প্রতিষ্ঠার ৮ বছর হলেও স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ না হওয়ায় উত্তাল হয়ে উঠেছে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়। অবিলম্বে ক্যাম্পাস নির্মাণের দাবিতে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে সপ্তাহ ধরে চলছে আন্দোলন কর্মসূচি। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ছাড়াও, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ আন্দোলনে অংশ নিয়েছে।
রোববার (২৬ জানুয়ারি) মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা অস্থায়ী একাডেমিক ভবনে সমবেত হয়ে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ঢাকা-পাবনা মহাসড়কের শাহজাদপুর বিসিক বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যান। সেখানে প্রায় তিন ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন।
বক্তারা বলেন, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি এমনই যেন একটি সন্তান জন্ম দিয়েই খালাস। সেই সন্তানের লালনপালনের দায়িত্ব কারও নেই। ২০১৬ সালে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলেও এখন পর্যন্ত স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ না করায় দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে ক্লাস করতে হচ্ছে। ডিপার্টমেন্টের সংকট রয়েছে। কক্ষ স্বল্পতার কারণে এমনও দেখা গেছে একটি ক্লাস চলা অবস্থায় অপর ক্লাসের শিক্ষার্থীদের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য শিক্ষার্থীরা এর আগেও আন্দোলন করেছে। প্রশাসন শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছে, বাস্তবায়ন হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রায়হান উদ্দিন বলেন, আমরা ২০ জানুয়ারি থেকে আন্দোলন শুরু করেছি। ২০ তারিখে গণআলোচনা, ২১ জানুয়ারি মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ, ২২ তারিখে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন এবং সড়ক অবরোধ, ২৩ তারিখে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ, ২৪ তারিখে গণসংযোগ, ২৫ জানুয়ারি একাডেমিক ৩-এ সাংস্কৃতিক বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। শহীদ মিনারে ‘আমার ক্যাম্পাস’ নামে একটি নাটক প্রদর্শন করা হয়। ২৬ জানুয়ারি বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের দাবি না মানা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
এদিকে স্থায়ী ক্যাম্পাসের দাবিতে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে সচেতন নাগরিক ফোরাম। বিসিক বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সচেতন নাগরিক ফোরামের ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। শাহজাদপুর প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি বিমল কুমার, সচেতন ফোরামের উপদেষ্টা মাওলানা আবু জাফর, নাসিম উদ্দিন মালিথা স্মৃতি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আকারিয়া ইসলাম, শাহজাদপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক আলমাস আনসারি, ব্যবসায়ী নেতা আক্তার হোসেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতা হাবিবুর রহমান ও প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন বক্তব্য দেন। এতে শাহজাদপুরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাসহ এলাকাবাসী অংশ নেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ প্রকল্পের উদ্বোধনের পর থেকেই একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৮ সালে ৯ হাজার ২৩৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে দাখিল করা হয়। প্রতিষ্ঠার আট বছরের মধ্যে ইউজিসি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা কমিশনের নির্দেশনার অনুযায়ী ৮ বার প্রকল্পের আকার ও ব্যয় সংশোধিত করে পুনর্গঠিত ডিপিপি প্রেরণ করা হয়। কিন্তু ইতোপূর্বে প্রকল্পের আকার ও ব্যয় হ্রাসকরণ ছাড়া দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি।
দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় দুবার সংশোধিত ডিপিপি উপস্থাপন করে। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর ‘রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বংল্যাদশ স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পটি পুনর্গঠন করে সর্বপ্রথম প্রস্তাবিত প্রকল্প ব্যয়ের ৯৩.৫ শতাংশ হ্রাস করে মাত্র ৬.৫% অর্থাৎ ৫৯৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা প্রস্তাব করে ডিপিপি প্রেরণ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ২১ জানুয়ারি প্রকল্প প্রস্তাবনা অনুমোদনের সুপারিশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে। বর্তমানে প্রকল্প প্রস্তাবটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য বিবেচনাধীন রয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এসএম হাসান তালুকদার বলেন, আমাদের ৯ হাজার ২শ কোটি টাকার প্রজেক্ট ছিল সেটা কমিয়ে ৬শ কোটি টাকায় নামিয়ে এনেছি। এখন যদি সেটাও না দেয় তাহলে দুঃখজনক হবে ব্যাপারটা। আশা করছি সরকার দ্রুত ক্যাম্পাস নির্মাণে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
মন্তব্য করুন