নাটোরের তিন উপজেলার মৎস্যচাষিদের বকেয়া ৭ কোটি টাকা নিয়ে হুমায়ুন কবির নামে এক পুলিশ সদস্য উধাও হয়েছে। এতে গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম ও সিংড়া থানার প্রায় একশ মৎস্যচাষি পড়েছেন বিপাকে। এদিকে থানায় অভিযোগ দিয়েও গ্রেপ্তার না হওয়ায় বকেয়া টাকা ফেরত না পাওয়ার দুশ্চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এখানকার মৎস্যচাষিরা।
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের পুরুলিয়া বাজারে সেই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন ভুক্তভোগী মৎস্যচাষিরা। অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য হুমায়ুন কবির উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের পুরুলিয়া গ্রামের হায়দার আলীর ছেলে।
এলাকাবাসী ভুক্তভোগী আলম, ফারুক, শরিফুল, শাহাদৎ, মেহেদী, আলামিন, রইসসহ অন্তত ১০ জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চাকরি করার পাশাপাশি এলাকায় করতেন মাছের ব্যবসা। গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম ও সিংড়া উপজেলার মৎস্যচাষিদের কাছ থেকে মাছ নিয়ে দেশের বিভিন্ন আড়তে বিক্রি করত। চাকরি করার সুবাদে আসতে না পারলেও টাকা ঠিকই মাধ্যম দিয়ে পাঠিয়ে দিত। এভাবে বিশ্বাস অর্জন করে চাষিদের কাছ থেকে দফায় দফায় ৭ কোটির মাছ বাকিতে ক্রয় করে। পরে সেই বকেয়া টাকা আর শোধ করে না। তার ব্যবহৃত ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়। আর এভাবে প্রতারণার শিকার হন তিন উপজেলার প্রায় একশ মৎস্যচাষি।
পুরুলিয়ার রইস উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, তিনি গত মাসের শুরুতে পুলিশ সদস্য হুমায়ুনের কাছে বাকিতে ৩৩ লাখ ৯৫ হাজার টাকার ৮ গাড়ি মাছ বিক্রি করেন। ১৫ দিন পর টাকা দেওয়ার কথা বলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে পলাতক রয়েছে হুমায়ুন। তিনি টাকা ফেরতসহ তার শাস্তির দাবি জানান। অভিযুক্ত হুমায়ুন কবির পুলিশ সদস্য হিসেবে পুলিশ সদর দপ্তরে কর্মরত।
সিংড়া উপজেলার মোখলেসুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, গত মাসে ১৫ দিন পর টাকা দেওয়ার কথা বলে তিন দফায় ১৫ লাখ টাকার মাছ বাকিতে ক্রয় করে সেই পুলিশ সদস্য। সেই টাকা চাইলে আজকে নয় কাল দিব বলে আমাকে একের পর সান্ত্বনা দিতে থাকে। পরে ব্যবহৃত ফোন বন্ধ রাখে। খোঁজ নিতে তার বাড়িতে গেলে পরিবারের কোনো সদস্যদের দেখা মেলে না। নিরুপায় হয়ে তার কর্মক্ষেত্র ঢাকা ডিএমপিতে যোগাযোগ করলে সেখানেও তার অনুপস্থিতি দেখা যায়। পরে গত মাসের ১৫ তারিখে সিংড়া থানায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করি।
ভুক্তভোগী আলম জানান, তিনিও ওই প্রতারকের কাছে ১৬ লাখ ১১ হাজার টাকার ৪ গাড়ি মাছ বিক্রি করেছেন। টাকার জন্য চাপ সৃষ্টি করলে তাকে ইসলামী ব্যাংকের একটি চেক দেওয়া হয়। তার মতো অন্তত ১০ জন চাষিকে ব্যাংক চেক দেওয়া হয়। টাকা উত্তোলন করতে গিয়ে তারা দেখেন, প্রতারক হুমায়ুন আগেই ওই নম্বরের চেকবহি হারিয়ে গেছে মর্মে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছে। ভুক্তোভোগী চেক নিয়েও প্রতারিত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন।
ভুক্তভোগী ৪৫ লাখ টাকা ফিরে পেতে উজ্জ্বল হোসেন বাদী হয়ে গত ১৫ জানুয়ারি গুরুদাসপুর থানায় হুমায়ুন ও তার ৮ সহযোগীর নাম উল্লেখ করে অভিযোগ করেছেন।
অভিযুক্ত প্রতারক পুলিশ সদস্য হুমায়ুন কবিরের ব্যবহৃত ফোনে কল দিয়ে বন্ধ পাওয়ায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। বাসায় গিয়েও পরিবারের কোনো সদস্যকে পাওয়া যায়নি।
গুরুদাসপুর থানার ওসি গোলাম সারওয়ার হোসেন কালবেলাকে বলেন, হুমায়ুন কবিরের নামে মাছচাষিদের একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত চলছে। তদন্ত সাপেক্ষে পরে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্য করুন