জুলাই অভ্যুত্থানে হামলার শিকার অন্ধ অন্তরের খোঁজ নেয়নি কেউ। সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আন্দোলনে আহতদের আর্থিক সহায়তা মিললেও বাদ পড়েছেন ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবিকানির্বাহ করা অন্তর মিয়া।
অন্তরের (৩০) বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলার থানাহাট ইউনিয়নের সবুজ পাড়া এলাকায়। স্ত্রী মমতাজ বেগম ও দুই ছেলেকে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে থাকেন তিনি।
জানা গেছে, ২ আগস্ট উপজেলার সরকারপাড়া মসজিদ থেকে জুমার নামাজের পর একদফা দাবিতে একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি কিছু দূর এগোনোর পর গতিরোধ করে দেয় পুলিশ। পরে মিছিলটি উপজেলার এলএসডি মোড়ে গিয়ে অবস্থান নেয়। এ সময় ছাত্রপ্রতিনিধিরা বক্তব্য দেওয়ার একপর্যায়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অতর্কিত হামলা করেন। সে সময় বেশ কয়েকজন আহত হন। এর মধ্যে ছিলেন অন্ধ অন্তরও। ঘটনার পর তিনি বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা নেন।
সম্প্রতি চিলমারী উপজেলা প্রশাসন থেকে জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের মধ্যে ৭ জনকে ১৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে বলে জানা গেছে৷
অন্তর মিয়া বলেন, আলেমদের ওপর জুলুম-নির্যাতনের কারণে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আন্দোলনে নিজ থেকেই অংশ নিই। কিন্তু সেদিন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মিছিলে কাঠের লাঠিসোঁটা নিয়ে আমাদের ওপর হামলা ও মারধর করে। আমার ব্যবহৃত চলার জন্য লাঠি কেড়ে নিয়ে আমাকেও বেধড়ক মারধর করেন। আমি কয়েকদিন অসুস্থ থাকায় বাড়ি থেকে বের হতে পারিনি।
তিনি বলেন, শুনেছি সরকার থেকে অনেকেই সহায়তা পেয়েছে। কিন্তু আমাকে কেউ সহযোগিতা করেনি। আমার নিজস্ব কোনো জায়গা, জমি-বাড়ি কিছু নেই। আমি শ্বশুরবাড়িতে থাকি।
অন্তরের শাশুড়ি শাহেদা বেগম বলেন, জামাই চোখে দেখে না, অন্ধ। আমার মেয়েও অসুস্থ। সেও চলাফেরা করতে পারে না। আমাকে সব দেখাশোনা করা লাগে। জামাই আহত হলে ধারদেনা করে চিকিৎসা করিয়েছি৷
আন্দোলনে অংশ নেয়া সাজ্জাদ হোসেন নামে একজন বলেন, সেদিনের সেই আন্দোলনে আমিও ছিলাম। সেদিন অন্তরকেও দেখিছিলাম মিছিল করতে। হঠাৎ আওয়ামী লীগের লোকজন এসে মারধর করে। তবে বেশি কষ্ট হয়েছে যিনি চোখে দেখেন না, লাঠি ব্যবহার করে চলাচল করে ভিক্ষা করে খান- সেই লাঠি দিয়ে তাকেই মারা হয়েছিল।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চিলমারীর ছাত্রপ্রতিনিধি মেহেদী হাসান শান্ত জানান, গণঅভ্যুত্থানে চিলমারী উপজেলায় যারা যারা আন্দোলনে গিয়ে আহত হয়েছিলেন তাদের সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। তবে সেখানে অন্তরের নাম বাদ পড়েছিল। বিষয়টি নিয়ে ইউএনওর সঙ্গে কথা বলেছি। পরবর্তীতে কোনো ধরনের সহায়তা এলে যেন অন্তরকে দেওয়া হয় সে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
চিলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সবুজ কুমার বসাক জানান, সরকারিভাবে যাদের সহায়তা দেওয়া হয়েছিল সেটি সিভিল সার্জন অফিসের তালিকা অনুযায়ী দেওয়া হয়েছে। তারপরও অন্য কোনোভাবে যদি সহযোগিতা করা যায় সেটা দেখা যাবে।
মন্তব্য করুন