জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে মুক্তিযোদ্ধা শ্বশুরকে নিজের পিতা বানিয়ে দীর্ঘ ৯ বছর ধরে সরকারি চাকরি করে আসছেন মাফিয়া খাতুন নামে এক শিক্ষক। উপজেলার ভাটারা ইউনিয়নের ৬১নং মইশাবাদুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক তিনি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার ভাটারা ইউনিয়নের জুলারখুপি গ্রামের মরহুম বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমানের ছেলে সেনাসদস্য খায়রুল ইসলাম খোকনের সঙ্গে মাদারগঞ্জ উপজেলার সরদাবাড়ী গ্রামের হাসান আলীর মেয়ে মাফিয়া খাতুন মিতুর ২০১০ সালে বিয়ে হয়।
২০০৭ সালে বিয়ের আগে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার সময় তার বাবা-মায়ের নাম-ঠিকানা সঠিক দিয়ে ভর্তি হলেও পরে ২০১১ সালে এসএসসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশনে জন্মদাতা হিসেবে পিতার নাম না দিয়ে শ্বশুরের নাম দেন তিনি।
বিয়ের আগে রায়েরছড়া সরদাবাড়ী মডেল একাডেমি স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন মাফিয়া আক্তার মিতু। পরে জাতীয় পরিচয়পত্রেও বাবার নামের পরিবর্তে শ্বশুরের নাম ব্যবহার করে নিবন্ধন করেন।
২০১৬ সালের ১৭ জানুয়ারি থেকে ভাটারা ইউনিয়নের ৬১নং মইশাবাদুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাফিয়া আক্তার সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন ৷ এ নিয়ে দেশের বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকা ও স্থানীয় পত্রিকা এবং অনলাইন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে সরিষাবাড়ী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সরেজমিনে তদন্ত করে ২০২৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর একটি তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে পাঠান।
পরে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোফাজ্জল হোসেন আবারও জেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা হারুন অর রশিদকে প্রধান করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। ৩ ডিসেম্বর তদন্ত কমিটি ঘটনার সত্যতা পেয়ে ৯ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন পাঠান।
এ বিষয়ে মিতুর ভাসুর মো. শফিকুল ইসলাম খোরশেদ মুঠোফোনে বলেন, মিতু আমার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী। সে তার কাগজপত্রে আমার বাবার নাম ব্যবহার করতে পারে না। আমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান তার জন্মদাতা না। বিষয়টি আমি যেদিন থেকে জানতে পেরেছি সেদিন থেকে লজ্জায় বাড়িতে যাই না।
অভিযুক্ত শিক্ষক মাফিয়া আক্তারের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি নন বলে জানান।
এ বিষয়ে জামালপুর জেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা অফিসার হারুন অর রশিদ জানান, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর তদন্ত করা হয়েছে। ঘটনার সত্যতা থাকায় অধিদপ্তরে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) আবু নূর মো. শামসুজ্জামান কালবেলাকে বলেন, বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। আপনার থেকেই মাত্র অবগত হলাম। প্রতিবেদন আসামাত্রই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্য করুন