বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতের পর হাজারো মানুষের ব্যস্ত পদচারণায় সরগরম তুরাগতীর। হঠাৎই আকাশ থেকে বিকট শব্দে পৃথক দুই স্থানে আছড়ে পড়ে দুটি ড্রোন। মুহূর্তের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো মাঠে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই শুরু হলো ধাক্কাধাক্কি, পায়ের নিচে পড়ে যায় অনেকেই। আহত হন শতাধিক মুসল্লি।
অন্যদিকে, একই সময়ে এক মুসল্লির চিৎকার কানে এলো আশপাশের লোকদের। তার ডান পা ঝলসে গেছে ফুটন্ত গরম পানিতে।
রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) সকালে আখেরি মোনাজাতের পর ইজতেমা ময়দানের ৪নং গেট সংলগ্ন জায়গায় এ ঘটনা ঘটে।
গরম পানিতে পড়ে গুরুতর আহত ব্যক্তির নাম জুয়েল (২৫)। তিনি বগুড়ার সোনাতলা থানার আলিদা বাগান গ্রামের বাসিন্দা।
তাকে চিকিৎসা দিতে টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে জরুরি বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে উন্নত চিকিৎসা জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে পাঠান ডা. শাকিল বিন সিরাজ।
ড্রোন আতঙ্কে আহত অনেকেই টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেছে।
আহতরা হলেন- আবুল কালাম (৫৫), আলামিন (৩২), আজাদ (৩০), ওবায়দুল্লাহ (৩২), রাতুল (১৮), আব্দুল করিম (২৮), সাইফুল ইসলাম (৩৮), জাফর উদ্দিন (৩১), জয়নাল (২৪), মকবুল হোসেন (৬৪), সোহাগ (৬০), মোশারফ (৩০), কোরবান আলী (২৫), সাইফুল ইসলাম (৩৫), সালামত (১৮), মুস্তাকিন (৩৩), কবির হোসেন (৩০), মুবিন (১৮), আয়নাল হক (২২), মামুন হোসেন (২১), মো. বাসেদ (১৩), খোকন (৪৩), জুয়েল (২৫), কবির হোসেন (৪৬), নাজিম উদ্দিন (৪১), জবরুল (৩১), জয়নাল (৫৪), কাওছারুল আলম (২৮), রায়হান (২৭), জহরুল (২৮), আলি নেওয়াজ (৩৮), আফতাব উদ্দিন (৪৭) মো. আমান (২৮), আনোয়ার (৪৫), সোহেল (৩৫), ফজল হক (৪৫) ও মুজাফফর আলীসহ (৪৪) শতাধিক ব্যক্তি।
রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে টঙ্গীর ইজতেমা মাঠের মিল গেট সংলগ্ন এলাকায় ও বিশ্ব ইজতেমার ২নং গেটে, ৪নং গেটে ঘটে যায় অপ্রত্যাশিত এ ঘটনা। মুহূর্তের মধ্যে চারপাশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দ্রুত বের হওয়ার চেষ্টায় অনেকে পড়ে গিয়ে আহত হন।
রোববার সকাল ৯টার কিছু পরেই মাওলানা যুবায়ের আহমদের পরিচালনায় হৃদয়স্পর্শী আখেরি মোনাজাতে মুখর হয়ে ওঠে তুরাগতীর। লাখো মুসল্লি আল্লাহর দরবারে দুহাত তুলে কান্নায় ভেঙে পড়েন। পুরো মাঠজুড়ে তখন শুধুই শোনা গেছে ‘আমিন, আল্লাহুম্মা আমিন’ ধ্বনি।
এবারের ইজতেমায় বিশ্বের ৭৬টি দেশ থেকে প্রায় ৩ হাজার ৫০ জন বিদেশি অতিথি অংশ নেন। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং আজাদ কাশ্মীর আইনসভা পরিষদের সদস্য পীর মজহার সাঈদ শাহ।
বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে ৬ জন মুসল্লির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন আয়োজক কমিটির মিডিয়া সমন্বয়কারী হাবিবুল্লাহ রায়হান। নিহতদের জানাজা ইজতেমা ময়দানে সম্পন্ন করে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
রোববার দুপুর ১২টার দিকে মারা যান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া থানার মসজিদ পাড়া গ্রামের অহিদ হোসেন (৫০)। শনিবার রাতে মারা যান ভোলার চরফ্যাশনের হাজী আব্দুল গফুর (৭৫) ও বিকেলে হবিগঞ্জের রামনগর ইউনিয়নের রমিজ আলী (৬০)। শুক্রবার রাতে মারা যান হবিগঞ্জের বাহুবলের ইয়াকুব আলী (৬০), বিকেলে শেরপুরের ছাবেত আলী (৭০) এবং সকালে খুলনার আব্দুল কুদ্দুস গাজী (৬০)।
টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি ফরিদুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ড্রোনটি কার ছিল বা কোথা থেকে উড়ানো হয়েছিল, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে প্রশাসনের তাৎক্ষণিক পদক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ দক্ষিণ) এনএম নাসির উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। সন্দেহজনক কিছু এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে আসেনি। বিশ্ব ইজতেমার ময়দানে সংবাদ সংগ্রহ ও আকাশ পথে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একাধিক ড্রোন উড়ছিল। হয়তো ড্রোন অপারেটরদের কোনো ত্রুটির কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যাচ্ছে। এ ঘটনায় আতঙ্কিত বেশ কয়েকজন মুসল্লি ছোটাছুটিকালে আহত হয়েছেন। তাদের সবাইকে চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের প্রথম ধাপ রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হলো। আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি বাদ মাগরিব শুরু হবে শুরায়ি নিজামের প্রথম পর্বে দ্বিতীয় ধাপের ইজতেমা। আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে প্রথম পর্ব ইজতেমা।
মন্তব্য করুন