শেখ মমিন, রাজবাড়ী প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:২২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

কুয়াশায় লঞ্চ-ফেরি বন্ধ, ‘ম্যানেজ’ করে ট্রলারে নদী পার

ঘন কুয়াশায় ফেরি-লঞ্চ বন্ধ থাকলেও ঝুঁকি নিয়ে চলছে ইঞ্জিনচালিত ট্রলার। ছবি : কালবেলা
ঘন কুয়াশায় ফেরি-লঞ্চ বন্ধ থাকলেও ঝুঁকি নিয়ে চলছে ইঞ্জিনচালিত ট্রলার। ছবি : কালবেলা

দেশের গুরুত্বপূর্ণ ২১ জেলার প্রবেশদ্বার রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাট। এই ঘাট দিয়েই দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট ব্যবহার করেই প্রতিদিনই হাজার হাজার যাত্রী পদ্মা নদী পার হয়ে রাজধানীর ঢাকায় যায়। সঙ্গে যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাকসহ বিভিন্ন ছোট বড় যানবাহন পারাপার হয়। শীত মৌসুমে তীব্র কুয়াশার কারণে মাঝেমধ্যেই ফেরি ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকে। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে কিছু অসাধুচক্র, নৌপুলিশ ও বিআইডব্লিউটিসি এবং ফেরিঘাট কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে অবৈধভাবে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে যাত্রী পারাপার করছে। ঘন কুয়াশায় ফেরি ও লঞ্চ চলাচল বন্ধের পরও প্রকাশ্যে ফেরিঘাটের পন্টুন থেকেই যাত্রী ওঠানামা ও নদী পারাপার করা হচ্ছে। এতে চরম ঝুঁকি বাড়ছে যাত্রীদের।

ফেরিঘাটের পন্টুনে ও নদীতে নৌপুলিশের উপস্থিতি না থাকায় কুয়াশায় যেকোনো সময় নদীতে প্রাণঘাতীর মতো বড় ধরনের দুর্ঘটনারও আশঙ্কা করছেন অনেকে। এ ছাড়া মহাসড়কে পুলিশের নিয়মিত টহল না থাকায় প্রতিনিয়ত রাতে ও কুয়াশার মধ্যে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ছেন যাত্রীসহ চালকরা। এতে ঘাট এলাকায় চালক ও যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। আর যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে কর্তৃপক্ষ ঘন কুয়াশার মধ্যে ইঞ্জিনচালিত ট্রলার চলাচল অতিদ্রুতই বন্ধ করবে এমন প্রত্যাশা সাধারণ যাত্রী ও চালকসহ সচেতন মহলের। নদীতে নৌপুলিশের উপস্থিতি না থাকায় যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটবে বলেও আশঙ্কা করছেন যাত্রীরা।

এদিকে ঘনকুয়াশায় ফেরি ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকার পরেও ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারে নদী পারাপারে জন্য যাত্রী প্রতি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। কোন কোন সময় ২০০ টাকার অধিকও ট্রলার ভাড়া নেওয়ার অভিযোগও করেছেন যাত্রীরা। এতে যাত্রীদের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হচ্ছে এবং জীবনের ঝুঁকিও বাড়ছে।

শনিবার (২৫ জানুয়ারি) সকালে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, দৌলতদিয়া ঘাটের ৭টি ফেরিঘাটের মধ্যে ৩টি ঘাট সচল রয়েছে। এর মধ্যে ৩, ৪ ও ৭ নম্বর ফেরিঘাট চালু আছে। দেখা গেছে, ঘন কুয়াশার মধ্যে শুক্রবার দিবাগত রাত ৩টা থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখে কর্তৃপক্ষ। একইসাথে লঞ্চ চলাচলও এ সময় বন্ধ থাকে। কুয়াশা কেটে গেলে পুনরায় সকাল ৭টার পর থেকে দৌলতদিয়া- পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি ও লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক হয়। তবে একটানা ৪ ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ বাড়ে। এ সুযোগে শনিবার ভোর সকালে তীব্র কুয়াশার মধ্যে ফেরি ঘাটের ৩, ৪ ও ৭ নম্বর পন্টুন থেকে ইঞ্জিন চালিত ট্রলারে করে যাত্রী পারাপার করতে দেখা গেছে। ঘন কুয়াশার মধ্যে ইঞ্জিন চালিত ট্রলারে যাত্রী পারাপারেও ছিল বড় ধরনের প্রাণঘাতীর ঝুঁকি। তবে ফেরির পন্টুন ব্যবহার করে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে যাত্রী পারাপার করলেও ফেরিঘাট কর্তৃপক্ষের কোনো নিষেধাজ্ঞা ছিল না এবং বিআইডব্লিউটিসিরও কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা ছিল না। প্রকাশ্যে ফেরিঘাট কর্তৃপক্ষের সামনেই ট্রলারে করে যাত্রী পারাপার করতে দেখা যায়। এ সময় নদীতে বা ফেরির পন্টুনে নৌপুলিশের কোনো উপস্থিতিও দেখা যায়নি।

