দীর্ঘদিন ধরে মোবাইল নম্বরে বয়স্ক ভাতা আসছিল না সুরধ্বনী রানী করের। এ বিষয়ে চেয়ারম্যান-মেম্বারের কাছে গিয়েও কোনো সুরাহা পাননি। পরে স্থানীয়দের পরামর্শে উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারেন তিনি মারা গেছেন। তাই তার স্থলে অন্যজনকে ভাতাভোগী করা হয়েছে। এমন খবরে চমকে যান সুরধ্বনী রানী কর।
সমাজসেবা অফিসে দীর্ঘদিন ঘুরে আশ্বাস পেলেও এখনও ভাতা পাওয়ার ব্যবস্থা হয়নি তার। শেষে তিনি বিষয়টি জানিয়েছেন সংবাদকর্মীদের।
সুরধ্বনী রানী কর নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়ের নওয়াগাঁও গ্রামের মৃত নরেন্দ্র চন্দ্র করের স্ত্রী। তার জন্ম ১৯৪৭ সালে। ৭-৮ বছর ধরে তিনি বয়স্ক ভাতা পাচ্ছিলেন। ভাতা প্রক্রিয়া ডিজিটাল হওয়ার পরও তিনি মোবাইল নম্বরে ভাতা পেয়েছিলেন। গত দেড় বছর আগে হঠাৎ তার মোবাইল নম্বরে ভাতার টাকা আসা বন্ধ হয়ে যায়।
ভুক্তভোগী সুরধ্বনী রানী কর বলেন, প্রায় দুই বছর আগে ভারতে ছেলের কাছে বেড়াতে গিয়েছিলাম। দুই মাস পর এসেছি। তার কিছুদিন পর থেকে মোবাইল নম্বরে আর ভাতা পাচ্ছিলাম না। কয়েক মাস পর চেয়ারম্যান-মেম্বারের কাছে গিয়ে বিষয়টি জানালাম। তারা বিষয়টি দেখবেন বলে জানান। কিন্তু সমাধান পাইনি। পরে স্থানীয়দের পরামর্শে উপজেলা সমাজসেবা অফিসে যাই। সেখানে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি-আমাকে মৃত দেখিয়ে আমার স্থলে অন্য একজনকে ভাতাভোগী করা হয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে অফিসের লোকজন পুনরায় ভাতা করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু এভাবে কয়েক মাস চলে গেলেও ভাতা আর পাচ্ছি না।
তিনি বলেন, দুই ছেলে রেখে ২০ বছর আগে স্বামী মারা গেছেন। এক ছেলে ছোটবেলায় হারিয়ে গেছে। আরেক ছেলে দিনমজুরি করে পরিবার নিয়ে কষ্ট করে চলে। দুই বছর আগে ভারতে খোঁজ মিলে হারিয়ে যাওয়া ছোট ছেলের। পরে সে এসে আমাকে ভারতে নিয়ে গিয়েছিল বেড়ানোর জন্য। দুই মাস পর দেশে ফিরে দেখি আমাকে মৃত দেখিয়ে অন্যজনকে ভাতা দেওয়া হয়েছে। বয়সের কারণে শরীরে নানা অসুখ-বিসুখ বাসা বেঁধেছে। গরিব মানুষ ভাতার টাকাটা পেলে ওষুধ কিনে অন্তত খেতে পারতাম। ভাতা ফিরে পাওয়ার পাশাপাশি জীবিত মানুষকে যারা মৃত বানিয়েছে তাদের বিচারও দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে মঙ্গলবার দুপুরে গিয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোজাম্মেল হককে তার অফিসে পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে অফিসে থাকা তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত সমাজকর্মী শেফালি আক্তার বলেন, সুরধ্বনী রানী করের বিষয়টি আমরা জানি। তাকে মৃত দেখিয়ে অন্য একজনকে ভাতাভোগী করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধির দেওয়া মৃত্যু সনদের ভিত্তিতে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করেই এটা করা হয়েছে। তবে যেহেতু তিনি জীবিত তার ভাতা পাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। ওই ওয়ার্ডে কোনো ভাতাভোগী মারা গেলে তার স্থলে সুরধ্বনী রানী করকে ভাতাভোগী করা হবে। এ জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র ও আগে যে নাম্বারে ভাতার টাকা পেতেন সেগুলো নিয়ে আসতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুর রশিদ বলেন, সুরধ্বনী রানী কর দেড়-দুই মাস ভারতে ছিলেন। সেটা আমার জানা ছিল না। মৃত ভাতাভোগী প্রতিস্থাপন করার সময় এলাকার শিক্ষিত একজন গণ্যমান্য ব্যক্তির পরামর্শে নামের ভুলে তার (সুরধ্বনী রানী কর) স্থলে অন্য একজনকে ভাতাভোগী করা হয়েছে। আমি এটা খোঁজ খবর নিতে পারিনি। পুনরায় তাকে ভাতা পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
এ বিষয়ে তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম জহর বলেন, সুরধ্বনী রানী কর দুই বছর দেশে ছিল না। মানুষ মনে করেছে হয় তো তিনি মারা গেছেন। তাই হয়তো এমনটা হয়েছে।
ওই মৃত্যু সনদে আপনারও স্বাক্ষর রয়েছে। সঠিকভাবে খোঁজ-খবর না নিয়ে মনগড়া মৃত্যু সনদ দেওয়া কি ঠিক? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো মানুষের মৃত্যুর বিষয়টি মূলত মেম্বাররা নিশ্চিত করে সনদ তৈরি করেন। চেয়ারম্যান এতে শুধু প্রতিস্বাক্ষর দেন। এর দায় মেম্বারের। সুরধ্বনী রানী করের ভাতা পাইয়ে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করা হবে। তবে মৃত্যু সনদের জন্য সুরধ্বনী রানী করের যে আইনি সমস্যা সেটা হয়তো সমাধান করা যাবে না।
বিষয়টি অবহিত করলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জুয়েল আহমেদ বলেন, খোঁজ নিয়ে এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন