সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:০৬ পিএম
আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:১০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

পর্যটন শিল্পে সম্ভাবনাময় মান্দারবাড়িয়া সমুদ্রসৈকত

নয়নাভিরাম সুন্দরবনের বঙ্গোপসাগরের তীর ধরে জেগে ওঠা এক সমুদ্র্রসৈকত মান্দারবাড়িয়া। ছবি : কালবেলা
নয়নাভিরাম সুন্দরবনের বঙ্গোপসাগরের তীর ধরে জেগে ওঠা এক সমুদ্র্রসৈকত মান্দারবাড়িয়া। ছবি : কালবেলা

বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণ-পশ্চিমের জনপদ সুন্দরবনঘেঁষা উপজেলা সাতক্ষীরার শ্যামনগর। নয়নাভিরাম সুন্দরবনের বঙ্গোপসাগরের তীরঘেঁষে জেগে ওঠা এক সমুদ্রসৈকত মান্দারবাড়িয়া। যার একপাশে বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনভূমি সুন্দরবন, অপর পাশে বঙ্গোপসাগরের অতল জলরাশির খেলা। প্রকৃতির নিবিড় ছোঁয়ায় বেড়ে ওঠা আট কিলোমিটার দীর্ঘ এ বেলাভূমি এখনো যেন অনেকটাই থেকে গেছে অনাবিষ্কৃত। দুর্গম যোগাযোগব্যবস্থা, অবকাঠামোগত উন্নয়নের ঘাটতি, সরকারি প্রচার-প্রসারের উদ্যোগহীনতা ইত্যাদি নানাবিধ কারণে দীর্ঘদিনেও সেভাবে জনসম্মুখে আসেনি দৃষ্টিনন্দন দীর্ঘ এ সমুদ্রসৈকতটি।

মান্দারবাড়িয়া সমুদ্রসৈকত একদিকে যেমন হয়ে উঠতে পারে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে অবহেলিত উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যবদলের হাতিয়ার, অন্যদিকে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে রাখতে পারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। দেশের পর্যটনশিল্পকে সমৃদ্ধ করার সব ধরনের উপকরণ বিদ্যমান অপরূপ সৌন্দর্যের এ লীলাভূমি। একইসঙ্গে বনভূমি এবং জলাভূমির সহাবস্থান যেন মান্দারবাড়িয়াকে দিয়েছে সৌন্দর্যের অনন্য এক উচ্চতা। যা সহজেই যে কোনো পর্যটককে বিমোহিত করতে সক্ষম।

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের নীলডুমুর ঘাট থেকে এর দূরত্ব মাত্র ৭০ থেকে ৭৫ কিলোমিটার। যাত্রাপথে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক দৃশ্য, আঁকাবাঁকা নদী, চির সবুজ গোলপাতা, কেওড়া, গেঁওয়া, গরান, সুন্দরীসহ বিভিন্ন প্রকারের গাছ, হরিণ, বানর, শূকর, কুমির, রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ নানা প্রজাতির জীবজন্তু আর বিভিন্ন প্রজাতির পাখির কিচির মিচির সুরেলা ডাক পর্যটকদের দৃষ্টি কাড়ে। সুন্দরবনের গা ছমছমে ভয়ংকর পরিবেশ যে কোনো ভ্রমণপিপাসু মানুষকে দিতে পারে ভ্রমণের সর্বোচ্চ আনন্দ। দেখা যাবে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত। সাগরের দিগন্ত বিস্তৃত জলরাশি এবং জঙ্গলের গাছ-গাছালির সবুজ বেষ্টনী মিলেমিশে তৈরি করেছে যেন এক রূপকথার রাজ্য। যে কোনো প্রকৃতিপ্রেমী ভ্রমণপিপাসু ব্যক্তিই চাইবে হারিয়ে যেতে এমন এক রাজ্যে।

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের মূল উপাদান এ দেশের প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পদ। আর এ শিল্পকে সমৃদ্ধ করতে প্রয়োজন এসব উপাদানকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো। দেশের পর্যটন শিল্পকে আরও সমৃদ্ধশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে মান্দারবাড়িয়া।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, বিশ্বব্যাপী উপকূলীয় পর্যটন, পর্যটন বাজারের বৃহত্তম অংশ সারা বিশ্বের জিডিপির ৫ শতাংশ এবং মোট কর্মসংস্থানের ৬/৭ শতাংশ। ১৫০টি দেশে এটি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী প্রথম পাঁচটি খাতের মধ্যে একটি, যা মান্দারবাড়িয়ার অপার সম্ভাবনাকে ইঙ্গিত দেয়। যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে মান্দারবাড়িয়াকে একটি পূর্ণাঙ্গ উপকূলীয় পর্যটনকেন্দ্রে রূপ দিয়ে টেকসই পর্যটন সৃষ্টি করতে পারলে সেটি যেমন কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য দূর করতে সক্ষম হবে, একইভাবে দেশের অর্থনৈতিক খাতেও সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারবে।

