যশোরে তারুণ্যের ভাবনায় আগামীর বাংলাদেশ শীর্ষক সেমিনার ও আলোচনাসভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধির জন্য বসার চেয়ার না রাখায় বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন না করায় অনুষ্ঠান বয়কট করে বিক্ষোভ করেন তারা।
এ সময় জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। পরে সার্কিট হাউজে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ফিরোজ সরকার। তার আশ্বাসের পর শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ কর্মসূচি স্থগিত করেন।
বুধবার (২২ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় যশোর শিল্পকলা একাডেমিতে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, বুধবার বিকেলে যশোর শিল্পকলা একাডেমিতে তারুণ্যের ভাবনায় আগামীর বাংলাদেশ শীর্ষক সেমিনার ও আলোচনা সভার আয়োজন করে জেলা প্রশাসন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ফিরোজ সরকার। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী ছাড়াও সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনের লোকজন উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানকে ঘিরে শিল্পকলায় আন্দোলনের বিভিন্ন ছবি প্রদর্শনের আয়োজন করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।
আরও জানা গেছে, বিকেল ৫টার দিকে অনুষ্ঠান শুরু হলে জেলা প্রশাসক ও অনুষ্ঠানের সভাপতি আজহারুল ইসলাম আমন্ত্রিত প্রধান অতিথি, বিএনপি ও জামায়াতের প্রতিনিধিসহ অন্যান্য অতিথিরা মঞ্চে ওঠেন। তবে মঞ্চে বসার চেয়ার রাখা হয়নি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো প্রতিনিধির। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন। এ সময় অনুষ্ঠান স্থলের পাশে জুলাই-আগস্ট শহীদের ছবি প্রদর্শনী থেকে সব ছবি খুলে নেন তারা। এরপর শিল্পকলা একাডেমির প্রধান ফটকের সামনে বিক্ষোভ করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা জেলা প্রশাসকের উদ্দেশে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। সেখান থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ডিসিকে প্রত্যাহারের দাবিতে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
বিক্ষোভের সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোরের যুগ্ম সদস্য সচিব জান্নাতুল ফোয়ারা অন্তরা বলেন, যে অনুষ্ঠান তারুণ্য নিয়ে; সেই অনুষ্ঠানে উপেক্ষিত তরুণরাই। এ জুলাই বিপ্লব এনেছে তরুণরা। এই তারুণ্যের অধিকাংশ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। সেই জায়গা থেকে আজ আমাদের সঙ্গে যে আচরণ করা হলো; সেটা অগ্রহণযোগ্য। অনুষ্ঠান মঞ্চে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নেতারা জায়গা পেয়েছে, কিন্তু জুলাই আগস্ট বিপ্লবে যারা নেতৃত্ব দিয়েছে তারা উপেক্ষিত।
সংগঠনটির জেলার মুখপাত্র ফাহিম আল-ফাত্তাহ বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে বিন্দুমাত্র মূল্যায়ন করা হয়নি। আমাদের রক্তের ওপর দিয়ে এসব কর্মকর্তা বড় বড় চেয়ারে বসেছে। সেখানে আমাদের কেন অবমূল্যায়ন করা হলো? এ ডিসিকে আমাদের প্রশ্ন, আপনারা যে তারুণ্যের বাংলাদেশ গড়বেন; সেটা কি তারুণ্যকে বাদ দিয়ে? কাদের মতামত নিয়ে আগামীর বাংলাদেশ গড়বেন? যেহেতু আমাদের মূল্যায়ন করা হয়নি, তাই আমরা এ প্রোগ্রাম বয়কট করেছি। বিভাগীয় কমিশনার ফিরোজ সরকারের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা বয়কট আন্দোলন আপাতত স্থগিত করেছে।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠকে বিভাগীয় কমিশনার ফিরোজ সরকার বলেন, আপনাদের সঙ্গে আমি একমত। আপনাদের ছাড়া আজকের অনুষ্ঠান অসম্পূর্ণ থেকে গেল। আপনারা ফের তারুণ্যের উৎসবের আয়োজন করেন, আমি প্রধান অতিথি হিসেবে আসব। একইসঙ্গে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন, সরকারের বিভিন্ন কাজে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর (টিসিবি পণ্য, ত্রাণ বিতরণ) বরাদ্দ বণ্টনেও তাদের সম্পৃক্ত করতে হবে।
মন্তব্য করুন