মনিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:৩৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

শুধু মানুষের নয়, বাড়িটি যেন মৌমাছিরও

যশোরের মৌমাছি বাড়ি। ছবি : কালবেলা
যশোরের মৌমাছি বাড়ি। ছবি : কালবেলা

বাড়ির ছাদ, দেয়াল ও জানালায় একটি-দুটি নয়, ২০টিরও বেশি মৌমাছির চাক বসেছে। পরিবারের সদস্যদের মতোই মানুষের সঙ্গে বসবাস করছে মৌমাছি। প্রাকৃতিকভাবে বনের মৌমাছি আর পরিবারটির সদস্যদের মাঝে এই ভালোবাসার বন্ধন গড়ে উঠেছে।

এসব মৌমাছি বছরের ছয় মাস ধরে থাকে বাড়িটিতে। বাড়িটি এখন এলাকায় মৌমাছির বাড়ি হিসেবে পরিচিত। কেউ মৌমাছি দেখতে আবার কেউবা ছবি তুলতে যান বাড়িটিতে।

যশোরের মনিরামপুর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের শেখপাড়া গ্রামে ইসাহক দফাদারের বাড়িতে প্রায় ছয় বছর ধরে মৌমাছিরা বাসা বেঁধে আসছে। বাড়িটির জানালা, বারান্দা এবং ছাদের কার্নিশ সবখানেই বাসা বেধেছে মৌমাছি।

জানা গেছে, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত থাকে অত্র এলাকা। এ যেন এক মৌমাছির অভয়াশ্রম। বাড়ির ছাদ, বারান্দা ও কার্নিশে পুরো বাড়ি যেন দখল নিয়েছে তারা। এদিকে, একটু পরপর মৌচাক থেকে মৌমাছি বের হয়ে উড়ে যাচ্ছে পাশের বিভিন্ন ক্ষেত ও বাগানে। মধু সংগ্রহ করে এনে জমা করছে চাকে। এমন দৃশ্য দেখতে প্রতিদিনই জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে বাড়িতে ভিড় করছেন উৎসুক জনতা।

সরেজমিনে দেখা যায়, খানপুর ইউনিয়নের শেখপাড়া গ্রামে প্রচুর কৃষিজমি আছে। জমিতে রোপণ করা হয়েছে সরিষা। এ বাড়ির চারপাশের সরিষা ক্ষেতে প্রচুর ফুল এসেছে। সরিষার মৌসুম শেষের দিকে এখন আম ও লিচু গাছে ফুল আসা শুরু করেছে। এসব ফুল থেকেও মৌমাছিরা মধু সংগ্রহ করে।

ভবনের বিভিন্ন পাশের কার্নিশ জুড়ে সারিবদ্ধভাবে রয়েছে মৌমাছির চাক। জানালার ফাঁকা স্থান দিয়ে ঘরে আসা-যাওয়া করছে মৌমাছিরা। নিচে ছোট ছেলেমেয়েরা খেলাধুলা করছে, বাড়ির লোকজনও স্বাভাবিকভাবে ঘোরাফেরা করছে। তবে মৌমাছি কাউকেই কামড়ে দিচ্ছে না। এমনকি মৌচাকের খুব কাছে গেলেও কামড় দেয় না। পরিবারের সদস্যদের মতোই মানুষের সঙ্গে বসবাস করছে মৌমাছি। পরিবারটির সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে কয়েক লাখ মৌমাছি।

বাড়ির মালিক ইসহাক দফাদার বলেন, আশাপাশের কোনো বাড়িতে মৌমাছির দল আসে না। প্রতি বছরের আশ্বিন মাসে অতিথি হিসেবে মৌমাছি বাড়িতে আসে। ছয় মাস থেকে মধু দিয়ে তারা আবারও চলে যায়।

তিনি বলেন, ছয় থেকে সাত বছর আগে হঠাৎ বাড়ির বিভিন্ন স্থানে মৌমাছির দুটি দল এসে হাজির হয়। প্রতিবছরই এই মৌমাছির দলের আগমনের সংখ্যা বেড়েছে। এ বছর বাড়ির বিভিন্ন স্থানে ২০টি বাসা বেধেছে মৌমাছি।

