বাইরে থেকে দুধসহ রান্না করা কোনো খাবার কারাবন্দিদের দেওয়ার নিয়ম নেই। কেউ দিতেও পারেন না। কিন্তু ডিআইজি প্রিজন টিপু সুলতান মানছেন না নিয়ম। প্রায় ১০ মাস ধরে নিয়মিত তার খামার থেকে গড়ে ২০ লিটার করে দুধ কারা ক্যানটিনে সরবরাহ করা হয়। বাইরে খুচরামূল্য ৮০ টাকা লিটার, পাইকারি দর ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। ডিআইজি প্রিজন কারাগারে বিক্রি করছেন ১০০ টাকা দরে।
কারাবিধি অনুযায়ী, কোনো কারা কর্মকর্তা-কর্মচারী বন্দিদের কাছে কোনো সামগ্রী বিক্রি কিংবা ভাড়া দিতে পারেন না। এ ছাড়া এভাবে তরল দুধ সরবরাহ করা বন্দিদের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে বলে জানিয়েছেন সাবেক কারা কর্মকর্তারা।
কারাবিধিতে উল্লেখ রয়েছে, কারাগারের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী কিংবা তার বিশ্বস্ত বা নিযুক্তিয় কোনো ব্যক্তি বন্দিদের কাছে কোনো দ্রব্য বিক্রয় বা ভাড়া দিতে পারেন না। কোনো বন্দির কোনো দ্রব্য বিক্রয় বা ভাড়া প্রদান থেকে অর্জিত সুবিধা বা কোনো টাকা গ্রহণ অথবা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো বন্দির সঙ্গে অন্যান্য ব্যবসায়িক কারবার করবেন না।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রতিদিন সকাল ১০টার পর ভ্যানে করে ড্রামভর্তি দুধ কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। ডিআইজি প্রিজনের কার্যালয়ের ভেতর থেকে একটি ভ্যান গাড়ি করে পরিচ্ছন্নতাকর্মী মো. আলমগীর ও সুরেশ চন্দ্র দাশ দুধ নিয়ে আসে।
কারাসূত্রে জানা যায়, বর্তমানে কারাগারে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বন্দিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সাবেক সংসদ সদস্য মোশাররফ হোসেন, আবু রেজা মুহাম্মদ নদভী, এম এ লতিফ, ফজলে করিম, সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস রয়েছেন। তরল দুধে কিছু মেশানো থাকলে বন্দিদের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে গড়ে পাঁচ হাজারের বেশি বন্দি থাকেন।
কাঁচা তরল দুধ বন্দিদের জন্য কারাগারে ঢোকানো বিপজ্জনক বলে মন্তব্য করে কারা অধিদপ্তরের সাবেক উপমহাপরিদর্শক শামসুল হায়দার সিদ্দিকী বলেন, কারাবিধি অনুযায়ী ডিআইজি প্রিজন নিজের খামারের দুধ বন্দীদের কাছে বিক্রি করতে পারেন না। এখনই বন্ধ না করলে যে কোনো সময় বড় অঘটন ঘটতে পারে।
কারা কর্মকর্তাদের ভাষ্য, বাইরে থেকে দুধসহ রান্না করা কোনো খাবার কারাবন্দিদের দেওয়ার নিয়ম নেই। কেউ দিতেও পারেন না। ডিআইজি প্রিজন টিপু সুলতান নিয়ম মানছেন না। প্রায় ১০ মাস ধরে নিয়মিত তার খামার থেকে গড়ে ২০ লিটার করে দুধ কারা ক্যানটিনে সরবরাহ করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কারা ক্যানটিনের কর্মকর্তারা জানান, ডিআইজি প্রিজনের খামার থেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে বাড়তি দামে দুধ কিনতে তারা বাধ্য হচ্ছেন তারা।
এ বিষয়ে সিনিয়র জেল সুপার মো. ইকবাল হোসেনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি কালবেলাকে বলেন, দুধ ভালো জিনিস। তবে যে বিষয়ে জানতে চেয়েছেন সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারছি না। আপনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।
এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম বিভাগের ডিআইজি প্রিজন টিপু সুলতানের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।
মন্তব্য করুন