দেশের অন্যান্য উপকূলীয় পর্যটনকেন্দ্রগুলো থেকে যে পরিমাণ আয় হয়, সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে মান্দারবাড়িয়া থেকেও একই পরিমাণ আয় সম্ভব। এ ছাড়া উপকূল ঘিরে মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ এবং পায়রা বন্দরের সঙ্গে সারসরি সংযোগ সড়ক সৃষ্টির মতো পরিকল্পনা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থা অনেক বেশি সহজ করে তুলবে, যা দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির এক নতুন দ্বার উন্মোচন করতে সক্ষম।

মান্দারবাড়িয়াকে টেকসই পর্যটনকেন্দ্র সৃষ্টির মাধ্যমে সারা বছর পানিবন্দি থাকা দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান ঊর্ধ্বগামী করা সম্ভব। প্রচুর কর্মসংস্থানের মাধ্যমে এ অঞ্চলের বেকারত্ব দূরীকরণ করাও সম্ভব হবে। সৈকতভিত্তিক বিনোদন এবং পর্যটন, সমুদ্রের কাছে পর্যটন কার্যক্রম, ইয়টিং, মেরিনাসহ নটিক্যাল বোটিংয়ের মাধ্যমে একদিকে যেমন মান্দারবাড়িয়ার প্রসার বাড়ানো সম্ভব, তেমনিভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন দ্রুতগামী হবে। সৃষ্টি হবে ‘কমিউনিটি বেজড ট্যুরিজমের’। যা হবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নের এক নতুন সূচনা। সরকারি বিনিয়োগের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাগুলোকেও বিনিয়োগের সুযোগ প্রদান এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নবৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।

সাতক্ষীরা পশ্চিম সুন্দরবন রেঞ্জের সহকারী বনকর্মকর্তা মশিউর রহমান কালবেলাকে বলেন, মান্দারবাড়িয়া সমুদ্রসৈকত পশ্চিম সুন্দরবন রেঞ্জের মধ্যে অবস্থিত সাগরের কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের অভয়ারণ্য অঞ্চল। এখানকার বিদ্যমান সমস্যার সমাধান ও সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে পরিকল্পিতভাবে উপযুক্ত পর্যটনবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারলে মান্দারবাড়িয়া সমুদ্রসৈকত হয়ে উঠবে কর্মসংস্থান, বিনিয়োগ ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম প্রধান উৎস। ফলে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা সম্ভব। এজন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘মুজিব পরিবারকে বাংলাদেশের মানুষ রাজনীতিতে স্থান দেবে না’ 

ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখার পরামর্শ দিলেন জাতীয় পার্টির কাজী মামুন

তারেক রহমানের নেতৃত্বে হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে : টিপু

গ্রামবাসীর চাঁদায় পড়াশোনা, তিনি এখন ৫৮ হাজার কোটির মালিক

রুশ বাহিনীর কাছে বিক্রি হয়ে যুদ্ধে প্রাণ হারান সিংড়ার যুবক

রাজনৈতিক বিরোধ থাকা সত্ত্বেও বিরল ঐক্য দেখাল পাকিস্তান

৫ মাসে বন্ধ হয়েছে ৫২ কারখানা, বন্ধের পথে ৮

আ.লীগের কর্মসূচি নিয়ে শেখ হাসিনার নামে বিবৃতি প্রচার, যা জানা গেল

ঢাবি ছাত্রদের আবাসনের জন্য ‘জুলাই শহিদ স্মৃতি ভবন’ উদ্বোধন

বৈষম্যবিরোধীর কমিটি থেকে ছাত্রদলের ৬ কর্মীর একযোগে পদত্যাগ

১০

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ কমিউনিটি প্রেস ক্লাবের নতুন কমিটি গঠন

১১

রাষ্ট্র সংস্কারের মূল ভিত্তি ৩১ দফা : ব্যারিস্টার মানিক

১২

বগুড়ায় ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার

১৩

সুরভির ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

১৪

প্রেমে সাড়া না পেয়ে স্কুলছাত্রীকে অপহরণ

১৫

মুন্সীগঞ্জে পুলিশ-ডাকাত দলের গুলি বিনিময়, আহত ২

১৬

বিবৃতি প্রত্যাখ্যান, তিতুমীর শিক্ষার্থীদের অনশন ‘চলবে’

১৭

বাকাএভের সভাপতি মাহবুব আলম, মহাসচিব তানভীর আহমেদ

১৮

সাইফউদ্দিন ইস্যুতে আকুকে সহযোগিতার আশ্বাস রংপুরের

১৯

গুলশান-১ সড়ক অবরোধ করলেন তিতুমীরের শিক্ষার্থীরা

২০
X