প্রথমে দলীয় নেতাদের ওপর হামলা এবং বাড়িঘর ভাঙচুর। এরপর দলের শৃঙ্খলা ভেঙে নগরীতে বিশাল শোডাউন। এ নিয়ে দলের শোকজও পেয়েছেন বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুক ও সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদার। এসব বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের রেশ না কাটতেই নতুন বিতর্কের সৃষ্টি করেছেন মহানগর বিএনপির আলোচিত এ দুই নেতা। এবার বিএনপির অফিস পোড়ানো এবং দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় এ দুই নেতার করা পৃথক মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন ছাত্রদল নেতা।
শনিবার (২৫ জানুয়ারি) রাত ৯টার দিকে নগরীর নথুল্লাবাদ এলাকার নিজ বাসা থেকে মহানগর ছাত্রদলের সহসভাপতি মো. সায়েম হোসেনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রোববার (২৬ জানুয়ারি) পৃথক দুটি মামলার এজাহারভুক্ত আসামি হিসেবে আদালতে সোপর্দ করা হলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
অভিযোগ উঠেছে, ছাত্রলীগ নেতাকে বিশেষ সুবিধা দিতেই নিজ দলীয় নেতাদের করা মামলায় মহানগর ছাত্রদলের সহসভাপতি মো. সায়েম হোসেনকে আসামি করা হয়েছে। এ নিয়ে বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে মহানগর বিএনপির দুই নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানিয়েছেন তারা।
বরিশাল মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি রেজাউল করীম রনি বলেন, মহানগর ছাত্রদলের কমিটি অনেক বড়। সায়েম নামে একজন সহসভাপতি এ কমিটিতে রয়েছেন। তবে যিনি গ্রেপ্তার হয়েছে তিনি এ সায়েম কিনা তা না দেখে বলা যাচ্ছে না।
অপরদিকে মহানগর ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক তসলিম বলেন, ‘আমাদের কমিটিতে ৭৩ নম্বর সহসভাপতি পদে সায়েম নামে একজন আছে। শনিবার রাতে তাকে আটকের খবরে দলের অভ্যন্তরে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। আমাদের কমিটির আকার বড় এবং কমিটি হওয়ার পর একটি পরিচিতি সভাও হয়নি। তাই ওনার সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ নেই।
বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানা সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বরিশালে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিএনপির অফিস পোড়ানো এবং শোক র্যালিতে হামলাসহ হত্যা চেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুক ও সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদার। পৃথক মামলার আসামি নিয়ে শুরু থেকেই বিতর্কের জন্ম দেন আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব। বিশেষ করে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদারের বিরুদ্ধে মামলা বাণিজ্যের অভিযোগ বেশ জোরালো হয়। অভিযোগ ওঠে নিজের চাচা শ্বশুরসহ আওয়ামী লীগের রাজনীতি করা নিকট আত্মীয়দের মামলায় আসামি না করে বিএনপির নেতাকর্মীদের আসামি করেন তিনি।
এমনকি জমি নিয়ে ব্যক্তিগত শত্রুতা মেটাতে প্রতিপক্ষকেও এ মামলায় আসামি করেন জিয়াউদ্দিন সিকদার। একই মামলার আসামির তালিকা তিন দফা পরিবর্তন করেন জিয়াউদ্দিন সিকদার। তিন দফায় আওয়ামী লীগের ৪০-৫০ জনের নাম মামলা থেকে বাদ দিতে মোটা অঙ্কের বাণিজ্য করেন তিনি। সেই দুটি মামলায় আসামি করা হয়েছে সায়েমকে। এর মধ্যে মনিরুজ্জামান ফারুকের করা মামলায় ২৭২ নম্বর এবং জিয়াউদ্দিন সিকদারের করা মামলায় ২৫৯ নম্বর আসামি সায়েম।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি বরিশাল প্রেস ক্লাবে কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও বরিশাল বিভাগের দলনেতা আব্দুল আউয়াল মিন্টু মহানগর বিএনপির দুই গ্রুপ নিয়ে মতবিনিময় করেন। সেখানেও জিয়াউদ্দিন সিকদারের মামলা বাণিজ্য এবং মামলার তিনটি নথি কেন্দ্রীয় নেতার সামনে উপস্থাপন করেন প্রতিপক্ষ গ্রুপের নেতারা। তবে কেন্দ্রীয় নেতা তাৎক্ষণিকভাবে এ নিয়ে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের বিরুদ্ধে কোনো সিদ্ধান্ত দেননি বলে জানিয়েছেন সভায় উপস্থিত মহানগর বিএনপির একাধিক নেতা।
এদিকে, মহানগর ছাত্রদলের সহসভাপতি সায়েমকে আসামি এবং গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদারের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক বলেন, মামলা যখন হয়েছে, তখন সব আসামি তো আমি দেইনি। দলের নেতাকর্মীরা নাম এনে দিয়েছে। এখন যে ছাত্রদল নেতার নাম দিল সেটা খুঁজে পাচ্ছি না। দলের নেতাকর্মীর নাম আমাদের মামলায় আসার সুযোগ নেই। তারপরও যেহেতু এসেছে, তাকে বের করার দায়িত্ব আমাদের। আমি বর্তমানে ঢাকায় আছি, বরিশালে এসে বিষয়টি খতিয়ে দেখব। কীভাবে ছাত্রদল নেতার নাম এলো, এমনকি সে ছাত্রদল নেতা কিনা তদন্তে সব বেরিয়ে আসবে।
মন্তব্য করুন