ভারি বৃষ্টি আর নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় বিভিন্ন রাস্তাঘাট, বসতবাড়ি ও ফসলি ক্ষেত নষ্ট হয়ে প্রাথমিকভাবে অন্তত ১৫০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
রাঙ্গুনিয়ার ১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধি এবং উপজেলা ও পৌরসভার দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
আরও জানা যায়, গত ৩ আগস্ট থেকে টানা বৃষ্টিতে ডুবে যায় বিভিন্ন বিলের কয়েক হাজার একর রোপা আমন। ১০ দিন পর বন্যার পানি নামতে শুরু করলে ভেসে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র। এতে অন্তত দুই শতাধিক সড়ক বিধ্বস্ত হয়েছে। পাহাড়ধসে শতাধিক বসতঘর ধসে গেছে, নদীভাঙনে বিলীন হয়েছে বেশকিছু ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি। মৎস্য প্রকল্পের পুকুর ডুবে কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। এ ছাড়া দীর্ঘ সময় ধরে পানিতে ডুবে থাকায় শস্যভাণ্ডার গুমাই বিলের নিম্নাঞ্চলের ১ হাজার ৭৫০ হেক্টর রোপা আমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শিলক তইলাভাঙা বিল, রাজানগরের বগাবিল, রইস্যা বিল, হোসনাবাদ, পারুয়া, সরফভাটা বিলে হাজার হাজার একরের রোপা আমন পানিতে পচে নষ্ট হয়ে গেছে।
উপজেলা প্রকৌশলী মো. দিদারুল আলম বলেন, ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল শুরুর পর থেকে আমরা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি এবং সরেজমিনে ঘুরে বিধ্বস্ত সড়কের তালিকা করেছি। আমাদের এলজিইডির আইডিভুক্ত ৮০টি সড়কের ১১৩ কিলোমিটার অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে অন্তত ১২৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে সরেজমিন পরিদর্শনকালে আমাদের আইডিভুক্ত ছাড়াও আরও দুই শতাধিক বিভিন্ন গ্রামীন সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার প্রকৌশলী মো. জমির উদ্দিন জানান, রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের অন্তত ৩৬টি সড়ক ভারি বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস বলেন, এখনো গুমাইবিলসহ বিভিন্ন বিলের পানি কমলেও সম্পূর্ণরূপে অপসারণ হয়নি। এখন পর্যন্ত আমরা ২০০ হেক্টর আমন চারা ও ২০ হেক্টর সব্জি ক্ষেত নষ্টের তালিকা করেছি। তবে ক্ষয়ক্ষতির এই পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাবে এবং এর পরিমাণ বিভিন্ন বিলের সম্পূর্ণ পানি অপসারিত হওয়ার পর বলা যাবে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌরসভার বন্যাকবলিত গ্রামীণ রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, ফসলী ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে এলাকার জনসাধারণ দীর্ঘ ভোগান্তিতে পড়েছে। যানবাহন এবং সাধারণ মানুষের চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। তবে আমাদের রাঙ্গুনিয়ার সাংসদ তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সার্বক্ষণিক খবর রেখেছেন। তিনি দুর্গত এলাকার বাসিন্দাদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করে যাচ্ছেন এবং স্ব স্ব এলাকায় দলীয় নেতাকর্মীদের তাদের পাশে থাকার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন।
এই ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতাউল গনি ওসমানি বলেন, আগেভাগে সতর্কতা জারি করায় পাহাড় ধসে ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হলেও হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনসহ ত্রাণসহায়তা দেওয়া শুরু করেছি। বিভিন্ন রাস্তাঘাট মেরামতের প্রক্রিয়া চলছে। কৃষক ভাইয়েরাও যাতে ঘুরে দাঁড়াতে পারেন সেজন্য তাদেরও প্রয়োজনীয় সহায়তা করা হবে।
মন্তব্য করুন