লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:০০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

সাক্ষ্য না দেওয়ায় আসামি হন ঝাড়ুদার বাবুল

বাবুল হোসেন ইকবাল। ছবি : কালবেলা
বাবুল হোসেন ইকবাল। ছবি : কালবেলা

ঢাকায় পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে রাজি না হওয়ায় পৃথক হত্যা ও বিস্ফোরক মামলার আসামি করা হয় ঝাড়ুদার বাবুল হোসেন ইকবালকে। এরপর প্রায় ১৬ বছর কেটেছে কেরানীগঞ্জ আর কাশিমপুর জেলে।

এ দীর্ঘ সময় তার পরিবারে নেমে আসে অনিশ্চয়তা আর অন্ধকার। একপর্যায়ে স্ত্রীর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে নিজের জীবন থেকে চলে যেতে বলতেও বাধ্য হন।

কিন্তু একমাত্র কন্যাকে নিয়ে স্ত্রী নিলা আঁকড়ে থাকেন স্বামীর ভিটেমাটিতে। একদিন বাবুল ফিরবেন—সেই প্রত্যাশায় গুনতে থাকেন দিন। অবশেষে সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে ফ্যাসিবাদী সরকার পালিয়ে যাওয়ায় পর। গত ১৯ জানুয়ারি বাবুলসহ ১২৬ জনকে জামিন দেন আদালত। ২৩ জানুয়ারি তারা কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্ত হন।

কারামুক্ত হয়ে মুক্ত নিঃশ্বাস ছাড়লেও জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া ১৬ বছরের দীর্ঘশ্বাস ফেলেন বাবুল। কারণ, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের অন্যায় আর জুলুমের কবলে তার ছোট্ট সাজানো সংসার তছনছ।

বাবুলের বাড়ি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মহাদেবপুর গ্রামে। বাবা মৃত মিজহারুল ইসলাম। বাবুল ছিলেন পিলখানার ঝাড়ুদার (এনসি)। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পর প্রায় এক মাস পিলখানাতেই চাকরিরত ছিলেন বাবুল। তখন মোবাইলে নিয়মিত বাড়িতে যোগাযোগ হতো। কিন্তু পরবর্তী সময়ে হত্যাকাণ্ডের মামলায় সাক্ষী না হওয়ায় আসামি করে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। ১৫ বছর ১০ মাস পর মুক্ত হন বাবুল।

বাবুলের মেয়ে ফারজানা আক্তার নিলা বলেন, প্রায় ১৬ বছর বাবা কারাগারে বন্দি ছিলেন। বাবার আদর থেকে বঞ্চিত হয়েছি। অনেক কষ্টে মা আমাকে পড়ালেখা করিয়েছে। অনেক কষ্টে আমাদের দিন গেছে।

বাবুলের স্ত্রী নিলু বেগম বলেন, বিনাদোষে আমার স্বামীকে হত্যা মামলায় কারাবন্দি করে রাখা হয়েছে। পরে খালাস পেলেও আরও একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে বের হতে দেয়নি। অনেক কষ্টে আমরা দিনাতিপাত করেছি। ২০১১ সালে বাবুল আমাকে বলেছিল, জীবন নষ্ট না করে ননদের কাছে মেয়েকে রেখে চলে যেতে। কিন্তু মেয়েকে নিয়ে আত্মীয়স্বজনদের সহযোগিতায় বাবুলের অপেক্ষায় ছিলাম। আজ সে মুক্ত। সরকারের কাছে একটাই দাবি, বাবুলকে যেন তার চাকরি ফিরিয়ে দেয়। ২০১০ সালের অক্টোবর মাসের পর থেকে তার বেতন বন্ধ করে রাখা হয়েছে। সেগুলো যেন আমাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

