পরিত্যক্ত জমি বা খোলা আকৃতির মাঠে সৌন্দর্যবর্ধক ঘাস চাষে ভাগ্যবদল প্রবাসফেরত মনির হোসেনের। সোশ্যাল মিডিয়াকে কাজে লাগিয়ে তিনি এই ব্যবসার প্রসার ঘটাচ্ছেন এবং এতেই নিয়মিত ঘাস বিক্রির নিত্যনতুন গ্রাহকও পাচ্ছেন। তার এই সফলতায় মুগ্ধ হয়ে এলাকার অনেক যুবকই ব্যবসা শিখতে তার কাছে ধরনা দিচ্ছেন।
উদ্যেক্তা মনির হোসেন চাঁদপুর সদরের বালিয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মোহাম্মদ আবু তাহের গাজী ও মনি বেগমের ছেলে। ৩৮ বছর বয়সী মনির পরিবারে ৩ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে সবার বড়। দাম্পত্য জীবনে মনির স্ত্রীসহ ২ মেয়ে ও ১ ছেলেকে নিয়ে সুখে সংসার করছেন।
স্থানীয়রা জানান, আয়ের পথ না পেয়ে মনির ২০১৩ সালে বাহারাইন চলে যায় এবং সেখানে বাগানে কাজ করেন। এরপর ২০১৮ সালে দেশে ফেরত এসে ২ বছর আবার বেকার থাকেন। নিজেই বুদ্ধি করে লোকমারফতে মেক্সিকো থেকে লং কার্পেট ঘাস আনেন। ২০২০ সালে সে ঘাস লাগিয়ে মাত্র ২ বছরের ব্যবধানে এখন বছরে ১২-১৪ লাখ টাকা তিনি আয় করছেন।
সরেজমিনে রোববার (২৬ জানুয়ারি) চাঁদপুর সদরের বালিয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ বালিয়া গ্রামে গিয়ে সৌন্দর্যবর্ধক এই ঘাস চাষ দেখা যায়।
মনিরের ঘাসচাষে নিয়োজিত শ্রমিকরা জানান, মেক্সিকান বারমুডা লং কার্পেট ঘাসটি মূলত এ ঘাস থেকেই জন্ম নেয়। এর জন্য নির্দিষ্ট কোনো বীজের প্রয়োজন নেই। জমি প্রস্তুতকালে প্রথমে জমির মাটি লেভেলের পর তাতে প্লাস্টিক বিছানো হয়। এরপর তার ওপর মাটি ফেলে পানি দিয়ে মাটি ভিজিয়ে কাদামাটি করা হয়। আর সে মাটির ওপরে ঘাস লাগানো হয়। এরপরে এভাবে ফেলে রেখে ঘাস ওঠানোর পূর্বে দু-একবার আগাছা পরিষ্কার রাখতে হয়। তারপরে ঘাস কেটে তা বিক্রি উপযোগী হয়। বর্গাকার কাঠে ১২ স্কয়ার ফিট পর্যন্ত নির্দিষ্ট মাপে রেখে ঘাসটা কাটতে হয়। মনিরের এ কাজে ৫০-৬০ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। তারা জমি প্রস্তুত, ঘাস বাছাই, আগাছা পরিষ্কার, পরিবহন কাজে নিয়োজিত হয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। ঢাকা, বরিশাল, যশোরসহ দূর-দূরান্তে এসব ঘাস ট্রাকযোগে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।
উদ্যোক্তা মো. মনির হোসেন বলেন, মেক্সিকান বারমুডা লং কার্পেট ঘাস মূলত সৌন্দর্যবর্ধনে কাজে আসে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এটি প্রমোট করি। যা দেখার মাধ্যমে আকৃষ্ট হয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ রুচিশীল মানুষ এই ঘাস অর্ডার করে কিনে নেয় এবং নিজেদের বাড়ির আঙিনাসহ খেলার মাঠ বা রাস্তার দুপাশে লাগাচ্ছেন। প্রথমদিকে পরিবারসহ এলাকাবাসী এ কাজকে গুরুত্ব না দিলেও এখন ঘাস চাষে বছরে ১২/১৪ লাখ টাকা আয়ের এই সফলতাকে ব্যাপক প্রশংসার চোখেই দেখছেন সবাই। বর্তমানে আমি দক্ষিণ বালিয়া ছাড়াও ইচুলী, লক্ষ্মীপুর ও মোহনপুরে সব মিলিয়ে প্রায় ২০ একর জমি লিজ নিয়ে এ ঘাস চাষ করছি। যদি ঋণ সহায়তা এবং প্রশাসন হতে খাস জমি বরাদ্দ পাই তাহলে আমি এ ব্যবসা আরও প্রসার ঘটিয়ে অনেক লোকের কর্মসংস্থান করতে পারবো বলে আশাবাদী।
এ বিষয়ে চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দ্রুতই লং কার্পেট ঘাসচাষ পদ্ধতি পরিদর্শন করে খাস জমি বরাদ্দসহ মনিরের মতো উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগে সহায়তার আশ্বাস দিচ্ছি। তার এই কর্মগুণকে জানাচ্ছি শুভকামনা।
এদিকে লং কার্পেট ঘাস এক বার লাগালে তা শুধু কেটে পরিষ্কার রাখলেই হয়। বিধায় গ্রাহকরা বাসাবাড়ির আঙিনাসহ বিভিন্ন স্থানে লাগাতে এই ঘাস কিনে নিচ্ছেন। বেকারত্ব দূরীকরণে পরিশ্রম কম হওয়ায় এ ঘাসের ব্যবসা এখন ব্যাপকভাবে লাভজনক হিসেবে চাঁদপুরের যুবকদের কাছে আশা সঞ্চারিত করেছে।
মন্তব্য করুন