নারায়ণগঞ্জে জাপান-বাংলাদেশ গ্রুপের চেয়ারম্যান সেলিম প্রধানের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ভুইয়া দিপুর নাম বাদ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সিনেমন রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলন শেষে এক প্রশ্নের জবাবে সেলিম প্রধান এ অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর ছেলে পাপ্পা গাজীর নির্দেশে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ভুইয়া দিপুর লোকজন এই হামলা চালিয়েছে ও লুটপাট করেছে। গাজীর সব সেক্টর সে এখন নিয়ন্ত্রণ করছে। তবে এরূপ হামলার পরেও ছাত্রদল ও যুবদলের মধ্যে দুপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসেছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও কাল্পনিক। মূলত আমার জমিতে গড়ে ওঠা বিসমিল্লাহ আড়ত থেকে প্রতিমাসে ৫০ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করছে দিপু ভূইয়ার লোকজন। এ বিষয়ে প্রতিবাদ করায় আমাকে দমিয়ে রাখতে এই হামলা করেছে।
তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্টের কিছুদিন পর নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সেক্রেটারি গোলাম ফারুক খোকন আমার সঙ্গে দেখা করে। সেখানে খোকনের সঙ্গে গাজীর লোক মজিবুর, বালু হাবিবের ভাতিজা আইয়ুব একসঙ্গে বসা ছিল। এটা দেখে আমি অবাক হই। তাদের সঙ্গে কথা বলার একপর্যায়ে খোকন আমার কাছে ৫০ লাখ টাকা এককালীনসহ মাসে মাসে আরও টাকা দিতে হবে বলে জানানা। আমার জায়গা থেকে দখল সরাতে তারা এই টাকা দাবি করেন।
ভুয়া চুক্তিনামা বানিয়ে তার আড়ত থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমার ভুয়া সই যুক্ত করে গাজীর লোকজন বিগত সময়ে ভুয়া চুক্তিনামা বানিয়ে আড়তের টাকা আত্মসাৎ করছে। এ নিয়ে প্রতিবাদ করায় সাবেক মন্ত্রী গাজীর বাহিনীর লোকজন গত বছর আমার বাড়িতে হামলা করেছিল। ঠিক একই কায়দায় এবার বিএনপি নেতা দিপু ভূইয়ার লোকজন আমার বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। ৫ আগস্টের পর দিপু ভুইয়া ও খোকন সাবেক মন্ত্রী গাজীর পার্টনার হয়ে গেছে। গাজীর অলিখিত মাফিয়া সাম্রাজ্য এ দিপু ভুইয়ারা নিয়ন্ত্রণ করছে। গাজীর লোকজন এখন সব দিপু ভুইয়া ও খোকনের হয়ে কাজ করছে। রূপগঞ্জে আগে ছিল গাজী লীগ এখন হয়েছে দিপু লীগ ও খোকন লীগ।
মামলায় দিপু ও খোকনের নাম বাদ দেওয়া প্রসঙ্গে সেলিম প্রধান বলেন, আমি এই ঘটনায় মামলা করেছি। তবে মামলার এজাহারে দিপু ভুইয়া ও খোকনের নাম আসেনি। কোন অদৃশ্য ক্ষমতার বলে পুলিশ তাদের নাম বাদ দিয়েছে তা আমার জানা নেই। একইভাবে গত বছর সাবেক মন্ত্রী গাজীর নির্দেশে তার লোকজন আমার বাড়িতে হামলা চালিয়েছিল। সেই ঘটনায় মামলা করতে গেলে গাজী ও পাপ্পা গাজীর নাম আসামিদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। তবে এবারের ঘটনায় আমি আইনি ব্যবস্থা নেব। আমি সবার কাছে বিচার চাই।
জানা গেছে, সেলিম প্রধানের বাড়িতে হামলার ঘটনায় বৃহস্পতিবার ওই ভুক্তভোগী নিজে বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় ডা. মজিবুর রহমান ও আইয়ুব আলীসহ ৫৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া অজ্ঞাত আরও ৪০০- ৫০০ জনকে আসামি করা হয়। তবে সেই এজাহারের তালিকায় বিএনপি নেতা দিপু ভুইয়া ও খোকনের নাম নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মেহেদী ইসলাম বলেন, মামলার বাদী যেভাবে আসামিদের নাম দিয়েছে সেভাবে আমরা দিয়েছি। কারও নাম বাদ দেওয়া হয়নি।
তিনি আরও বলেন, এই হামলার ঘটনায় শ্যুটার অলি নামে এক আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সে মামলার এজাহার নামীয় আসামি। ওই দিন হামলার সময়ে প্রকাশ্যে তাকে গুলি করতে দেখা গেছে। ভিডিও দেখে তাকে শনাক্ত করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) দুপুরে বিএনপির নেতা মোস্তাফিজুর রহমান ভুইয়া দিপুর নির্দেশে তার লোকজন রূপগঞ্জের সাওঘাট এলাকায় সেলিম প্রধানের বাড়িতে হামলা চালায় ও অগ্নিসংযোগ করে। এতে গুলিবিদ্ধসহ ৫ জন আহত হন। সেলিম প্রধানের বাড়িতে থাকা ১০টি মোটরসাইকেল ও একটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয় ও লুটপাট করা হয়।
মন্তব্য করুন