ব্যবসায়ী ও জনগণের কথা চিন্তা করে চৌদ্দগ্রাম বাজার এলাকায় পৌরসভা থেকে নির্মাণ করা হয় চারটি পাবলিক টয়লেট। জরুরি প্রয়োজনের চাপ সারতে জনগণের টাকায় নির্মিত সেই পাবলিক টয়লেটগুলো এখন পাবলিকের নয়, কোনোটিতে পালন হয় ছাগল, কোনোটির কলাপসিবল গেটে ঝুলছে তালা, করা হচ্ছে সবজি চাষ। পাবলিক টয়লেটগুলো বন্ধ থাকার কারণে সাধারণ মানুষ প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাজারের অলিগলি পরিবেশ দূষিত করছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পৌরসভা আটগ্রাম রাস্তায় মাথায় মহাসড়কের পাশে নির্মিত টয়লেটটিতে ঝুলছে তালা। ২০২০ সালে নির্মাণের পর কখনও সেটি খোলা দেখা যায়নি। পাশের ব্যবসায়ীরা বলছেন এটি এখানে কেন নির্মাণ করা হয়েছে তা বোধগম্য নয়।
উপজেলা পশু হাসপাতাল ও খাদ্য গুদাম সংলগ্ন পাবলিক টয়লেটটির মহিলা অংশে ছাগল পালন করেছেন এক হোটেল ব্যবসায়ী। পুরুষ অংশের কলাপসিবল গেটে ঝুলছে ছোট একটি তালা। এটা বন্ধ কি না জানতে চাওয়ায় পাশের হোটেল ব্যবসায়ী চাবি এগিয়ে দিয়ে বললেন ১০ টাকা দেন।
ইজারা নিয়েছেন কি না জানতে চাইলে ব্যবসায়ী বললেন, 'ইজারা নিয়েছেন বাবুল নামের এক লোক। এটি আমি দেখাশোনা করি। টয়লেটের ভেতর ছাগল পালনের কথা অস্বীকার করলেন। তবে টয়লেটের সামনে দুটি বাচ্ছাসহ একটি ছাগল বেঁধে রেখেছেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গিয়ে দেখা যায় টয়লেটের ভেতরে কয়েকটি ছাগল বেঁধে রাখা হয়েছে।
পৌরসভার স্যানেটারি ইন্সপেক্টর ইমাম হোসাইন সজিব বলেন, 'পৌরসভার চারটি পাবলিক টয়লেটের মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংলগ্ন টয়লেটটি দীর্ঘদিন বেদখল ছিল। সম্প্রতি সেটি দখলমুক্ত করা হয়েছে। উপজেলা খাদ্য গুদামের পাশেরটি ও আটগ্রাম রাস্তার মাথায় মহাসড়কের পাশেরটি বন্ধ রয়েছে।' খাদ্য গুদামের পাশেরটিতে ছাগল পালন হয় শুনে বললেন 'খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
এ বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম পৌরসভা উপ-প্রকৌশলী নূর ইসলাম মিলন জানান, ২০-২১ সালে উপজেলা জনস্বাস্থ্য অফিস ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিলে চৌদ্দগ্রাম পৌরসভা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফাতেমা ট্রেডার্সের মাধ্যমে ২০টি টয়লেট ও ২৯টি ড্রেন নির্মাণ করা হয়। ইজারাদার বাবুল এবং খোরশেদ আলমের মাধ্যমে চৌদ্দগ্রাম বাজার এলাকায় চারটি টয়লেট পরিচালিত হচ্ছে।
এ বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসের দায়িত্বে থাকা নজরুল ইসলাম জানান, ২০১৯-২০ সালে জনস্বাস্থ্যের একক ৮০ লাখ টাকা অর্থায়নে চৌদ্দগ্রাম পৌরসভা ২০টা টয়লেট ২৯ ড্রেন নির্মাণ করে, যা ২১ সালে পৌরসভাকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
চৌদ্দগ্রাম খাদ্য গুদাম সংলগ্ন পাবলিক টয়লেট থেকে হাজত সেরে বেরিয়ে আসা ব্যবসায়ী আবুল খায়ের জানান, '১০ টাকা টয়লেটের ভেতরে ঢুকলেও স্যাঁতসেঁতে অবস্থা ও ছাগলের দুর্গন্ধে দ্রুত বেরিয়ে এলাম। তিনি আরও বলেন এটা কি পাবলিক টয়লেট নাকি ছাগলের খামার!'
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে ব্যবসায়ী হায়াতুন্নবী বলেন, নির্মাণের পর থেকেই এটাতে তালা মারা। টয়লেটের সামনে সব সময় কুকুর ঘুমিয়ে থাকে।
পালিকের টয়লেটের ইজারাদার সাবেক কাউন্সিলর বাবুল জানান, 'আমি ও খোরশেদ আলমসহ এলাকার চারটি টয়লেট ইজারা পেয়েছি ৭০ হাজার টাকার বিনিময়ে। কাঁচাবাজারের সামনে টয়লেটটি মানুষ ব্যবহার করে, কিন্তু বাকি তিনটি টয়লেট কেউ ব্যবহার করেনা বিধায় আমরা লোকসানে আছি। খাদ্য গুদাম সংলগ্ন টয়লেটের ভেতরে কে বা কাহারা ছাগল রাখে আমরা জানি না।'
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, 'পাবলিক টয়লেটগুলো ইজাদারের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে, পৌরসভা সেনেটারি ইন্সপেক্টরের মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জানব ইজারাদার ঠিকমতো ব্যবহার করছে কি না।'
মন্তব্য করুন