সিরাজগঞ্জে পুলিশের পিকআপে ধাক্কা লাগায় ট্রাকচালককে আটকের পর পায়ে গুলি করে পঙ্গু করার অভিযোগে দুই সাবেক ওসিসহ ১৫ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা রুজুর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানা আমলি আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কেএম শাহরিয়ার শহীদ বাপ্পী এ আদেশ দেন। রোকন মোল্লা পাবনার ফরিদপুর উপজেলার নেছরাপাড়া এলাকার রহমত মোল্লার ছেলে।
বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম হাফিজ কিরণ কালবেলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার আসামিরা হলেন- উল্লাপাড়া থানার সাবেক ওসি আসিফ মুহাম্মদ সিদ্দিকুর ইসলাম, সাবেক এসআই আব্দুস সালাম, সলঙ্গা থানার সাবেক ওসি এনামুল হক, সাবেক ইন্সপেক্টর (তদন্ত) শেখ তাজউদ্দিন আহমেদ, সাবেক এসআই মনসুর রহমান, এএসআই আব্দুল কুদ্দুসসহ ১৫ পুলিশ সদস্যকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৫ মে ট্রাকচালক রোকন মোল্লা বগুড়া থেকে পাবনা যাওয়ার পথে রাত ১টার দিকে ঢাকা-নগরবাড়ি মহাসড়কের কাওয়াক মোড়ে পুলিশের পিকআপভ্যানের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উল্লাপাড়া মডেল থানার সাবেক ওসি আসিফ মুহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম ট্রাকচালক রোকন মোল্লার দিকে পিস্তল তাক করেন। ট্রাকচালক ভয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে সিরাজগঞ্জ রোডের দিকে দ্রুত ছুটতে থাকলে পুলিশের গাড়িও পিছু নেয়। খবর পেয়ে সলঙ্গা থানার সাবেক ওসি এনামুল হকও ট্রাকটি ধরতে পিছু নেয়।
পরে সলঙ্গা থানার রাজশাহী-পাবনা মহাসড়কের হরিণচড়ায় ট্রাকচালক রোকন মোল্লাকে আটক করে মারধর করে এবং বিবস্ত্র অবস্থায় তাকে রাস্তার পাশে পুকুরে নামিয়ে নির্যাতন করা হয়। পরে পুকুর থেকে তুলে ওসি এনামুল হক উল্লাপাড়া মডেল থানার সাবেক ওসি আসিফ মুহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলামকে ট্রাকচালক রোকন মোল্লাকে গুলি করে মেরে ফেলতে বলে। পরে আসিফ তার ডান পায়ে গুলি করে সলঙ্গা থানায় নিয়ে তিনটি মামলা করে গ্রেপ্তার দেখিয়ে শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা অর্থোপেডিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ট্রাকচালক রোকন মোল্লার ডান পা কেটে ফেলা হয়।
মামলার বাদী রোকন মোল্লা বলেন, উল্লাপাড়া থানার সাবেক ওসি আসিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম পিস্তল দিয়ে আমাকে গুলি করে পঙ্গু করে দিয়েছে। এখন একটি পা নেই। দীর্ঘদিন মিথ্যা মামলায় কারাগারে থাকার কারণে আমার সঙ্গে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে মামলা করতে দেরি হয়েছে। দীর্ঘদিন পর কারাভোগ শেষ করে জামিনে বেরিয়ে এসে মামলা করেছি। আমার সঙ্গে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের সঠিক তদন্তের মাধ্যমে বিচার দাবি করছি।
বাদীপক্ষের আইনজীবী গোলাম হাদী কিরন ইসলাম বলেন, বাদীর মেডিকেল প্রতিবেদন এসেছে। সলঙ্গা থানা আমলি আদালত অভিযোগটি আমলে নিয়ে সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপারকে নিয়মিত মামলার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
উল্লাপাড়া থানার ওসি আসিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম বদলিজনিত কারণে জেলার বাইরে থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
সলঙ্গা থানার সাবেক ওসি এনামুল হক অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, রোকন মোল্লা নামে এক আন্তঃজেলা ডাকাত উল্লাপাড়া কাওয়াক মোড় এলাকায় রাত ১টার দিকে ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তাকে উল্লাপাড়া থানা পুলিশ ধাওয়া করলে শাহজাদুপরের দিকে যায়। শাহজাদপুর থানা পুলিশের ধাওয়ায় সেখান থেকে আবারও উল্লাপাড়ায় আসে। সেখান থেকে আবার সলঙ্গা থানা এলাকায় চলে এলে আমরা ধাওয়া করি।
তিনি আরও বলেন, কিছুক্ষণ ধরে ধাওয়া করার পর হরিণচড়া এলাকায় তাকে ঘিরে ফেলা হয়। তখন সে গাড়ি রেখে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে, পুলিশ পিছে পিছে ধাওয়া করলে সে গুলি করে। পুলিশও পাল্টা গুলি চালালে সে আহত হয়। এরপর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে পাবনা, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহসহ ছয় জেলায় ২৮টি মামলা রয়েছে।
সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. ফারুক হোসেন বলেন, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী পিটিশন মামলা হিসেবে রুজু করে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্য করুন