বাড়ির সদস্য আনোয়ারা বেগম বলেন, মৌমাছির দল প্রায় ছয় সাত ধরে বাড়িতে এসেছে। তারা আমাদের কোনো ক্ষতি করে না। আমরা তাদের লালনপালন করে থাকি। এ বছর মৌমাছির চাক থেকে প্রথম ধাপেই ২৭ কেজি মধু সংগ্রহ করা হয়েছে।

জোহরা বেগম বলেন, মৌমাছির কারণে প্রতিদিন বাইরের লোক বাড়িতে দেখতে আসছেন। জানাজানি হওয়ায় আত্মীয়স্বজনরা মধু নিতে আসতে শুরু করেছে। অবশ্য এর আগে আমরা আশাপাশে লোকজনের কাছে মধু বিক্রি করতাম।

মৌমাছি বাড়ির সদস্য তানভীর আহমেদ বলেন, বাড়ির দ্বিতীয় তলাতে আমি থাকি। মৌমাছি কারণে দিনে কোনো অসুবিধা হয় না, তবে রাতে বাড়িতে আলো জ্বালিয়ে রাখা যায় না। কারণ রাতে আলোর সামনে এসে মৌমাছি ঘোরাঘুরি করে।

মনিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছা. মাহমুদা আক্তার বলেন, সরেজমিনে মৌমাছির বাড়িতে যাওয়া হয়নি। সেহেতু এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।

মনিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্না বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি, এটি আশ্চর্যজনক বিষয়। যে বাড়িতে এমটি হয়েছে তাদের সচেতন থাকতে হবে। মৌমাছিগুলো যেন তাদের জন্য কোনো ক্ষতির কারণ না হয়, সেদিকে নজর রাখতে হবে। যারা প্রকৃতভাবে মধু সংগ্রহকারী তাদের মাধ্যমে মধু সংগ্রহ করলে বাড়ির লোকজন নিরাপদে থাকতে পারবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বাংলাদেশে কারখানা বানাতে চায় তুরস্কের প্রতিষ্ঠান

সুড়ঙ্গ খুঁড়ে ব্যাংক ডাকাতির চেষ্টা, যুবক গ্রেপ্তার

আরব আমিরাতে বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির সম্ভাবনা

আইসিডিডিআরবিতে হাজারেরও বেশি চাকরিচ্যুতির চিঠি

সামরিক প্রধান নিহত, নিশ্চিত করল ফিলিস্তিন

ময়লার ভাগাড়ে কান্না করছিল নবজাতক, অতঃপর...

নির্বিঘ্নে সভা—সমাবেশ করার অধিকার চায় সনাতনী জাগরণ জোট

‘তোরা সমন্বয়ক’ বলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয়দের হামলা

নরসিংদীতে দুর্বৃত্তদের গুলিতে ইউপি সদস্য আহত

চাপের মুখে হাতকড়া পরলেন সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী

১০

রাজবাড়ী জেলা বারের সভাপতি বাচ্চু, সম্পাদক রাজ্জাক

১১

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নামে মিয়ানমারের ভিডিও প্রচার

১২

মেঘনা নদীতে দুগ্রুপের সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত ২

১৩

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে তারুণ্যের উৎসব উদযাপন

১৪

বনের জমি উদ্ধার করতে গিয়ে আহত ৮ কর্মকর্তা-কর্মচারী

১৫

ভারতে পাচার ১৬ কিশোর-কিশোরীকে বেনাপোলে হস্তান্তর

১৬

গাউসুল আজম মার্কেটে অস্থিরতার চেষ্টা, অভিযোগ ব্যবসায়ীদের

১৭

বিশ্ব ইজতেমার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে যা জানাল র‍্যাব

১৮

অসম্মান-মানসিক চাপে বিদ্রোহের সুর, কাঁদলেন নারী ফুটবলাররা

১৯

আন্দোলনের মুখে পঞ্চগড়ের চার বিচারকের বদলি

২০
X