জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা রোগীদের অস্থায়ী ঠিকানা নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট কেন্দ্র (আইসিইউ)। সেখানে রোগীর স্বজনদেরও প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত। ইচ্ছা হলেই অসুস্থ প্রিয়জনকে দেখার সুযোগ নেই। আইসিইউর বন্ধ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষায় থাকতে হয় উদ্বিগ্ন স্বজনদের। তাদের কথা মাথায় রেখে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তৈরি করেছে ‘আইসিইউ বুক কর্নার’।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রোগীর স্বজনদের মানসিক চাপ কমাতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি জ্ঞান আহরণেও সহায়ক হবে আইসিইউ বুক কর্নার। এখানে আছে বিভিন্ন লেখকের ৫০টির বেশি বই। রয়েছে বিভিন্ন ম্যাগাজিন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, ‘আইসিইউর চিকিৎসক, নার্সিং কর্মকর্তা, টেকনোলজিস্টরা বই দিয়ে বুক কর্নারটি সমৃদ্ধ করেছেন। আইসিইউতে থাকা রোগীর স্বজনদের এমনিতেই এক কঠিন সময় পার করতে হয়। উদ্বেগ থাকে, থাকে মানসিক চাপ। এসব বিষয় ভেবেই বুক কর্নারটি করা হয়েছে।
আইসিইউ বুক কর্নারে বসে বই পড়ছিলেন সাব্বির ইসলাম। তিনি জানান, কয়েক দিন ধরেই তার একজন স্বজন আইসিইউতে রয়েছেন। সেই স্বজনের শারীরিক অবস্থা এখন একটু ভালো। তার খোঁজখবর রাখতে হয়। তাই এখানেই কাটে দিনের বেশিরভাগ সময়। এ সময়টা অলস বসে না থেকে বই পড়ছি। ভালোই লাগছে।
আরেক ব্যক্তি বলেন, এমন উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। পড়াশোনার বিকল্প নেই। এখন কেউ বই পড়তে চায় না। এ তালিকায় আমিও আছি। তবে অনেক দিন পর এখানে বসে একটি বইয়ের কয়েক পাতা পড়লাম। ভালোই লাগল, সময়ও কাটল ভালো।
এই আইসিইউ বুক কর্নারটি চালু হয়েছে গত মাসে। রামেক হাসপাতালের আইসিইউ প্রধান ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘২০১১ সালে যখন রামেক হাসপাতালে আইসিইউ শুরু করি, তখন থেকেই আমার ইচ্ছা ছিল আইসিইউর বাইরে অপেক্ষারত স্বজনদের জন্য একটি মানসম্মত বসার ব্যবস্থা করা। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কৃপায়, এ মাসেই নতুন আইসিইউ কমপ্লেক্সের নির্মাণাধীন অংশে সেটা করা সম্ভব হয়েছে।’
তিনি আরও লেখেন, ‘এখানে অনেককেই দীর্ঘ সময় অবস্থান করতে হয়, সেজন্য ওখানে একটি বই কর্নার করা হয়েছে। আইসিইউর সব চিকিৎসক, নার্সিং কর্মকর্তা, টেকনোলজিস্ট কমপক্ষে একটি করে বই দান করে এটি সমৃদ্ধ করেছেন। সেখানে বসে আইসিইউতে ভর্তি রোগীর স্বজনদের বই-ম্যাগাজিন পড়ার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের সরকারি হাসপাতালে রোগীর স্বজনদের জন্য বিশ্রামকক্ষে বই পড়ার সুযোগ অন্য কোথাও আছে কিনা, আমার জানা নেই। আমি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, আমাদের রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহম্মেদ স্যারকে, উনার সহায়তা ও সমর্থন ছাড়া আমার এ ইচ্ছাটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হতো না। অহেতুক গল্প-মোবাইল ব্যবহার না করে সবাই বই পড়বেন, নিজে সমৃদ্ধ হবেন এটা প্রত্যাশা করি।’
রামেক হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. শংকর কুমার বিশ্বাস কালবেলাকে বলেন, ‘আমাদের আইসিইউ প্রধান ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল স্যারের পরিকল্পনায় ও পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহম্মেদের দিকনির্দেশনায় এ বই কর্নারটি করা হয়েছে। এখানে রোগীর স্বজনরা অলস সময় না কাটিয়ে কিছু সময় বই পড়ে জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন।’
মন্তব্য করুন