ঘন কুয়াশার মধ্যে ট্রলারে করে যাত্রী পারাপার করছে স্বাভাবিক ভাবেই। আর এ পন্টুনগুলো ব্যবহার করেই যাত্রী পারাপার করছেন ট্রলারের চালকরা। এতে চরম ঝুঁকি বাড়ছে। যে কোনো সময় ঘটবে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। কর্তৃপক্ষ যেন এ বিষয়ে বিরাট উদাসীন।

এর আগে, শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) ঘন কুয়াশার কারণে টানা ৯ ঘণ্টা বন্ধ ছিল ফেরি ও লঞ্চ চলাচল। তবে দেখা গেছে, এর মধ্যেই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে যাত্রীদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে ঘাটের অসাধুচক্রের সিন্ডিকেট তারা দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের পন্টুন থেকে যাত্রীদের পাটুরিয়া ঘাটের উদ্দেশে নিয়ে যায়। এ সময় ঘাটের ৩টি ফেরিঘাটের পন্টুনই একই রকম চিত্র দেখা গেছে।

নাফিজ নামের এক ব্যবসায়ী কালবেলাকে বলেন, এখানে প্রচুর কুয়াশা। এখানে অবৈধভাবে অনেক ট্রলার চলাচল করছে। এখানে উচিত ছিল নৌপুলিশের থাকা। এগুলো পাহারা দেয়া। কিন্তু এখানে কোনো সময় এরা পাহারা দিয়ে থাকে না। উচিত ছিল কুয়াশার মধ্যে নৌপুলিশের ঘাটে থাকা। আমরা চাই যে এখানে যাতে নৌপুলিশ থাকে এবং আমাদের নিরাপত্তা থাকে।

চুয়াডাঙ্গা থেকে ছেড়ে আসা শাহিন আক্তার নামের এক যাত্রী কালবেলাকে বলেন, এখানে এসে ঘন কুয়াশার কারণে আমরা দেখতে পাচ্ছি ফেরি বন্ধ কিন্তু নদীতে অনেক ট্রলার। এই নদী পারাপার হচ্ছে ঝুঁকি নিয়ে। এখানে নৌপুলিশ নাই। নিরাপত্তা নাই। কোনো প্রশাসন নাই। আমরা এই নদীর পাড়ে আতঙ্কের মধ্যে সময় পার করছি। তাই এখানে নৌপুলিশ থাকবে আমাদের নিরাপত্তা থাকবে এ জন্য সরকারের কাছে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

জিয়াউর রহমান নামের আরেক যাত্রী কালবেলাকে বলেন, আসলে কুয়াশায় তো কিছু দেখা যায় না। আমরা তো কিছুই দেখতে পাচ্ছি না, এ কারণে ট্রলার দুর্ঘটনার কবলে পড়তে পারে। আমরা একটা সেতুর দাবি করছি সরকারের কাছে। এখানে সেতু হলে ভালো হয়। তখন কুয়াশা থাকলেও আমরা যেতে পারবো।

