কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ফজলুর রহমানের নির্দেশে তারেক রহমানের ৩১ দফা প্রচারের মঞ্চ ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে।
শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) উপজেলার এলংজুরী বাজারে ইউনিয়নে সভামঞ্চ ভাঙার এ ঘটনা ঘটে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ফজলুর রহমান বলেন, আমার কোনো লোক নাই। তারা সবাই দলের লোক।
জানা যায়, শনিবার দুপুরে জেলার ইটনার এলংজুরী বাজারে ইউনিয়ন বিএনপি আয়োজিত ৩১ দফার আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি নেতা আব্দুর রহিম মোল্লা। তবে, তিনি সেখানে পৌঁছানোর আগেই মঞ্চ ভেঙে ফেলেন নিজ দলের নেতাকর্মীরা। পরে ভাঙা মঞ্চেই আব্দুর রহিম মোল্লা আলোচনা সভা করেন।
বিষয়টি জানার পর থেকে ক্ষুব্ধ স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরে ভাঙা মঞ্চেই আব্দুর রহিম মোল্লা আলোচনা সভা করেন। এ ঘটনায় এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
স্থানীয় বিএনপি নেতা মো. জামরুল মিয়া বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমরা এখানে আলোচনা সভার আয়োজন করি। কিন্তু ফজলুর রহমানের অনুসারীরা আমাদের প্রোগ্রাম বন্ধ করে দিতে মঞ্চ ভেঙে ফেলে। আমরা গিয়ে দেখি- যারা এখানে মঞ্চ ভাঙতে গেছেন তাদের সবার হাতে দেশীয় বিভিন্ন অস্ত্র ছিল। আমরা সংঘর্ষে জড়াইনি। সংঘর্ষে জড়ালে এখানে অনেক ক্ষতি হতো। আমাদের এই প্রোগ্রামে কেন এমন করা হলো আমরা এর বিচার চাই। এরা বিএনপি করে না। এদের কোনো পদ-পদবি নেই। এরা ফজলুর রহমানের গ্রুপ করে।
বিএনপির প্রবীণ কর্মী আব্দুল খালেক বলেন, এটাতো বিএনপির মঞ্চ, তারেক জিয়ার মঞ্চ, এই মঞ্চটাই ভেঙে দিল বিএনপির নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগের পতন হয়েছে উচ্ছৃঙ্খলতার কারণে আর এই উচ্ছৃঙ্খলতাই আবার শুরু হয়েছে। প্রবীণ কর্মী হিসেবে তারেক জিয়ার কাছে একটা কথা বলতে চাই, কোনো উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তিকে যেন এখানে মনোনয়ন দেওয়া না হয়।
বিএনপি নেতা জসীম উদ্দিন বলেন, আমরা কোনোদিন এদের বিএনপি করতে দেখিনি। তারা সবাই ৫ আগস্টের পরের বিএনপি এবং ফজলুর রহমানের গ্রুপ করে। আমরা তো অন্য কোনো দলের প্রোগ্রাম করিনি। আমরা বিএনপির প্রোগ্রাম করতে চেয়েছি। তাহলে কেন এভাবে হামলা করে মঞ্চ ভাঙা হবে।
কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান ভূঞা বলেন, বিএনপির জন্মের পর থেকে এমন ন্যাক্কারজনক সন্ত্রাসী ঘটনা এখানে কোনো দিন ঘটেনি। ফজলুর রহমান এর আগেও এখানে বিএনপি থেকে মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করেছে আবারও সে প্রার্থী হয়েছে। প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দলেই ১০/১২ জন প্রার্থী থাকতে পারে। ফজলুর রহমানের বক্তব্য হলো- এখানে আর কেউ মনোনয়ন চাইতে পারবে না, সে একাই মনোনয়ন চাইবে, একাই প্রার্থী থাকবে। অন্য কেউ মনোনয়ন চাইলে বা প্রার্থী হলে, প্রোগ্রাম করতে গেলেই তার ওপরে হামলা করবে। আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
সাবেক জেলা প্রশাসক ও বিএনপি নেতা আব্দুর রহিম মোল্লা বলেন, ৩১ দফা বাস্তবায়নে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি এই এলাকায় বিএনপির মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা কিছু আওয়ামী সন্ত্রাসীসহ বাকশালী ফজলুর রহমানের কিছু লোকজন ভাঙচুর সম্পন্ন করেছে। শুধু ভাঙচুর নয় বিএনপি নেতাকর্মীরা যেন প্রোগ্রামে আসতে না পারে সে জন্য রাস্তাঘাটে ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে। মারপিট করেও বিএনপি নেতা রুবেলসহ বেশ কয়েকজনকে আহত করেছে। ফজলুর রহমান এ অঞ্চলে একটি বিতর্কিত নাম। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে অনুরোধ করছি, বিএনপির মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা আওয়ামী বাকশালির লোক ফজলুর রহমানকে বহিষ্কার করা হোক।
অভিযোগের বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান বলেন, আমার কোনো লোক নাই। তারা সবাই দলের লোক। আমি এই বিষয়ে কোনো কিছু বলতে পারব না। থানা কমিটিকে জিজ্ঞেস করেন।
আলোচনা সভায় কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান শিকদার, জেলা বিএনপির সাবেক প্রচার সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা সালাহ উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন