নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় ১৮২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৬১টি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ৪৭টি সহকারী শিক্ষক পদ শূন্য থাকায় অনেকটা জোড়াতালি দিয়ে চলছে শ্রেণি কার্যক্রম। এতে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে, যার ফলে বিপাকে পড়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, ১৮২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৬১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই, ৪৭টি সহকারী শিক্ষক পদও শূন্য রয়েছে। পাশাপাশি উপজেলা শিক্ষা অফিসে ১৩টি পদের মধ্যে ৭টি পদই খালি। তন্মধ্যে ৭ জনের মধ্যে শুধু ৩ জন সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, অফিস সহকারী ৩ জনের মধ্যে ১ জন ও একমাত্র অফিস সহায়ক ১ জনই শূন্য থাকায় কোনোভাবে চলছে কেন্দুয়া উপজেলা শিক্ষা অফিস। সহকারী শিক্ষা অফিসারের সংকট থাকায় ৭টি ক্লাস্টারের কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে। অফিসসহ এতে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদানসহ অন্যান্য কার্যক্রম।
এসব বিদ্যালয়গুলোতে প্রধান শিক্ষক না থাকায় সহকারী শিক্ষকগণ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও চলতি দায়িত্বে থেকে দুই দায়িত্বই পালন করেছেন। এতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। অন্যদিকে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের পাঠদানে পিছিয়ে পড়েছে। শিক্ষার গুণগতমান নিশ্চিত করতে হলে শিগগিরই এসব বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ পূরণ করা দরকার বলে মনে করছেন শিক্ষক ও অভিভাবকরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্তত চার-পাঁচটি বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, প্রধান শিক্ষক না থাকার কারণে সহকারী শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে পুরো সময় উপস্থিত থাকেন না। এতে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। একই সঙ্গে শিক্ষকদের মধ্যে দলাদলির সৃষ্টি হচ্ছে।
উপজেলা কেন্দুয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (চলতি দায়িত্ব) মো. আব্দুস সাকি জানান, আমার বিদ্যালয়ে প্রায় ৫৫০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষকের পদটি শূন্য রয়েছে। বর্তমানে আমি প্রধান শিক্ষক (চলতি দায়িত্ব) হিসাবে পালন করছি। বিদ্যালয় এবং অফিসের কাজ দুটোই করতে হচ্ছে ফলে বেশি চাপে থাকতে হচ্ছে বলে তিনি জানান।
উপজেলা সান্দিকোনা ইউনিয়নে টিপড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. মুর্শেদ আলম বলেন, প্রায় ১ বছর হয়ে গেল ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছি। এ অবস্থায় আমাকে ক্লাস রেখে অফিসের কার্যক্রমে বেশি ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। এতে সাধারণ শিশু শিক্ষার্থীরা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে তিনি জানান।
কেন্দুয়া প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও পূর্বরায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুর রহমান জানান, উপজেলার ৬১টি প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য, শিক্ষা অফিস ও সহকারী শিক্ষা অফিসারসহ মোট ৭টি পদ শূন্য থাকায় বিদ্যালয়ে পাঠদানসহ অফিসের কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব এসব পদপূরণের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানান তিনি।
জানতে চাইলে কেন্দুয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. জামিরুল হক বলেন, সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদকে দ্বিতীয় শ্রেণি ঘোষণা করেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। ১০ বছর ধরে শিক্ষকদের পদোন্নতির বিষয়টি আটকে আছে। সহকারী শিক্ষক থেকেই শূন্য পদের প্রধান শিক্ষকের পদগুলো পূরণ হবে। মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ের মধ্যে কারা ওই পদোন্নতি দেবে, তা নিয়েও রয়েছে ঝামেলা। ওই কারণে শূন্য পদগুলো পূরণ করা যাচ্ছে না। এতে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়গুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
কেন্দুয়া উপজেলার সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মীর্জা মোহাম্মদ সোহাগ জানান, উপজেলার ১৮২টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ৬১টিতে স্থায়ী প্রধান শিক্ষক নেই। ৪৭টি সহকারী শিক্ষক, অফিসে ১৩টি পদের মধ্যে সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারসহ ৭টি পদই শূন্য। যার ফলে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, শূন্য পদগুলো পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হবে। এটির একটি প্রক্রিয়া চলছে। নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না, তবে শূন্য পদগুলো তাড়াতাড়ি পূরণ হবে বলে আশা করছি। তাছাড়া অফিসিয়াল পদগুলো শীঘ্রই পূরণের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
শিক্ষক সংকট থাকায় শ্রেণি কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে কি না এ রকম প্রশ্ন করা হলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আফতাব উদ্দিন বলেন, উপজেলায় সহকারী শিক্ষা অফিসার, প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় পড়াশোনা চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। কিন্তু ইতোমধ্যে শূন্য পদে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আইনি জটিলতা থাকায় এতদিন ওই পদগুলো পূরণ করা যায়নি। এখন আর ওই আইনি জটিলতা নেই। শিগগিরই ওই শূন্য পদগুলো পূরণ করা হবে বলে তিনি জানান।
উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও ইমদাদুল হক তালুকদার বলেন, এসব বিষয়গুলো আমি অবগত আছি। যতটুকু জানলাম প্রায় ৬১টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। তাছাড়া ৪৭টি সহকারী শিক্ষক ও অফিসেও ৭টি পদ খালি আছে। এভাবে চলতে থাকলে শিক্ষার গুণগত মান ক্ষুণ্ণ হবে। দ্রুত শূন্য স্থানে শিক্ষক নিয়োগ করলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে দ্রুত শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে শ্রেণি কার্যক্রমকে বেগমান করবে বলে তিনি জানান।
মন্তব্য করুন