এ বছর হাওরে অতিথি পাখির সংখ্যা কমেছে। হাকালুকি হাওরে চালানো জরিপ শেষে এ তথ্য জানিয়েছেন পাখি বিশেষজ্ঞরা। তারা জানান, এ বছর সেখানে ৩৫ হাজার ২৬৮টি অতিথি পাখি দেখেছেন তারা।
প্রতি বছরের মতো এবারও এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি হাওরে পরিযায়ী জলচর পাখির জরিপ করেছে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিনিধি দল । ২৩ ও ২৪ জানুয়ারি দু’দিনব্যাপী চলে জরিপের কাজ। এ কাজে সহযোগিতা করেছে বেসরকারি সংস্থা সিএনআরএস ও বাংলাদেশ বন অধিদপ্তর।
পাখি বিশেষজ্ঞরা জানান, এ বছর হাকালুকি হাওরের গুরুত্বপূর্ণ প্রায় ৪৫টি বিলে চালানো গণনায় সর্বমোট ৩৫ হাজার ২৬৮টি পাখি পর্যবেক্ষণ করেছেন তারা। এর মধ্যে পিংলা বিলে বিশ্বব্যাপী বিপন্ন বেয়ারের ভূতি হাঁস দুটি, নাগুয়া-লরিবাই বিলে বাংলাদেশের বিরল প্রজাতির বৈকাল তিলিহাঁস একটি, প্রায় সংকটাপন্ন ফুলুরি হাঁস তিনটি, মরচে রংয়া ভূতিহাঁস ১ হাজার ৫৮৮টি, উত্তুরে টিটি ৬টি, সংকটাপন্ন কালো মাথা কাস্তেচরা ৩৯৩টি এবং বিশ্বব্যাপী বিপন্ন পাতি ভূতিহাঁস ৯০৯টি উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়াও পিয়ং হাঁস ৫ হাজার ৫৫২টি, উত্তুরে ল্যাঞ্জ্যা হাঁস ৪ হাজার ২৭২টি এবং এশীয় শামুকখোল ৪ হাজার ২২৮টি পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে।
তাদের মতে, বিগত বছরের তুলনায় এবার পাখি সংখ্যা তুলনামূলক কম দেখা গেছে। কেননা প্রায় প্রতিটি জলাশয়ে মৎস্য আহরণ চলছে এবং কিছু কিছু জলাশয় প্রায় পানিশূন্য করে মাছ শিকার করা হচ্ছে। ব্যাপকভাবে কীটনাশকের ব্যবহারও বেড়েছে হাওর এলাকায়।
এছাড়া নাগুয়া বিলে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল দিয়ে পাখি শিকার, পিংলা বিলের পাশে বিষটোপ (কার্বোটাফ) দিয়ে পাখি শিকারের নমুনা দেখা গেছে। হাতেনাতে ধরে জালও নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি পরিত্যক্ত মাছ ধরার ফাঁদ হাওরে ব্যাপকভাবে দেখা গেছে, যা অতিথি পাখির জন্য হুমকি।
বার্ড ক্লাব সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ পাখিশুমারি হয়েছিল ২০২৩ সালে। সে বছর হাওরে ৫২ প্রজাতির ৩৭ হাজার ৭৭৮টি পাখি পর্যবেক্ষণ করেছিলেন তারা। তার আগে ২০২২ সালে ৫১ প্রজাতির ৩৬ হাজার ৫০১টি, ২০২০ সালে ৫৩ প্রজাতির ৪০ হাজার ১২৬টি এবং ২০১৯ সালে ৫১ প্রজাতির ৩৭ হাজার ৯৩১টি পাখির দেখা মিলেছিল। সেই তুলনায় চলতি বছরে হাকালুকি হাওরে ৩৫ হাজার ২৬৮টি পাখি দেখতে পেয়েছেন জরিপে অংশগ্রহণকারীরা।
স্থানীয় পরিবেশ কর্মীরা জানান, হাকালুকি হাওরের প্রতিবেশ প্রতিনিয়ত সংকটাপন্ন হচ্ছে। যার ফলে বর্ষার সময় দীর্ঘমেয়াদি জলাবদ্ধতা, শুষ্ক মৌসুমে পানি শূন্যতার প্রধান কারণ হচ্ছে দীর্ঘদিন থেকে নদীনালা ও বিল খনন না করা। পাহাড়ি পলিতে বিলগুলো ভরাট হয়ে নাব্যতা হারিয়েছে। এ ছাড়া ফাঁদ পেতে শিকারিরা অতিথি পাখি শিকার চলছে বিলগুলোতে। এতে হাওরের প্রতিবেশ বিভিন্ন প্রজাতি পাখি ও হাঁসের জন্য সংকটাপন্ন হয়েছে।
মন্তব্য করুন