শুষ্ক মৌসুম এলেই মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের হাওর-বাঁওড়, খাল-বিল নদী-নালার পানি শুকিয়ে যায়। এর ফলে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভর করতে হয় এ এলাকার মানুষের। কিন্তু এখন ভূগর্ভস্থ পানির স্তরও নিচে নেমে গেছে। এতে নলকূপ থেকেও উঠছে না পানি। ফলে তীব্র হয়েছে সুপেয় পানির সংকট।
সম্প্রতি উপজেলার পতনঊষার, মুন্সীবাজার, রহিমপুরসহ কয়েকটি ইউনিয়নে অনেক নলকূপে পানি উঠছে না বলে জানিয়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে শুষ্ক মৌসুমের দুই থেকে তিন মাস বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দেয়।
এ সময়টায় অগভীর নলকূপ থেকে পানি পাওয়া যায় না। যাদের নলকূপ ৪০০ থেকে ৫০০ ফুট গভীর, তারা নিয়মিত পানি পান। আর যেসব নলকূপ ৫০ থেকে ১৩০ ফুট গভীর, এসব থেকে পানি পাওয়া যায় না। ব্যাপকভাবে পানির অপচয়, বোরো ধান আবাদ বেড়ে যাওয়া, খাল-বিল, পুকুর শুকিয়ে ফেলা, অপরিকল্পিতভাবে নলকূপ স্থাপনসহ বিভিন্ন কারণে পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এ সংকট বৈশাখ মাস পর্যন্ত থাকে।
শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিন উপজেলার পতনঊষার, মুন্সীবাজার ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, নলকূপ থেকে পানি না পাওয়ার কারণে স্থানীয়রা বেশ ভোগান্তিতে পড়েছেন। পাশের বাড়ি বা দূরবর্তী জায়গা থেকে পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে।
নলকূপে পানি না পাওয়ার বিষয় উল্লেখ করে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছেন। এর মধ্যে কে আর রাসেল নামের একজন বলেন, আমাদের পশ্চিম সোনারগাঁও এলাকায় একদম পানি পাওয়া যাচ্ছে না। একাধিক ডিপ টিউবওয়েলের কারণে এ অবস্থা। পানির জন্য হাহাকার হচ্ছে।
স্থানীয় সংবাদকর্মী হিফজুর রহমান তুহিন বলেন, এলাকায় একাধিক ডিপ টিউবওয়েল থাকার কারণে চাপ টিউবওয়েলে (অগভীর নলকূপ) পানি উঠছে না। ব্যবহারের পানি ও বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকটে দুর্ভোগ বেড়েছে। এতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই।
পতনঊষার ইউনিয়নের রশিদপুর গ্রামের মাস্টার নুরুল ইসলাম হারুন বলেন, আমাদের এলাকায় প্রায় ১০০ পরিবারের নলকূপে পানি আসে না। আমার দুটি নলকূপ আছে, একটি ১৬০ ফুট আর একটি ১৩০ ফুট গভীর। এখন দুটি নলকূপেই পানি আসে না। অনেক কষ্ট করে পানি সংগ্রহ করতে হয়।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা সজিব আহমেদ কালবেলাকে বলেন, শুষ্ক মৌসুম এলেই এ সমস্যা হয়। আসলে বোরো মৌসুমে সেচ দিয়ে পানি তোলার কারণে পানির স্তর নেমে যায়। এ কারণে অগভীর নলকূপগুলো থেকে পানি পাওয়া যায় না।
মৌলভীবাজার জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. খালেদুজ্জামান কালবেলাকে বলেন, আসলে বছরের এ সময়টায় পানির গভীরতা কমে যায়, এ জন্য অগভীর অনেক নলকূপে পানির সংকট দেখা যায়। এসব নলকূপ ব্যক্তিগতভাবে বসানো হয়েছে। তবে সরকারিভাবে যেসব নলকূপ বসানো হয়েছে, সেগুলোয় পানির সংকট দেখা দেওয়ার কথা নয়।
মন্তব্য করুন