পঞ্চগড়ে আদালতের ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্ররা। অবরোধ করেছেন মহাসড়ক।
রোববার (২৬ জানুয়ারি) দুপুরে এ কর্মসূচি পালন করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পঞ্চগড়ের নেতাকর্মীরা।
এর আগে পঞ্চগড় জেলা ও দায়রা জজ গোলাম ফারুক এবং চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান মণ্ডলসহ ৪ বিচারকের অপসারণে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। কিন্তু আলটিমেটামের ৪ দিনেও দাবি বাস্তবায়ন না হওয়ায় এ কর্মসূচি পালন করছেন তারা।
এ সময় আদালত চত্বরে বিচারপ্রার্থীরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। একই সঙ্গে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে তেঁতুলিয়া-পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়কে।
এর আগে গত বুধবার (২২ জানুয়ারি) এক বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি থেকে ওই আলটিমেটাম দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা। তারা সেদিন জজ আদালত ও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম, ঘুষবাণিজ্য এবং বিচারকদের মধ্যে এখনো ফ্যাসিস্ট আওয়ামী প্রীতি মনোভাব বিরাজমান রয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন।
আদালতের ফটকে তালা এবং সড়ক অবরোধে নেতৃত্ব দেন পঞ্চগড়ের সমন্বয়ক ফজলে রাব্বী ও মোকাদ্দেসুর রহমান সান। এ সময় শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন। এ কর্মসূচি পূর্ব নির্ধারিত বলে জানান তারা।
জানা গেছে, সম্প্রতি জেলা জজ আদালত এবং চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে কর্মচারি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির প্রেক্ষিতে নিয়োগ পরীক্ষা হয়। চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নিয়োগ পরীক্ষায় ব্যাপক অনিয়ম হওয়ায় পরীক্ষা কেন্দ্রেই হট্টগোল শুরু হয়। পরীক্ষার্থীদের বৃহৎ অংশই নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলের দাবি তোলেন। পরে নিয়োগ বোর্ড সেই পরীক্ষা বাতিল করে। পরবর্তীতে আবারও পরীক্ষা হয়। সে পরীক্ষাতেও অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। নিয়োগ প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের জন্য সাধারণ পরীক্ষার্থীদের পক্ষে নিয়োগ বোর্ডের সঙ্গে সমন্বয়করা কথা বলেন। জেলা জজ গোলাম ফারুক এবং চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান মণ্ডল সমন্বয়কদের দাবির কোনো তোয়াক্কা না করেই নিজেদের নির্ধারণ করা ব্যক্তিদের নিয়োগ প্রদানের পাঁয়তারা করেন। এতে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ তোলা হয়।
সমন্বয়ক ফজলে রাব্বী বলেন, বিগত দিনে কর্মচারী নিয়োগে আনিসুল হকের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লোকদের পঞ্চগড়ের আদালতে অবৈধভাবে নিয়োগ দিয়েছে জেলা ও দায়রা জজ গোলাম ফারুক। এবারও অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্য করছে। আমরা মেধার ভিত্তিতে সুষ্ঠু নিয়োগের দাবি জানালে এই জজ এবং চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমাদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। তাদের বলতে চাই, আমরা পুলিশের গুলির সামনে বুক পেতে দিয়ে আন্দোলন করে ফ্যাসিস্ট হটিয়েছি।
তিনি বলেন, জেলা জজ গোলাাম ফারুক এবং চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান মণ্ডলসহ কয়েকজন বিচারক পুরোপুরি ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর। তারা শহীদদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলাকারী আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দেদার জামিন দিয়ে দিচ্ছে। এরা পতিত সরকারের সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের মদদপুষ্ট। আজকে ফ্যাসিস্ট হাসিনার সরকার নেই, আনিসুল হকও নেই। গোলাম ফারুক, মেহেদী হাসানরাও থাকতে পারবে না।
ফজলে রাব্বী আরও বলেন, চাককিতে মেধার মূল্যায়ন না করার কারণেই আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন করেছি। শেখ হাসিনার পতন ঘটিয়েছি, অথচ পঞ্চগড়ের আদালতে এখনো বৈষম্য চলছে। আমরা বৈষম্য লালন করা বিচারকদের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব।
মন্তব্য করুন