প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে সুনসান নীরবতা। নেই কোনো পর্যটক। লোক সমাগম না থাকায় হোটেল-রেস্টুরেন্টসহ অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। এ কারণে প্রায় ৭০-৮০ শতাংশ মানুষ কর্মহীন।
এদিকে সরকারি বিধিনিষেধের কারণে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে জাহাজ চলাচল ও ট্যুরিস্ট যাওয়া আসা বন্ধ রয়েছে। কিন্তু টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনের স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য নৌযান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
টেকনাফ কাযয়ুকখালী ঘাটের লাইনম্যান মো. জুবায়ের বলেন, আমাদের ঘাট থেকে এখন প্রতিদিন ৩টি ট্রলার যাওয়া আসা করে সেন্টমার্টিনে। আগে তেমন যাত্রী দেখা যেত না। এখন পর্যটকবাহী জাহাজ বন্ধ হওয়ায় যাত্রীদের ভিড় হচ্ছে এই ঘাটে।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে সেন্টমার্টিনের এক যাত্রী বলেন, সুযোগ বুঝে ট্রলারের মাঝিরা অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে। আগে যেখানে জনপ্রতি ২৫০ টাকা নেওয়া হতো, এখন সেখানে ৩০০ টাকা করে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।
দ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দারা সেন্টমার্টিনে পর্যটন নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান। তারা জানান, সেন্টমার্টিনের পরিবেশ রক্ষায় পর্যটন নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত জরুরি। তবে ৯ মাসের সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা স্থানীয়দের জীবন-জীবিকার ওপর গভীর প্রভাব ফেলবে। দ্বীপের সাড়ে ১০ হাজার মানুষের অধিকাংশই পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল এবং মৌসুমি আয় থেকেই তাদের সারা বছরের জীবনযাত্রা চলে। দীর্ঘমেয়াদি নিষেধাজ্ঞার ফলে তাদের অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা তীব্রতর হবে।
এদিকে সেন্টমার্টিনে পর্যটকদের আনাগোনা কমে যাওয়ায় ক্ষতির সম্মুখীন নানা পেশার জনসাধারণ। দ্বীপটির স্থানীয় বাসিন্দারা মূলত চারমাস আয় রোজগার করে বারমাস জীবনযাপন করত। আর সেখানে পর্যটক সীমিতকরণ ও দুইমাস সীমাবদ্ধতা করে দেওয়ায় অনিশ্চয়তার মধ্যে জীবনযাপন করছে দ্বীপটির স্থানীয় জনসাধারণ।
সেন্টমার্টিনের শুঁটকি ব্যবসায়ী আবুল মঞ্জুর বলেন, ধারদেনা করে দোকানে বিভিন্ন জাতের শুঁটকি তুলেছি। দ্বীপে বিধি নিষেধের কারণে এখন পর্যটকশূন্য। কী করে ধারদেনার এত টাকা পরিশোধ করব ভেবে পাচ্ছি না। দোকান আপাতত বন্ধ করে রেখেছি। এখন বেকার সময় কাটাচ্ছি। দ্বীপে পর্যটক না আসলে আমরা চলতে পারি না। আমরা যারা মাছের ব্যবসা করি সব মাছ পর্যটকদের কাছে বিক্রি করি। স্থানীয়দের কাছে শুঁটকি মাছের চাহিদা কম।
মারমেইড রিসোর্টের পরিচালক মাহবুব আলম বলেন, হোটেল বন্ধ, পর্যটক না আসলে হোটেলে থাকার মতো লোকজন নেই। দ্বীপের আরও অন্যান্য হোটেলও বন্ধ রয়েছে। দ্বীপের অনেক যুবক এখন কর্মহীন সময় পার করছেন।
এ বিষয়ে সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, সেন্টমার্টিনের বাজারসহ প্রতি সাগরের চারপাশের বিচ পয়েন্টে আগে পর্যটকসহ স্থানীয় বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষে ভরপুর ছিল। এখন এক ধরনের সুনসান নীরবতা। দ্বীপে পর্যটক না থাকায় হোটেল-রেস্তোরাঁসহ অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ। ফলে বেকার সময় পার করছেন কর্মজীবী মানুষ।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান হোসাইন বলেন, ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সেন্টমার্টিনগামী জাহাজগুলো চলাচলের অনুমতি ছিল। এরপর আর পর্যটকবাহী জাহাজ সেন্টমার্টিনে চলাচল করতে দেওয়া হবে না। যদি সরকার ভ্রমণের সময় বাড়ায়, তখন নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সেন্টমার্টিনের বিষয়ে জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ মোহাম্মদ এহসান উদ্দিন বলেন, সেন্টমার্টিনের বাসিন্দারা যে আবেদনটি করেছিল সেটি উপদেষ্টার হাতে। স্থানীয় পর্যায়ের কোনো সিদ্ধান্ত আমাদের হাতে নেই। যদি সরকারি পর্যায়ে কোনো বরাদ্দ আমাদের হাতে আসে তা আমি তাদের কাছে পৌঁছে দেব। সেন্টমার্টিনের জন্য যদি সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ভ্রমণের সময় বাড়ায়, তখন নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন