশোর গ্যাং শিক্ষার্থীর বাসায় বাসায় যাচ্ছে পুলিশ। দ্রুতই অভিযুক্তদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
এ বিষয়ে চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে সালমা নাজনীন তৃষা কালবেলাকে বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তিন শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের আইনের আওতায় এনে বিচার নিশ্চিতে কাজ করা হচ্ছে। সব শিক্ষার্থীকে সতর্ক করতে নৈতিকতা বৃদ্ধিতেও কাজ করবে প্রশাসন।
মন্তব্য করুন