মানুষের ভালোবাসায় পোষ মেনেছে কুড়িয়ে পাওয়া বন্য শজারু। এলাকার লোকজনের সঙ্গেও দারুণ সখ্যতা হয়েছে তার। দিনরাত এলাকায় ও বাড়িতে ইচ্ছেমতো ঘুরে বেড়াচ্ছে প্রাণীটি। টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার সন্ধানপুর ইউনিয়নের কুশারিয়া গ্রামের বাসিন্দা লিটন মিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল এমন চিত্র।
প্রায় ১১ মাস আগে ঘাটাইল-সাগরদদিঘী আঞ্চলিক সড়কে কুড়িয়ে পেয়ে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসার পর থেকে সজারুর ছানাটিকে পরম যত্নে লালনপালন করছেন লিটন। বর্তমানে প্রাণীটি ভালোবাসা পেয়ে অবিশ্বাস্যভাবে পোষ মেনে বসবাস করছে।
সন্ধানপুর ইউনিয়নের কুশারিয়া এলাকায় লিটনের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, বাড়িটির এপার-ওপার দৌড়ে বেড়াচ্ছে সজারুর ছানাটি। কেউ চলার পথে বাধা দিলে পুরো শরীরের কাঁটাগুলো মেলে ধরে। আদরে গায়ে হাত বুলিয়ে দিলে আনন্দ পায়। প্রতিদিন দুপুরে বিকেলে গর্ত থেকে বের হয়ে বাড়ির আশেপাশে ঘুরে বেড়ায়। প্রাণীটি দেখতে অনেকে ভিড় করছেন লিটনের বাড়িতে।
কুড়িয়ে পাওয়া বন্য সজারুটির নাম ‘পাগলা’ রেখেছেন জানিয়ে লিটন মিয়া বলেন, নাম ধরে ডাক দিলে খাবারের জন্য ছুটে আসে। পেছনে পেছনে যেতে বললে সে পোষা অন্যান্য প্রাণীর মতো সঙ্গে চলতে থাকে। কলা, আলু, ফুলকপি, বাঁধাকপি, পাউরুটি, ভাত, দুধ, বিস্কুট ইত্যাদি খেতে বেশি পছন্দ করে পাগলা।
তিনি আরও বলেন, প্রায় ১১ মাস আগে রমজানের রাতে কুশারিয়া এলাকায় সড়কের পাশে একটি কলার বাগানে পড়ে ছিল শজারু ছানাটি। পরে আমি এটি উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসি। পরিবারের সদস্যরা মিলে পরিচর্যার মাধ্যমে অসুস্থ শিশু শজারুটিকে পরম যত্নে সুস্থ করে তোলার পর থেকে সে একজন সদস্য হিসেবে আনন্দে আমাদের সঙ্গে বসবাস করে আসছে। ঘরের ভেতর খড় দিয়ে থাকা ও ঘুমানোর জন্যে জায়গা তৈরি করে দিয়েছিলাম, কিন্তু শজারুটি সেখানে না ঘুমিয়ে ঘরের বাইরে একটা জায়গায় মাটির নিচে নিজেই সুরঙ্গ তৈরি করে সুন্দর বসবাস করছে।
লিটন বলেন, একেবারে অল্প বয়স থেকে শজারুটি আমার সংস্পর্শে থাকার সুযোগে সেও যেমন পোষ মেনেছে, ঠিক তেমনই ওর প্রতি এতো দিনে একটা মায়া তৈরি হয়েছে। রোজ দুপুরে গর্ত থেকে বের হয়ে আমার হাতে খেয়ে গর্তে চলে যায়, আবার বিকেলে বের হয়ে সে বাড়ির ঘরে বা আশেপাশের দোকানপাটেও নির্দ্বিধায় ঘুরে বেড়ায়। গভীর রাত পর্যন্ত সে আশেপাশে খেলাধুলা ছোটাছুটি করে খাবার খায়। সবার কাছে সে একটা আদরের পোষ্য প্রাণী হিসেবে কোনো সমস্যা ছাড়াই বসবাস করছে।
কুশারিয়া গ্রামের সাগর আহমেদ বলেন, বন্যপ্রাণী শজারু পোষ মানার বিষয়টি আশ্চর্যজনক। এ প্রাণী তো লোকালয়ে মানুষের কাছে পোষ মানার কথা না। এরা সাধারণত পাহাড়ের গর্তে থাকে। লিটনের পরিবারে প্রাণীটি প্রাকৃতিক উপায়ে পোষ মানার বিষয়টি আমাকে চরম মুগ্ধ করেছে।
মন্তব্য করুন