পিলখানা ট্র্যাজেডির ঘটনায় বিস্ফোরক মামলায় ২৫০ জনের জামিন মঞ্জুর করেছেন ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১। গত রোববার (১৯ জানুয়ারি) কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত বিশেষ আদালত তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। এদের মধ্যে একজন ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার রবিউল ইসলাম (৩৪)। দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর পর মুক্তির খবরে একনজর দেখার অপেক্ষায় তার স্বজনরা।
জানা গেছে, রবিউল ইসলাম উপজেলার ভানোর ইউনিয়নের নেংটিহারা গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে। রবিউলের কারামুক্তির খবরে খুশি পরিবার-আত্মীয়-স্বজন এবং গ্রামের লোকজন। আগামী বৃহস্পতিবার কেরানীগঞ্জ কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে শুক্রবার সকালে বাড়ি ফেরার কথা রয়েছে তার।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, এসএসসি পাস করার পর চাকরি হয় রবিউল ইসলামের। প্রশিক্ষণ শেষ করে যোগ দেন পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে। ২৬ দিনের মাথায় ঘটে পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা। ওই ঘটনার পর থেকে কারাগারে রয়েছেন রবিউল। প্রথমে একটি মামলায় ৭ বছর সাজাভোগ করেছেন রবিউল। সাজা খেটে বের হওয়ার কিছুদিন পরে আবার বিস্ফোরক আইনের একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে কারাগারে রাখা হয়েছে।
রবিউলের ভাই শাহাজাহান আলী বলেন, চাকরি পাওয়ার পর বাবা ও মা খুব খুশি হয়েছিলেন। কিন্তু এক মাস যেতে না যেতেই সব খুশি ম্লান হয়ে যায়। চাকরি করে উপার্জন করে রবিউল পরিবারে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করার কথা ছিল। কিন্তু সেটার উল্টো হয়েছে। রবিউল কারাগারে থাকা অবস্থায় তাকে প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা খাওয়া খরচ দিতে হতো। কিছুদিন পর পর কাপড়-চোপড় কিনে দেওয়া, আদালতপাড়ায় অনেক খরচ করতে হয়েছে। তার পিছনে খরচ করতে করতে পুরো পরিবার প্রায় নিঃস্ব। আমার ভাইটির জীবনটাই জেলে কেটে গেল।
তিনি আরও বলেন, রবিউল ইসলামকে পুনরায় চাকরিতে পুনর্বহাল, একই সাথে দীর্ঘদিন বিনা অপরাধে কারাগারে থাকা এবং তার পেছনে খরচ করতে গিয়ে আর্থিকভাবে যে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটি- তার ক্ষতিপূরণ সরকারের কাছে দাবি করছি।
চাচা রেজাউল করিম জানান, ছেলের জন্য নানা দুশ্চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন রবিউলের বাবা আব্দুর রহমান। ফিরবে ফিরবে বলে অপেক্ষায় থাকতে থাকতে গত অক্টোবর মাসে মারা গেছেন। রবিউলের মা সালেহা খাতুন এখনো অসুস্থ, বোনের বাড়িতে ঠাকুরগাঁও শহরে রেখে চিকিৎসা করাচ্ছেন। তার বাবা আজ যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে বাড়ি ফেরার খবরে সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন।
স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রবিউল আর ফিরবে না, এমনটা ধরে নিয়েছিল পুরো পরিবার। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ফলে সে বাড়িতে ফিরছে। ছোট সেই ছেলেটা এখন কত বড় হয়েছে, কেমন আছে। সেটা দেখার জন্য কবে ফিরবে, এমন খোঁজখবর নিতে তার বাড়িতে লোকজনের আসা-যাওয়ার শুরু হয়েছে।
রবিউলের দাদি জমেলা বেগম জানান, বিনা অপরাধে রবিউলকে ১৬ বছর জেলে থাকতে হইল। এতদিন এভাবে কারাগারে না থাকলে বিয়ে করলে নাতি-নাতনির সাথে সময় পার করত রবিউলের বাবা। ওর বাবার সেই ইচ্ছা পূরণ আর হলো না।
মন্তব্য করুন