জাপান-বাংলাদেশ গ্রুপের চেয়ারম্যান সেলিম প্রধান বলেছেন, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজীর মাফিয়া সাম্রাজ্য বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু নিয়ন্ত্রণ করছে। এ কারণে আওয়ামী লীগের লুটেরা ও হত্যা মামলার আসামি গাজীর ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন করায় এবং আমার আড়ত দখল নিতে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দিপু বাহিনী হামলা চালিয়েছে।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। সেই সঙ্গে অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে সেলিম প্রধান বলেন, গত ৫ আগস্টের পরে সাবেক মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বাহিনীর লোকজন বিএনপি নেতা দিপু ভূইয়ার বাহিনীর সঙ্গে যৌথভাবে মিলে গেছে। এই দুই অপরাধী একত্রে মিলে নানা অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় তারা আমার জায়গা ও আড়ত দখল করেছে। এ নিয়ে প্রতিবাদ করায় দিপু ভূইয়ার নির্দেশে তার লোকজন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আমার বাড়িতে হামলা চালিয়ে লোকজনদের আহত করেছে। মোটরসাইকেল ও গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। অথচ আমার আড়তের বিষয়ে অনেক আগেই আমি পুলিশ প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেছি।
তিনি বলেন, কিছুদিন আগে ইউএনও বসে সেই ভুয়া চুক্তিনামায় করা স্বাক্ষর যাচাইবাছাই করার জন্য সিআইডিতে পাঠিয়েছে। তখন সিদ্ধান্ত হয়, বিসমিল্লাহ আড়ত থেকে কেউ টাকা তুলতে পারবে না। তবে দিপু ভূইয়ার লোকজন তাদের কথা অমান্য করে আড়তের দোকান থেকে টাকা তুলে আসছে। এ নিয়ে গত সোমবার রূপগঞ্জের সাওঘাট এলাকার এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ীরা মিলে গাজী ও তার লোকজনদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন। এটা করাতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ভূইয়া দিপু ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকনের গায়ে লাগে। কারণ দিপু ভূইয়া তো গাজীর আরেক ছেলে। গাজীর দুই ছেলে একটা হলো পাপ্পা গাজী আরেকজন হলেন দিপু গাজী।
জাপান-বাংলাদেশ গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, ‘গত এক বছর আমি এই গাজীর সন্ত্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি। আমি যখন জেলখানায় ছিলাম তখন আমার পৈতৃক ও কেনা প্রায় ১৯ বিঘা জমির উপরে গড়ে উঠা বিসমিল্লাহ আড়ত এই গাজী বাহিনীর লোক মজিবুর রহমান ও হাবিবুর রহমান হাবিবসহ তার লোকজন ভুয়া চুক্তিনামা বানিয়ে দখল করে নেয়। সেটা ছিল ১০ বছরের ভাড়ার একটা ভুয়া চুক্তিনামা।
তিনি বলেন, অথচ সেই চুক্তিনামার স্বাক্ষরের সময়ে আমি জেলখানায় ছিলাম। এ নিয়ে প্রতিবাদ করলে ওই সময় গাজী বাহিনীর লোকজন আমার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে ও গুলি চালায়। বিগত আ.লীগ আমলে রূপগঞ্জের প্রতিটা ইউনিয়ন ও এলাকা পর্যায়ে মন্ত্রী গাজীর সন্ত্রাসী বাহিনী ছিল। সেখানে কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বললে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তার বাড়িতে হামলা চালাতো। এক কথায় গাজী রূপগঞ্জের মাফিয়া ছিল। এখন গাজীর সেই মাফিয়া সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করছে দিপু ভূইয়া।
সেলিম প্রধান বলেন, দিপু ভূইয়া রিকশা ও সিএনজি-ট্যাক্সি থেকে চাঁদাবাজি করে। গাউছিয়া এলাকায় ফ্লাইওভারের দুপাশে ফুটপাতে অবৈধ হকার ও দোকান উচ্ছেদ করা হয়েছিল। কিন্তু ৫ আগস্টের পরে দিপু বাহিনীর লোকজন ফুটপাত থেকে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে দোকান বসিয়েছে। বিএনপির সেক্রেটারি খোকন (গোলাম ফারুক খোকন) আমার সঙ্গে দেখা করে আড়তের জমি দখলমুক্ত করতে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। অথচ সেটা আমার নিজের জায়গা।
তিনি বলেন, এক কথায় গাজী যেসব জায়গা থেকে চাঁদা উঠাতো, দখলবাজি করতো ঠিক সেখানে এখন দিপু ভূইয়া ও খোকন একই কাজ করছে। উল্টো আগের তুলনায় তাদের রেট বেড়ে গেছে। বর্তমানে রূপগঞ্জে দিপু ভূইয়া ও খোকনের কথা ছাড়া কোনো কাজ হয় না। তাদের অপকর্মের বিষয়ে আমি বিএনপি অফিসে অভিযোগ জমা দিয়েছি। এরূপ নানা সেক্টর থেকে প্রতিদিন ২ থেকে ৩ কোটি টাকা চাঁদা উঠে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আড়তের চুক্তিনামার বিষয়টি আমাদের কাছে এসেছিল। তবে দলিল ভুয়া নাকি সেটা নির্বাহী আদেশের কিছু করার আমাদের ইখতিয়ার নেই। এটা জুডিশিয়ারি বিষয়। আদালত থেকে যার পক্ষে রায় হবে তাকে আড়ত পাবে।
তিনি বলেন, হামলার বিষয়ে আমরা প্রতিবেদন দিয়ে দিয়েছি। পুলিশকে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) দুপুরে বিএনপির নেতা মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপুর নির্দেশে তার লোকজন রূপগঞ্জের সাওঘাট এলাকায় সেলিম প্রধানের বাড়িতে হামলা চালায় ও অগ্নিসংযোগ করে। এতে গুলিবিদ্ধসহ পাঁচজন আহত হয়েছেন। সেলিম প্রধানের বাড়িতে থাকা ১০টি মোটরসাইকেল ও একটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয় ও লুটপাট করা হয়।
মন্তব্য করুন