বরিশাল নগরীর কাশিপুর এলাকায় একের পর এক মিলছে মানুষের শরীরের খণ্ডিত অংশ। কখনো দিঘি, আবার কখনো পুকুর, কখনো আবার ময়লার ডাস্টবিনে মিলছে অংশগুলো।
পুলিশ জানিয়েছে, গত তিন দিনে হাত-পা এবং কলিজাসহ শরীরের সাতটি অংশ উদ্ধার করেছেন তারা। সবশেষ মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) দুপুরেও ওই এলাকার হাতেম আলীর সেই দীঘি থেকে হাতের কব্জির খণ্ডিত একটি অংশ উদ্ধার করা হয়।
তবে শরীরের এসব অংশ উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা, আর সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ঘরে তল্লাশি ছাড়া তদন্তে আর কোনো অগ্রগতী দেখা যাচ্ছে না। ধরন দেখে প্রাথমিকভাবে এগুলো কোনো মেয়ের শরীরের অংশ বলে ধারণা করছেন তারা।
তবে খণ্ডিত অংশগুলো কার বা কোথা থেকে এলো তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। কেননা বরিশাল মেট্রোপলিটন এলাকার থানাগুলোতে কোনো নিখোঁজের খবর নেই। তার ওপর উদ্ধার হওয়া শরীরের অংশগুলো পচন ধরায় ডিএনএর ফলাফল কী আসবে তা নিয়েও চিন্তিত পুলিশ।
কিন্তু মানবদেহের অংশগুলো যারই হোক, তাকে পরিকল্পিতভাবে, ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে বলে মনে করছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম। আর যিনি খুন করেছেন, তিনি কোনো পেশাদার অপরাধী হতে পারে বলে ধারণা এ কর্মকর্তার।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের (বিএমপি) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রোববার (২৬ জানুয়ারি) সকালে নগরীর কাশিপুর উত্তর ইছাকাঠী হাতেম মীরার দিঘি ও পাশের পুকুর থেকে মানুষের কাটা দুই হাতের ও এক পায়ের অংশ এবং কলিজাসহ শরীরের পাঁচটি অংশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরদিন সোমবার (২৭ জানুয়ারি) বিকেলে একই স্থানে দিঘির পাশে ময়লার ডাস্টবিনে পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় পাওয়া যায় হাতের খণ্ডিত একটি অংশ। সবশেষ মঙ্গলবার দুপুরের দিকে দীঘিতে ভাসমান পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় পাওয়া যায় হাতের আরও একটি অংশ। একের পর এক শরীরের খণ্ড উদ্ধারের ঘটনায় এলাকার মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এদিকে মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় সোমবার বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের এয়ারপোর্ট থানায় অজ্ঞাত আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। থানার এসআই মো. আবুল হোসাইন বাদী হয়ে মামলাটি করেন। পাশাপাশি ঘটনার রহস্যে পৌঁছাতে ঘটনাস্থল থেকে আশপাশের এলাকার বাড়িঘরে তল্লাশি করেছে পুলিশ। মেট্রোপলিটন পুলিশের চারটি থানা এলাকায় কেউ নিখোঁজ রয়েছে কিনা সে বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়েছে পুলিশ। কিন্তু কোথাও কিছু খুঁজে পাচ্ছে না তারা।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের এয়ারপোর্ট থানার অফিসার ইনচার্জ জাকির শিকদার বলেন, ‘মৃতদেহের অংশগুলো পচন ধরেছে। আঙুলগুলো পচে গেছে। যে কারণে আঙুলের ছাপ নিয়ে যে পরিচয় শনাক্ত করব সেটাও সম্ভব হচ্ছে না। এখন ডিএনএ টেস্টের দিকে যেতে হবে। তাতেও আশানুরূপ ফলাফল আসবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ থেকে যাচ্ছে। তবে মাথার অংশ খুঁজে পেলে দ্রুত পরিচয় শনাক্ত করা যেত। আমাদের তল্লাশি অভিযান এখনো অব্যাহত রয়েছে।
অন্যদিকে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, এটা একটিা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। উদ্ধার হওয়া অংশগুলো দেখে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এটি কোনো মেয়ের শরীরের অংশ হতে পারে। আর মেয়ের বয়স ১৩-১৭ বছরের মধ্যে হতে পারে। এ বিষয়ে আমাদের তদন্ত চলছে, একাধিক গোয়েন্দা টিম কাজ করছে।
শফিকুল ইসলাম আরও বলেন, যে কাজটি করেছে সে খুব ঠান্ডা মাথায় এবং পরিকল্পিতভাবে করেছে। শুধু তাই নয়, ধারণা করা হচ্ছে হত্যাকাণ্ডের পর শরীরের অংশগুলো ফ্রিজিং করা হয়েছে। পরে সুযোগ বুঝে শরীরের অংশগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলা হয়েছে।
তবে এ হত্যার ঘটনা বরিশাল মহানগরী এলাকায় না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা আমাদের চারটি থানায় খোঁজ নিয়ে দেখেছি কোনো নিখোঁজের ডায়েরি বা অভিযোগ নিয়েও কেউ আসেনি। মনে হচ্ছে বরিশালের বাইরে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে লাশ গুম করতে শরীরের অংশগুলো খণ্ড খণ্ড করে নগরীতে এনে ফেলা হয়েছে। শরীরের বাকি অংশগুলোর খোঁজ চলছে। দেশের প্রতিটি থানায় বার্তা পাঠানো হয়েছে। আপাতত তদন্তের বেশি অগ্রগতি নেই বলে জানায় বিএমপি পুলিশ।
মন্তব্য করুন