বাবুল বলেন, আমরা চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ছিলাম। অস্ত্র চালানো তো দূরের বিষয়, কাছে যাওয়ারও সুযোগ ছিল না। আমাকে হত্যার ঘটনায় সাক্ষী হতে বলা হয়। সাক্ষ্য না দেওয়ায় হত্যা মামলায় জড়ানো হয়। আমার বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষী না থাকায় মামলা থেকে খালাস দেওয়া হয়। পরে আবার বিস্ফোরক মামলায় কারাবন্দি করে।

তিনি আরও বলেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সময় পিলখানাতেই ছিলাম। গোলাগুলির আওয়াজ শুনেছি, কিন্তু কী হয়েছে, কারা করেছে, তা দেখিনি। শুধু দেখেছি ১০-১৫ জন সৈনিক অস্ত্র নিয়ে দৌড়াচ্ছে। এরপর প্রায় এক মাস পিলখানাতেই ছিলাম। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেন, ‘তোমরা আমার সন্তান, তোমরা কিছু করবা না, তোমাদের সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছে, তোমরা এখানে থাক।’ কিন্তু ২৩ মার্চ আমাকে প্রথমে আদালতে ও পরে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। রিমান্ডেও নেওয়া হয়েছে। সিআইডি, র‌্যাব ও সেনাবাহিনীর সদরদপ্তরে একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে বাবুল বলেন, ১৫ বছর চাকরি করেছিলাম। জেলে না গেলে এখন চাকরির বয়স ৩১ বছর হতো। এখনো চাকরির বয়স আছে। চাকরি ফিরিয়ে দিলে চাকরি করব। ক্ষতিপূরণ চাই।

পরিবার নিয়ে তিনি বলেন, মেয়েটাকে প্রায় সাড়ে ৬ বছরের রেখে গেছি। মানুষের কাছে হাত বাড়িয়ে খাবার খেয়েছে। আমার শ্যালকসহ স্বজনরা না থাকলে পরিবার রাস্তায় নেমে যেত। কখনো ভাবতে পারিনি জেল থেকে বের হতে পারব। গত রমজানের আগে মা মারা গেছেন। কয়েকদিন পর জানতে পেরেছি। শেষবারের মতো মাকেও দেখতে পাইনি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দিনাজপুরে আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার

বাংলাদেশে কারখানা বানাতে চায় তুরস্কের প্রতিষ্ঠান

সুড়ঙ্গ খুঁড়ে ব্যাংক ডাকাতির চেষ্টা, যুবক গ্রেপ্তার

আরব আমিরাতে বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির সম্ভাবনা

আইসিডিডিআরবিতে হাজারেরও বেশি চাকরিচ্যুতির চিঠি

সামরিক প্রধান নিহত, নিশ্চিত করল ফিলিস্তিন

ময়লার ভাগাড়ে কান্না করছিল নবজাতক, অতঃপর...

নির্বিঘ্নে সভা—সমাবেশ করার অধিকার চায় সনাতনী জাগরণ জোট

‘তোরা সমন্বয়ক’ বলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয়দের হামলা

নরসিংদীতে দুর্বৃত্তদের গুলিতে ইউপি সদস্য আহত

১০

চাপের মুখে হাতকড়া পরলেন সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী

১১

রাজবাড়ী জেলা বারের সভাপতি বাচ্চু, সম্পাদক রাজ্জাক

১২

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নামে মিয়ানমারের ভিডিও প্রচার

১৩

মেঘনা নদীতে দুগ্রুপের সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত ২

১৪

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে তারুণ্যের উৎসব উদযাপন

১৫

বনের জমি উদ্ধার করতে গিয়ে আহত ৮ কর্মকর্তা-কর্মচারী

১৬

ভারতে পাচার ১৬ কিশোর-কিশোরীকে বেনাপোলে হস্তান্তর

১৭

গাউসুল আজম মার্কেটে অস্থিরতার চেষ্টা, অভিযোগ ব্যবসায়ীদের

১৮

বিশ্ব ইজতেমার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে যা জানাল র‍্যাব

১৯

অসম্মান-মানসিক চাপে বিদ্রোহের সুর, কাঁদলেন নারী ফুটবলাররা

২০
X