মো. শাওন নামের এক শিক্ষার্থী কালবেলাকে বলেন, ঘন কুয়াশার মধ্যে অনেক ফেরিই নদীর মধ্যে আটকা পড়ে থাকে। আর কুয়াশার কারণে ফেরি আটকানো তো ট্রলার চালকরা দেখছে না। বাইচান্স যদি নিয়ন্ত্রণ না করতে পেরে ধাক্কা খায় ওই সময় কী হবে? কেউ কি কোনো ক্ষতিপূরণ দেবে। আমরা চাই কুয়াশার মধ্যে ট্রলার চলাচল বন্ধ হোক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ট্রলার চালক কালবেলাকে বলেন, আপনারা আমাদের কেনো ছবি তুলছেন ভিডিও করছেন। আমরা কী যাত্রীদের জোর করে নিচ্ছি। যাত্রীরাই তো যেতে চাচ্ছে। এখানে আমাদের অপরাধ কী? আমরা ঘাটের সবাইকে ম্যানেজ করেই যাত্রী পারাপার করছি। ছবি ও ভিডিও তুলে কোনো লাভ নাই।

বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট শাখা কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক মো. সালাহউদ্দিন কালবেলাকে জানান, সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি এজন্য সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন মহলে অবহিত করা হবে বলেও জানান তিনি।

ফরিদপুর অঞ্চলের নৌপুলিশের পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন কালবেলাকে জানান, এ বিষয়টি আমার নলেজে নেই। আর মানুষের প্রয়োজনে অনেক সময় আইন মানতে চায় না। আপনি বলেছেন, আমি এ বিষয়টি কথা বলে দেখি। ঘাটে আমরা পারি না আমাদের সক্ষমতা কম লোকবল কম। এখানে জেলা পুলিশ আছে, থানা আছে। আমরাও আছি। তবে বিষয়টি আমি দেখবো। ঘাটে নৌপুলিশের দায়িত্ব পালন উপস্থিতি অবশ্যই প্রয়োজন আছে।

গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাহিদুর রহমান কালবেলাকে জানান, বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। গতকাল (শুক্রবার) আমরা আইনশৃঙ্খলা মিটিং করেছি সেখানে নৌপুলিশ ও উপরে থানা পুলিশ নিয়মিত টহলে আছে। আর যাতে ঝুঁকিপূর্ণ আবহাওয়া তৈরি হলে যেন নৌযান চলাচল বন্ধ রাখে এ রকম ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা আছে। এ রকম যদি চলে থাকে আমরা খবর পেলে আবারও নৌপুলিশকে বলে দেব। আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ট্রলার মালিকদের আমরা নোটিফাই করছি এরকম থাকলে আবহাওয়া অনুকূলে না থাকলে ট্রলার যেন না ছাড়ে, তাদেরকে আমরা সতর্ক করছি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি লাইভ সম্প্রচার করতে রিট

আমার শরীরে ভারতীয় ডিএনএ রয়েছে : ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট

ক্ষমতার অপব্যবহার করলে পালিয়ে যেতে হয় : শামা ওবায়েদ

বাংলাদেশে হাসপাতাল বানাবে চীন : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

কঙ্গোতে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা নিরাপদে আছেন : আইএসপিআর

সালমান এফ রহমান ফের ৩ দিনের রিমান্ডে

৬ জিম্মির মুক্তির বিনিময়ে উত্তর গাজায় ফিরবেন ফিলিস্তিনিরা

৭০ হাজার টাকা বেতনে ব্যাংকে চাকরি, লাগবে না অভিজ্ঞতা

সাজাপ্রাপ্ত রফিকুল গ্রেপ্তার

নীলক্ষেতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন

১০

জামিন পেয়েছেন পরী মণি

১১

পঞ্চগড়ে ঘন কুয়াশায় ঠান্ডা অব্যাহত

১২

যুক্তরাষ্ট্রে বেশি বেশি সন্তান চান মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট

১৩

আজ ভাগ্যে কী আছে, জেনে নিন রাশিফলে

১৪

চিয়া সিড বেশি খেলে যেসব সমস্যা দেখা দিতে পারে

১৫

দুপুরে ৭ কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে জরুরি সভা করবে ঢাবি উপাচার্য

১৬

বায়ুদূষণে শীর্ষে ঢাকা-দিল্লি না লাহোর?

১৭

কার্নিশে ঝুলে থাকা তরুণকে গুলি করা সেই এসআই গ্রেপ্তার

১৮

গাজা খালি করতে চান ট্রাম্প, কোথায় যাবেন ফিলিস্তিনিরা

১৯

মাইগ্রেনের যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে আজই বাদ দিন এই খাবারগুলো

২০
X